সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'তুমি চলো ডালে ডালে, অমি চলি পাতায় পাতায়।' লেবাননে হেজবোল্লার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পেজার হামলার ঘটনার পর মোসাদ সম্পর্কে একথা বলাই যায়। রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে মেসেজ পাঠানোর ছোট্ট যন্ত্র পেজার। মঙ্গলবার গোটা লেবানন জুড়ে এই পেজার বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। পাশাপাশি আহত হয়েছে আরও প্রায় ৩হাজার জন। অদ্ভুত হামলার পিছনে সরাসরি ইজারায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হাত দেখছে ইরান সমর্থিত হেজবোল্লা। ইজরায়েল অবশ্য এই ঘটনার দায় স্বীকার করেনি। তবে আমেরিকার দাবি অনুযায়ী, এই পেজার বিস্ফোরণের আগে ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা সচিব প্রাক্তন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড আস্টিনকে জানিয়েছিলেন লেবাননে বড় কোনও অভিযান ঘটাতে চলেছে তাঁরা। ফলে একে একে দুই করে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কীভাবে অপারেশন?
প্রায় এক ডজন গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞদের বিবৃতি উদ্ধৃত করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি, দীর্ঘ সময় ধরে এই হামলার পরিকল্পনা চালিয়েছিল ইজরায়েল। এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত করা হয়। প্রায় ৫ হাজার পেজারের মধ্যে ৩ গ্রাম করে বিস্ফোরক ঢোকানো হয়েছিল। সেই বিস্ফোরক পেজার আমদানি করে লেবাননে হেজবোল্লা গোষ্ঠী। জানা গিয়েছে, এই পেজারগুলি তাইওয়ানের গোল্ড অ্যাপোলো নামে এক সংস্থার তৈরি। যদিও সংস্থার দাবি, এই ডিভাইস তাদের তৈরি নয়। এক ইউরোপিয় সংস্থা তাদের সংস্থার নাম ব্যবহার করে এই ডিভাইস তৈরি করে।
কেন পেজার?
মূলত ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হাত থেকে বাঁচতে হেজবোল্লা নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নির্দেশ দিয়েছিল, মোবাইল ব্যবহারের ফলে দলের গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারে মোসাদ। তাই পেজার ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। হেজবোল্লা ভেবেছিল রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে কাজ করা পেজার ব্যবহারের ফলে মোসাদের নজিরদারি এড়াতে পারবে তারা। তবে হেজবোল্লাকে ফাঁদে ফেলতে আগে থেকেই জাল ছড়িয়ে রাখে মোসাদ। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, পেজারকে টার্গেট করতে নাসরুল্লার নির্দেশের আগেই শেল কোম্পানি তৈরি করে ইজরায়েল। হাঙ্গেরি-ভিত্তিক BAC কনসাল্টিং পেজার নির্মাতা হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে নামে। যার পিছনে ছিল মোসাদ। একই রকম আরও দুটি শেল কোম্পানি তৈরি করা হয়।
বাকি কাজ ছিল সহজ। হেজবোল্লার তরফে পেজারের অর্ডার আসতেই তাদের জন্য তৈরি করা হয় বিশেষ পেজার। যার ব্যাটারিতে ঢোকানো ছিল মাত্র ৩ গ্রাম বিস্ফোরক। ২০২২ সালে অল্প সংখ্যায় সেই বিস্ফোরক বোঝাই পেজার আমদানি করে হেজবোল্লা। পরে ধাপে ধাপে তা ব্যাপকভাবে বাড়ানো হয়। বর্তমান সময়ে মোসাদের নজর এড়াতে হেজবোল্লার প্রত্যেক সদস্য এই পেজারের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করত। নিউইয়র্ক টাইমসের দাবি অনুযায়ী, বিস্ফোরণ ঘটাতেও অভিনব উপায় ব্যবহার করা হয়েছিল। যার মাধ্যমে পেজার ব্যবহারকারীর কাছে আরবি ভাষায় একটি বার্তা আসে। সেই বার্তা দেখার জন্য পেজার খুললেই তাতে ঘটে বিস্ফোরণ।