অর্ণব আইচ: মাস খানেক আগেই শৈলেশ পাণ্ডের বাড়ি ও অফিসে হানা দিয়ে কয়েক কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল আয়কর দপ্তর। সূত্রের খবর, সেই পরিমাণও ছিল ৬ কোটি। ওই টাকা উদ্ধারের ভিত্তিতে পাণ্ডে পরিবারের টাকার উৎসের তদন্ত শুরু করে ইডি। তারপরই কলকাতা পুলিশের অভিযানে ব্যবসায়ী তথা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টান্ট শৈলেশ পান্ডের বাই অরবিন্দের গাড়ির ভিতর থেকে পাচার হওয়ার আগেই উদ্ধার হয় প্রায় সোয়া দু’কোটি টাকা ও বহু গয়না। রবিবার গভীর রাতে হাওড়ার মন্দিরতলার ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে তিনটি ঘরে থাকা বক্স খাটের ভিতর রাখা ব্যাগ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
লালবাজারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, চিট ফান্ডের আদলেই অ্যাপের মাধ্যমে ‘চেন’ পদ্ধতিতে কীভাবে অনলাইন জালিয়াতিতে হাত পাকিয়েছিলেন ব্যবসায়ী শৈলেশ পাণ্ডে, তাঁর দুই ভাই অরবিন্দ ও রোহিত। এমনকী, তাঁর মা ছেলেদের নিয়ে পালান কেন, পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে। শৈলেশ ও অরবিন্দের বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: বঙ্গ বিজেপির নয়া কোর কমিটি গড়লেন নাড্ডা, নতুন দায়িত্বে মিঠুন, লকেট, অগ্নিমিত্রা, রাহুল]
পুলিশ জানিয়েছে, ‘ফরেক্স ট্রেডিং’ বা বিদেশ থেকে অনলাইনে টাকা রোজগারের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা দেওয়ার নাম করে খোলা হয় আইএক্স গ্লোবাল নামে একটি অ্যাপ। সেটি শৈলেশ কার মদতে তৈরি করেছিল, তা দেখা হচ্ছে। কীভাবে একেকবারে ৮০ থেকে শুরু করে ১২৫ ডলার লগ্নি করে অনেক বেশি টাকা রোজগার করা যায়, তা শেখানো হত। কিন্তু প্রশিক্ষণ শুরুর পরই বলা হত, ওই ডলারের বেশিরভাগ টাকা আমানতকারীর। তিনি আরও দু’জনকে অ্যাপে নিয়ে এলে মোটা কমিশন পাবেন। এভাবে তাঁর অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হত। এতে লোভে পড়ে তিনি আরও কয়েকজনকে নিয়ে এসে ডলার লগ্নির ব্যবস্থা করতেন। একজনের লগ্নির পরিমাণ দশ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেলেই তাঁর অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হত। এভাবে একেকজনের কয়েক লক্ষ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন শৈলেশ ও তাঁর ভাইরা।
জানা গিয়েছে, মোট ৩৪টি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ থেকে টাকা আসতে শুরু করে আইএক্স গ্লোবাল অ্যাপে, যা নিয়ন্ত্রণ করত টি পি গ্লোবাল নামে একটি সংস্থা। যেহেতু সংস্থাটি রিজার্ভ ব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত, তাই সেটির উপর নজর পড়ে। দেখা যায়, ওই সংস্থা থেকে আরও কয়েকটি সংস্থায় ভাগ হয়ে টাকা জমা পড়ছে দু’টি অ্যাকাউন্টে। এক মাসে ওই দুই অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৭ কোটি টাকার লেনদেন হওয়ায় গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। দেখা যায়, ওই দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে আরও পাঁচটি অন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে গিয়েছে টাকা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলির ঠিকানা স্ট্র্যান্ড রোডের অফিস। তারই মালিক ব্যবসায়ী শৈলেশ পাণ্ডে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার সুবাদে বহু মানুষের পরিচয়পত্রের কপি ও ছবি জোগাড় করেস ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলতেন। ডলারে লগ্নি হলেও আমানতকারীরা মূলত বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দা। চিট ফান্ডের আদলেই তাঁদের প্রতারণা করা হত। শৈলেশের বাড়ি ও অফিস থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যাঙ্কের নতি থেকে আরও তথ্য উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।