স্টাফ রিপোর্টার, বারুইপুর: বাঙালি তথা ভিনরাজ্যের মানুষের কাছে সুন্দরবন হল একটি অন্যতম ট্রাভেল ডেস্টিনেশন। প্রতিবছর সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গলকে চাক্ষুষ করতে, প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করতে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হন এই হেরিটেজ জঙ্গলে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বড়দিনের ছুটিতে বহু মানুষ পা রাখলেন সুন্দরবনে। অবস্থা এমনই যে, প্রায় সমস্ত হোটেলেই ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। ফলে, একটা বড় সংখ্যক পর্যটককে সুন্দরবনে এসেও খানিক ঘুরেই ফিরে যেতে হল বুকিং না করায় হোটেলের রুম না পেয়ে।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিতল হরিণ আর শীতের দিনে বালির চরে রোদ পোহানো কুমির দেখতেই মূলত মানুষের উৎসাহ থাকে বছরের এই কয়েকটা দিন। তবে এখন ইলিশ উৎসবকে কেন্দ্র করেই শীতের মতো বর্ষাকালেও ভিড় উপচে পড়ে সুন্দরবনে। নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া পর্যটকদের ঢেউ এখন শুধুই সুন্দরবনমুখী। উপচে পড়া ভিড়ে এখন হোটেলগুলিতে তিলধারণের জায়গা নেই। লঞ্চ, বোটগুলিও ভিড়ে পরিপূর্ণ। ২৩ ডিসেম্বর থেকে তিনদিনে অন্তত ৬৯-৭০ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছে সুন্দরবনে। তবে বনদপ্তরের তরফ থেকে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের জন্য নেওয়া হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, জঙ্গলের মধ্যে পর্যটকদের মদ্যপান রুখতে বিভিন্ন এলাকায় নজরদারির ব্যবস্থা করিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। অন্যদিকে নজর মিনারগুলিতে ভিড় বেড়েছে প্রায় সারাদিন ধরে।
সুন্দরবনের সজনেখালি, সুধন্যখালি, দোবাঁকি, বুড়ির ডাবরি, ঝিঙাখালি কলস, বনি ক্যাম্প এই সমস্ত জায়গাতেই মূলত পর্যটকদের আনাগোনা সব থেকে বেশি। ঝড়খালিতে ও ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রে এবং চিড়িয়াখানাতে ভ্রাম্যমাণ প্রচুর মানুষ একদিনের ছুটি কাটাতে চলে যাচ্ছেন সেখানে। ভাইজাগ থেকে আগত প্রিয়াঙ্কা সিং বলেন, ‘‘সারা বছর কাজের চাপে সেই ভাবে বেরনো হয় না। এখন ছুটি পেলাম তাই একদিনের জন্য ঝড়খালি চলে এলাম। কোথাও হোটেল, বোট সেইভাবে পাওয়া গেল না। তা হলে আরও দু-একদিন ছুটি কাটিয়ে ফেলা যেত। আমাদের কোনও অভিজ্ঞতাই ছিল না সুন্দরবন সম্পর্কে। আগে থেকে বুক করে এলে তিন দিন এখানেই কাটিয়ে যেতাম।’’
[আরও পড়ুন: ‘এটা আনন্দের জল’, যাদবপুরে সমাবর্তন শেষে কান্না সদ্য অপসারিত উপাচার্যের]
হোটেল ও বোটগুলিতে ভালো ভিড় হওয়ায় খুশি পর্যটক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য টুর অপারেটররাও। পাখিরালয়, দয়াপুর, বালি আইল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দিকে যে সমস্ত হোটেল বা হোম স্টে আছে সেগুলিতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিড় হয়েছে শনিবার থেকে। দাম বেড়েছে হোটেলের রুমেরও। দেড় হাজার টাকার রুম বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। তারপরও মিলছে না ঘর। এ বিষয়ে সুন্দরবন টুরিস্ট বোট ইউনিয়নের পক্ষে আমিনুর মিদ্দে বলেন, ‘‘বোট এবং লঞ্চ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও হোটেলের রুম না পাওয়ার কারণেই বহু মানুষকে ফিরে যেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বহু মানুষ বুকিং না করে আসার কারণেই সমস্যা আরও বেড়েছে।’’