অর্ণব আইচ: হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে প্রতিবাদ মিছিলের নামে পুলিশের উপর হামলার ছক। সেই ছক সামনে আসার পর আরও সতর্ক লালবাজার। এরই মধ্যে সেই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপের বেশ কিছু তথ্য এসেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের হাতে। কীভাবে পুলিশকর্মী ও মহিলা পুলিশের উপর আলাদাভাবে হামলার ছক চলছে, তা জানতে পারার পর স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছে লালবাজারও। পুলিশি ব্যবস্থাও আরও কড়া করা হয়েছে।
সোমবার লালবাজারের এক কর্তা জানান, মঙ্গলবার প্রায় ৬ হাজার পুলিশ রাস্তায় নামছে। ১৯টি জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে ব্যারিকেড। এর মধ্যে পাঁচটি জায়গায় অ্যালুমিনিয়ামের দেওয়াল তৈরি হচ্ছে। থাকছে জলকামান ও বজ্র। সকাল আটটা থেকে চারজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ৬ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ২৬ জন ডিসির তত্ত্বাবধানে থাকছে বিশাল পুলিশবাহিনী। হাওড়া ব্রিজের কাছে স্ট্র্যান্ড রোড ও এম জি রোডের সংযোগস্থলে কলেজ স্কোয়ার থেকে আসা মিছিল আটকানো হবে। এখানে একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, দু’জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, আটজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, কুড়িজন ইন্সপেক্টর, ৯০ জন আধিকারিক, ৬০০ পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও টার্ফ ভিউ, হেস্টিংয়ের চারটি জায়গা, ফার্লং গেট রোড, বিদ্যাসাগর সেতুর একাধিক জায়গায় অ্যালুমিনিয়াম ব্যারিকেড, সিজার ব্যারিকেড, গার্ডরেলের ব্যারিকেড বসানো হচ্ছে। সেখানেও পদস্থ পুলিশকর্তাদের তত্ত্বাবধানে থাকছে বিশাল পুলিশবাহিনী। এ ছাড়াও শ্যামবাজার, আরজিকর, আলিপুর, হাজরা, কালীঘাট-সহ বিভিন্ন জায়গায় থাকছে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী। এদিন ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানান, মঙ্গলবার নিট পরীক্ষা আছে। কোনও পরীক্ষার্থী অথবা অন্য কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে যেন স্থানীয় থানাকে জানান অথবা ১০০ ডায়ালে ফোন করেন।
[আরও পড়ুন: ‘প্রত্যেকেই আমাকে অশ্লীলভাবে ছুঁয়েছে!’ ৪ নায়কের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন অভিনেত্রী]
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার নবান্ন অভিযানের নামে অশান্তি ও হিংসার ছক কষার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। এই অভিযানের মদতকারী কয়েকজন আরএসএস ও বিজেপি নেতাকে গোয়েন্দারা শনাক্ত করেছেন। গোয়েন্দাদের মতে, মিছিল ছাড়াও ছোট ছোট গ্রুপে হেঁটে বা বাস অথবা বাইকে করে এসেও জড়ো হয়ে গোলমালের চেষ্টা করা হতে পারে। আন্দোলনকারীরা পুলিশের উপর হামলা চালাতে পারে পতাকার লাঠি, ইট, পাথর বা পচা ডিম দিয়ে। গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, গোলমাল ও পুলিশের উপর হামলা চালানোর জন্য একাধিক হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। অন্য বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয়। ক্রমে শুধু নবান্ন অভিযানের জন্যই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ করে নামগুলি যোগ করা হয়। এই গ্রুপগুলি থেকে বেশ কিছু মেসেজ উদ্ধার করা হয়েছে। একটি গ্রুপে ‘অ্যাডমিন’ নামে একজনের নম্বরও খুঁজে পান গোয়েন্দারা। দেখা গিয়েছে, ‘অ্যাডমিন’ হোয়াটস অ্যাপে ‘ফাইটিং প্ল্যান’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে যে, মিছিলে যে পুরুষ সদস্যরা থাকবেন, তাঁরা মহিলা পুলিশের উপর হামলা করবেন। মিছিলে থাকা মহিলারা হামলা চালাবেন পুরুষ পুলিশকর্মীদের উপর। এর ফলে মহিলা পুলিশকর্মী ও আধিকারিকরা পুরুষের সঙ্গে গায়ের জোরে পেরে উঠবেন না। তাঁদের উপর আক্রমণ চালানো সহজ হবে। আবার পুরুষ পুলিশকর্মী ও আধিকারিকরা মহিলাদের গায়ে হাত তুলবেন না। ফলে এই আন্দোলনকারীরা সহজে ‘যুদ্ধে জিতে যাবে ও পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকেও নিষ্ক্রিয় হতে থাকবে।’
[আরও পড়ুন: তৃতীয় বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন আমির! ফতিমাকে ভুলে গেলেন?]
আবার হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে এমনও আলোচনা হয়েছে যে, প্রথম ধাপ হিসাবে পুলিশ ‘আগে কিছু করুক’। যেহেতু আন্দোলন করলেই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, সেই ক্ষেত্রে পুলিশ ধাক্কা মেরেছে বা বাধা দিয়েছে বলেই আন্দোলনকারীরা হামলা চালাতে ‘বাধ্য হয়েছে’, সেটাও দেখানো যাবে। ফলে কলকাতার গোয়েন্দাদের মতে, এভাবে একাধিক মিছিল থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানোই উদ্দেশ্য আন্দোলনকারীদের। সকাল থেকে পুলিশি ব্যবস্থা থাকলেও গাড়ি চলাচলের সমস্যা হবে না। কিন্তু মিছিল শুরু হওয়ার পরই রাস্তা ও হাওড়া ব্রিজ এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতু বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে যাঁরা দুপুর বা বিকেলে কলকাতা থেকে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাবেন, তাঁরা যেন হাতে অনেকটা সময় নিয়ে বের হন বলে জানিয়েছে পুলিশ।