অর্ণব আইচ: গাড়ির পর বাড়িতেও গুপ্তধনের হদিশ। ব্যবসায়ী শৈলেশ পাণ্ডের হাওড়ার (Howrah) মন্দিরতলার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার প্রায় ৬ কোটি টাকা। সূত্রের খবর, বক্স খাটের ভিতর নগদ টাকা লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। চার-পাঁচটি ব্যাগবোঝাই ৫০০ টাকার নোট উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা। ওই ফ্ল্যাটটি সিল করে দেওয়া হয়েছে।
জালিয়াতি মামলার মূল অভিযুক্ত শৈলেশ পাণ্ডে পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। মধ্য কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডের একটি বহুতল বাণিজ্যিক বাড়িতে তাঁর অফিস। হাওড়ায় তাঁর তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তার মধ্যে শিবপুরের কাউ ঘাট রোডের বাড়িতে তল্লাশি চলে। মন্দিরতলা ও শালিমারের শান্তা সিং মোড়ে আরও দু’টি বাড়িতে হানা দিয়েও শৈলেশ বা তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। স্ট্র্যান্ড রোডের অফিসেও হবে তল্লাশি। এদিন বিকেলে ব্যাঙ্কশাল আদালতে শৈলেশকে গ্রেপ্তারির জন্য আবেদন জানায় লালবাজার। তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাঁর সন্ধানে চলছে তল্লাশি।
[আরও পড়ুন: ডায়মন্ড হারবার জেটি ঘাটে দুর্ঘটনা, দুই ভেসেলের ফাঁক দিয়ে হুগলি নদীতে তলিয়ে গেল দুই বোন]
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, কয়েকমাস আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নরেন্দ্রপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের দু’টি অ্যাকাউন্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। দেখা যায়, ওই দু’টি অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। পাঁচটি সংস্থার নামে পাঁচ ব্যক্তি ওই টাকা অ্যাকাউন্ট দু’টিতে জমা পড়েছে। স্ট্র্যান্ড রোডের ঠিকানায় শৈলেশ পান্ডে নামে ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টই ভুয়ো নথিপত্রের সাহায্যে অ্যাকাউন্ট দু’টি খোলার ব্যবস্থা করেছেন। সেই সূত্র ধরেই শুরু হয় তদন্ত। ওই ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে টিএম ট্রেডার্সের আমন ঠাকুর, কেকে ট্রেডার্সের কৌশল কুমার, এমআর ট্রেডার্সের রাকেশকুমার সিং, পিকে ট্রেডার্সের পঙ্কজকুমার তিওয়ারি ও আরকে ট্রেডিংয়ের রাহুলকুমার আকেলার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা দায়ের হয়।
পুলিশের অভিযোগ, জালিয়াতির জন্য তৈরি করা হয় লগ্নির অ্যাপ। নামী সংস্থার ভুয়ো লোগো তৈরি করে লগ্নির টোপ দেওয়া হয়। বলা হয়, নামী সংস্থায় টাকা লগ্নি করলে তার মোটা সুদ ও শেয়ারের অংশ মিলবে। কয়েকটি সংস্থার শেয়ার প্রত্যেকদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দেখানে হয়। সেই লোভে বহু বিদেশি ওই অ্যাপের মাধ্যমে ডলার ও পাউন্ড লগ্নি করেন। দেখানো হয়, প্রত্যেকদিনই সেই বিদেশি মুদ্রার বিনিময়ে তাঁর প্রাপ্য শেয়ার বেড়ে চলেছে। অনেকেই এতে উৎসাহ পেয়ে আরও বিদেশি মুদ্রা লগ্নি করতেন। কিন্তু বিদেশি আমানতকারীরা শেয়ারের অংশ বা লগ্নির টাকা ফেরত চাইলেই তাঁদের প্রথমে বলা হত, ওই মোট টাকার উপর সরকার কর ধার্য করেছে। সেই করের টাকা দিতে হবে। কেউ সেই করের টাকা হিসাবে বিদেশি মুদ্রা পাঠালে তাও হস্তগত করা হত। কিন্তু আমানতকারী আর প্রাপ্য টাকা ফেরত পেতেন না।
এভাবে টাকা হাতানোর পর অ্যাপ বন্ধ করে দিয়ে অন্য ভুয়ো অ্যাপ চালু করা হয় বলেও গোয়েন্দাদের কাছে খবর। ওই জালিয়াতির টাকা বেশ কয়েকটি ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে একাধিক অ্যাকাউন্টে লেনদেন করা হয়। পুলিশের মতে, ওই পাঁচটি ছাড়াও আরও বহু ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কয়েকটি অ্যাকাউন্টে জালিয়াতির টাকা লেনদেন হয়েছে। সেই ভুয়ো সংস্থা ও অ্যাকাউন্টগুলির সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।