কৃষ্ণকুমার দাস: জনগণের প্রার্থী বাছাইয়ে নির্বাচন কমিশনের নিয়মেই ভোট করাবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটদান কেন্দ্রে থাকবে রিটার্নিং অফিসার, পর্দা ঘেরা ব্যালট বক্স এবং নির্দিষ্ট ভোটার তালিকা। শুধু তাই নয়, ভোট দিতে যাওয়ার আগে সমস্ত ভোটদাতাকেই মোবাইল ফোন বাইরে রেখে যেতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচিতে প্রার্থী বাছাই নিয়ে মতামত সংক্রান্ত নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার একথা জানিয়েছেন স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘দেশের মধ্যে এই প্রথম পঞ্চায়েতে প্রার্থী বাছাই নিয়ে ৬০ হাজারের বেশি বুথে সাধারণ মানুষই মতামত জানাতে পারবেন। কলকাতাকে বাদ দিয়ে ২২টি জেলাকে ৮টি জোনে ভাগ করা হচ্ছে। প্রতিটি জোনে যেমন পৃথক নির্বাচন কমিটি থাকছে, তেমনই কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটিও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষ ও অভিজ্ঞদের ওই নির্বাচন কমিটিতে রাখা হচ্ছে।’’
কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ-সংযোগযাত্রায় প্রায় দু’মাস বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরবেন তৃণমূলের প্রধান সেনাপতি। দিনে কমপক্ষে তিন-চারটি সভায় কথা বলবেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। সন্ধেয় সমাজের বিশিষ্ট ও স্থানীয় সমস্ত পঞ্চায়েতের তৃণমূল বুথ সভাপতি ও ব্লক-জেলা কমিটির সঙ্গে অধিবেশনে আলোচনায় বসবেন। এরপরই হবে এই কর্মসূচির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পঞ্চায়েতে ত্রিস্তরে প্রার্থী কাকে চান, তা জানাতে ‘গোপন ব্যালটে ভোটগ্রহণ’। সাংসদ সৌগত রায়ের স্ত্রী ডলি রায়ের শেষকৃত্যে যোগ দিতে এসে শুক্রবার দুপুরে কেওড়াতলা শ্মশানে দীর্ঘক্ষণ বসে ছিলেন মন্ত্রী-বিধায়ক-কাউন্সিলরদের সঙ্গে।
[আরও পড়ুন: লিভ-ইন পার্টনারকে খুন! বাড়ি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে দেহ ফেলল যুবক]
সেখানেই আগামী কর্মসূচির নানা দিক নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে ঘরোয়া মেজাজে আলোচনা করেন। এরপরই সংবাদ প্রতিদিন-এর এক প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেন, ‘‘পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের মতোই পরিকাঠামো সাজানো হচ্ছে। রিটার্নিং অফিসার থেকে শুরু করে গোপন ব্যালট এবং পর্দাঘেরা ঘরে ভোটদান পর্ব হবে। কাকে ভোট দিলেন তা যাতে কেউ মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলতে না পারেন সেই জন্য ফোন নিয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকতে পারবেন না।’’
পঞ্চায়েতে মানুষের প্রার্থী বাছাই নিয়ে তিনি যে নির্বাচন করাবেন সেখানেও জেলা পিছু দু’জন করে পৃথক দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচন কমিটি নিয়ে তিনি যে এদিনই চূড়ান্ত রূপরেখা দিচ্ছেন তা স্পষ্ট জানিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘প্রতিটি জোনাল নির্বাচন কমিটিতে অন্তত সাত-আটজন থাকবে। প্রতিটি অঞ্চল থেকে অন্তত ৩০/৩৫ জন ভোট দিতে পারবেন। বুথ সভাপতিরা ছাড়াও ব্লক, জেলা কমিটির নেতাদের সঙ্গে সমাজের বিশিষ্টরাও ভোট দিয়ে জানাতে পারবেন ত্রিস্তরে কাদের প্রার্থী করলে সবচেয়ে বেশি মানুষের উপকার হবে।’’
এরপরই দলীয় ভোট প্রক্রিয়া নিয়ে অভিষেকের আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য, ‘‘মানুষের ভোটে যাঁরা জিতে আসবেন জনমানসে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি হবে।’’ ঘরোয়া আলোচনায় যখন একাধিক প্রশ্নের উত্তরে ‘ভোটিং সিস্টেম’ নিয়ে অভিষেক এদিন একের পর এক দলীয় কৌশল বলছেন তখন পাশে ছিলেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসু, সাংসদ সৌগত রায়, বিধায়ক তাপস রায়, দেবাশিস কুমার, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়রা। দেশের কোনও রাজ্যে আজ পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল এমন ৬০ হাজার বুথে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে গোপন ব্যালটে মতামত সংগ্রহ করেনি। কোনও একজন নেতা টানা দু’মাস ঘর-বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে গ্রামে গ্রামে ঘুরে মানুষের দুয়ারে পৌঁছে তাঁদের মতামত সংগ্রহ করেননি।
স্বভাবতই এমন নজিরবিহীন রাজনৈতিক জনসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণার পর পাহাড় থেকে সাগর, তৃণমূল কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিপুল সাড়া পড়ে গিয়েছে। বস্তুত মানুষের সেই সেই স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার কথা উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, ‘‘দৈনিক ৩/৪টি সভা তো হবেই, পথে জনতার সমাবেশ হলে অতিরিক্ত আরও মিটিং করতে হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় ভোটগ্রহণের আগেও অধিবেশন হবে, সেটাও একটা সভা। সব মিলিয়ে দৈনিক পাঁচটি সভা হলে ৬০দিনে কাকদ্বীপ পৌঁছতে প্রায় ৩০০ সভা করতে হবে।’’ তবে আসন্ন মরশুমে কালবৈশাখী ও ঝড়বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি আরও চার-পাঁচদিন বাড়তে পারে বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।