সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশে জঙ্গি দমন সফলভাবে কার্যকর হলেও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি গত বছরের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগজনক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। তারা জানায়, ২০১৯ সালে মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া-সহ সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক-সহ অনেক সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা ও হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।
গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৬৫ জন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও নিখোঁজের মতো ঘটনা অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ মোট ২০৯টি রাজনৈতিক সংঘাত ঘটেছে। দেশে গত বছরের তুলনায় শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। শিশুপুত্র ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩৭ জন। এছাড়া বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে ৩৮৮ ব্যক্তি। বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা ও প্রধান সাক্ষী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে আসামি করার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে এ পর্যন্ত সংঘটিত সব গুম, অপহরণ ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জানায় তারা।
মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি-২০১৯: আসক’র পর্যবেক্ষণ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মহাসচিব তাহমিনা রহমান। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আসকের সিনিয়র উপপরিচালক নিনা গোস্বামী ও আবু আহমেদ ফজলুল কবির। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা। তাহমিনা রহমান বলেন, ২০১৯ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে গুলিযুদ্ধ, গুলিবিনিময়ে নিহত হয়েছেন ৩৫৬ জন। এরমধ্যে চলমান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন ১৮৭ জন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ-গুম ও নিখোঁজের শিকার হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে পাঁচজনের সন্ধান পাওয়া গেলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন আট জন। তিনি আরও বলেন, এবছর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিরোধী দল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ মোট ২০৯টি রাজনৈতিক সংঘাত ঘটে। এসব রাজনৈতিক সংঘাতে ৩৯ জন নিহত এবং আহত হন দুই হাজার ৬৮৯ জন। এছাড়া আসকের এক বছরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল উদ্বেগজনক। বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় এবছরেও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের মতো ঘটনা অব্যাহত ছিল। ২০১৯ সালে গুমের অভিযোগের সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রসফায়ার, হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুসহ গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধারের ঘটনা ছিল বছরজুড়ে। ২০১৮ সালের মে মাস থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে গুলিযুদ্ধে নিহতের ঘটনা অব্যাহত ছিল। এসময় মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করাসহ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেনো স্বাধীনভাবে তাদের ম্যান্ডেট বাস্তবায়ন করতে পারে, সে দাবি জানানো হয়।
The post বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ আইন ও সালিশ কেন্দ্রের appeared first on Sangbad Pratidin.