শম্পালী মৌলিক: হৃদয় না মস্তিষ্ক, কে আমাদের চালনা করে? যুগ-যুগান্তরের প্রশ্ন। আবেগপ্রবণদের ভোট হৃদয়ের দিকে। যুক্তিবাদীরা অবশ্যই বলবেন মস্তিষ্ক। কেউ বলবেন প্রেমের পুরোটাই হরমোনের খেলা। এখন যদি কারও মস্তিষ্ক ততটা সক্রিয় না থাকে, তাহলে হৃদয় দিয়ে সে কীভাবে ভালবাসার দিকনির্দেশ করবে? পারবে কি সত্যিকারের প্রেম ছুঁতে? এই সব নিয়ে শিলাদিত্য মৌলিকের নতুন ছবি ‘হৃদপিণ্ড’ (Hridpindo Movie Review)।
ছবির শুরুতেই তর্কটা শুরু হয়ে যায়– হৃদয় আর হৃৎপিণ্ড কি এক? আর্যা (অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়) জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষক। কলেজে তার এক পড়ুয়া (অনুভব কাঞ্জিলাল) প্রশ্ন তোলে যে, হৃৎপিণ্ড কি শুধুই মাংসপেশী? রক্তসঞ্চালন জারি রাখাই কি তার একমাত্র কাজ? তাহলে শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ এত সাহিত্য সৃষ্টি করেছেন, সে তো হৃদয় দিয়েই! আর্যা ছাত্রটিকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চাইলেও সে নাছোড়। অগত্যা ক্লাস থেকে বের করে দিতে হয় তাকে। কলেজ শেষে আর্যার পিছু নেয় সে ছেলে। বিশ্রীভাবে একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আর্যা এমনভাবে আহত হয় যে, টেম্পরারি অ্যামেনশিয়া তাকে গ্রাস করে। বর্তমানের সবকিছু ভুলে যায়। মনে পড়ে থাকে ছোটবেলার স্মৃতি। এমনকী তার মানসিক বয়স চোদ্দো-পনেরোয় এসে দাঁড়ায়। সেইমতো তার আচরণ বদলে যায়। স্বামী সোমককে (সাহেব চট্টোপাধ্যায়) বিস্মৃত হয়, কিন্তু বাবাকে (প্রদীপ চক্রবর্তী) মনে থাকে। অন্যদিকে মনজুড়ে আসে কৈশোরের প্রেমিক ঋক (প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়)। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাবা আর স্বামী মিলে তাকে পাহাড়ে নিয়ে আসে। অচিরে সোমক পরিণত হয় ‘শামুক কাকু’-তে! আর প্রাণের বন্ধু ঋকের মধ্যে ‘বাবলু’কে ফিরে পায় আর্যা। সেখানে এসে যোগ দেয় ঋক-ও। ত্রিকোণের টানাপোড়েন শুরু হয়। সোমক বিশ্বাস করে আর্যার স্মৃতি একদিন ফিরে আসবে, সে ফিরে পাবে পুরনো মানুষটিকে। অতএব ছাড় দেয় সে আর্যাকে। এদিকে গাঢ় হতে থাকে ঋক আর আর্যার সম্পর্ক। অরুণাচলের পাহাড়ি পরিবেশে ভালবাসার মেঘরোদ্দুর খেলা দেখতে ভালই লাগে। শেষপর্যন্ত আর্যার স্মৃতি কি ফিরবে? কার ভালবাসায় নিজেকে খুঁজে পাবে আর্যা? জানতে হলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে পুরো ছবিটা দেখতে হয়।
[আরও পড়ুন: বস্তাপচা গল্পে রণবীরের অভিনয়ই একমাত্র প্রাপ্তি, পড়ুন ‘জয়েশভাই জোরদার’ ছবির রিভিউ]
কেবল যদি অর্পিতা আর প্রান্তিকের রসায়নটা একটু জমত ষোলোআনা পূর্ণ হত। তুলনায় সাহেব-অর্পিতার সম্পর্ক বেশি বিশ্বাসযোগ্য লেগেছে। এককভাবে অর্পিতা খুবই কঠিন চরিত্রের চ্যালেঞ্জ সামলেছেন সফলভাবে। সাহেব তাঁর চরিত্রে বেশ সাবলীল। তবে ছবির বেশ কিছু দৃশ্য অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। রণজয় ভট্টাচার্যর মিউজিক খুব ভাল। ছবির মেজাজে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। আর বলতেই হয় পরিচালক শিলাদিত্যর একটি সংবেদনশীল মন আছে। তবু ছবিটা ছোট হতে পারত। আর কোনও কোনও সিকোয়েন্সে আরও যত্ন নেওয়া যেত। কারও ‘বরফি’ কিংবা ‘সদমা’-র কথা মনে পড়তে পারে। তবে ওই ছবিগুলোর সঙ্গে তুলনায় না যাওয়াই ভাল। আদ্যোপান্ত প্রেমের ছবি ‘হৃদপিণ্ড’, তাই আরেকটু আদরমাখা হলে মন্দ হত না। এই ছবিতে কিছু খামতি থাকলেও মনখারাপের মেঘ কেটে একসময় রোদ ওঠে সেটা দেখতে ভালই লাগে।
[আরও পড়ুন: ছবি জুড়ে শুধু সোহমের ম্যাজিক, জমল কি ‘কলকাতার হ্যারি’?]