দীপঙ্কর মণ্ডল: এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধাতালিকা রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। প্রথম থেকে দশম স্থানের মধ্য়ে জায়গা পেয়েছেন ২৭২ জন। কিন্তু এর চেয়েও অবাক করা বিষয় হল মাত্র তিনটি স্কুল থেকেই মেধাতালিকায় রয়েছেন ৪০ জন! স্বাভাবিকভাবেই এমন তালিকা প্রকাশ্যে আসতে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েই অনেকে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।
উচ্চমাধ্যমিকের (HS Result) মেধাতালিকায় দেখা যাচ্ছে, শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরের জলচক নটেশ্বরী বিদ্যায়তন থেকেই প্রথম দশে রয়েছেন ২২ জন! ৪৯৭ নম্বর পেয়ে এই স্কুল থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন সায়নদীপ সামন্ত। এছাড়াও তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম এবং দশম স্থানটি দখল করেছেন মোট ২১ জন। এদিকে দিনহাটার শনিদেবী জৈন হাই স্কুলের ছাত্রী অদিশা দেবশর্মা রাজ্যে প্রথম হয়েছেন। তাঁর সংগ্রহ ৪৯৮। সেই স্কুল থেকে আবার মেধাতালিকায় রয়েছেন আরও ৯ জন। তাঁদের স্থান হয়েছে চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশমে।
এই দু’টি স্কুলের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফল করেছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার আদর্শ বিদ্যামন্দিরের পড়ুয়ারাও। বাড়ি থেকে কয়েক মাইল রাস্তা পেরিয়ে স্কুলে লেখাপড়া করতে যান ছাত্রীরা। সেই পরিশ্রমের সুফল পেয়েছেন অনেকেই। এবারের মেধাতালিকায় প্রথম দশে মোট ৮ জন জায়গা পেয়েছেন এই স্কুল থেকে। তাক লাগানো ফল দেখে খুশি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামসুন্দর জানাও।
[আরও পড়ুন: ‘এখন আমরা স্বামী-স্ত্রী’, ১৮ বছর পেরতেই ‘প্রেমিকা’র হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে বিয়ে তরুণীর!]
ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইলেও কীভাবে মাত্র তিনটি স্কুল থেকে ৪০ জন মেধাতালিকায় জায়গা করে নিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে এবার নিজেদের স্কুলেই পরীক্ষায় বসেছিলেন পড়ুয়ারা। অর্থাৎ হোম সেন্টারে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁরা। অনেকের মতে, এমন পরীক্ষা পদ্ধতি সমর্থনযোগ্য নয়। এই প্রসঙ্গে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বামী ইষ্টেশনান্দজি বলেন, “কোভিড পরিস্থিতির কারণেই হোম সেন্টারে পরীক্ষা নিতে হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে বিশেষ মন্তব্য করব না। তবে আবার যখন পুরনো পদ্ধতিতে ফেরা হবে, তখন নিশ্চিতভাবেই মূল্যায়ন করতে হবে।”
যদিও দিনহাটা শনিদেবী জৈন হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অজিত সাহার সাফ কথা, “আমাদের স্কুল থেকে ২০১১ সালেও দু’টি মেয়ে উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম দশের তালিকায় ছিল। যারা এবার র্যাঙ্ক করল তারা অন্য স্কুলে পরীক্ষা দিলেও করত। তবে নিজের স্কুলে পরীক্ষা হওয়ায় ওরা হয়তো একটু বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু কোনওভাবেই স্কুলের শিক্ষকরা ওদের আলাদা করে পরীক্ষার সময় সাহায্য করেনি।” জলচক নটেশ্বরী বিদ্যায়তনের প্রধান শিক্ষক তরুণ কুমার চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের স্কুল থেকে ১৯৯০ সালের উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম কুড়িতে র্যাঙ্ক করেছিল। তাছাড়া এবার রাজ্যের প্রত্যেক স্কুলে ছিল হোম সেন্টার। আমরা আলাদা কোনও সুবিধা পাইনি। যে ২২ জন প্রথম দশের মেধাতালিকায় আছে তারা তাদের নিজস্ব মেধাতেই ওই জায়গা অর্জন করেছে। কাউকে বিন্দুমাত্র সাহায্য করার প্রশ্নই নেই।”