সুকুমার সরকার, ঢাকা: বিয়ের জন্য নিজের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু, সেই ভালবাসাই কাল হল আজ। খুনের পরে ওই যুবতী দেহটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করল একান্ত প্রিয়জন স্বামী। পাশবিক এই কাণ্ডটি ঘটেছে বাংলাদেশের সিলেট জেলার ওসমানি নগরে। মৃত যুবতীর নাম সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২ ডিসেম্বর ওই যুবতীর মাথাকাটা দেহ উদ্ধারের সাতদিন পর তাঁর কাটা মাথাটি উদ্ধার করে পুলিশ। বিয়ের আগে ওই যুবতী খ্রিস্টান ছিলেন। কিন্তু, ভালবেসে বিয়ে করে স্বামীর ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করে। অবশেষে সেই স্বামীর হাতেই নির্মমভাবে খুন হতে হল তাঁকে। গত ১৬ ডিসেম্বর হত্যাকারী মোজাম্মেল মিঞা(২৪)-কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর বুধবার আদালতে বিচারকের সামনে নিজের স্ত্রী শাহনাজকে খুনের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সে। ওসমানি নগরের দক্ষিণ কলারাই গ্রামের জিলু মিঞার ছেলে মোজাম্মেল পেশায় রাজমিস্ত্রি। গত কয়েক বছর আগে বরিশালের বাসিন্দা সন্ধ্যার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তার। কিন্তু, কয়েকমাস আগে ওসমানি নগরের এক যুবক মনোজের সঙ্গে তাঁর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ মোজাম্মেলের। আর এই কারণে সে স্ত্রীকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করে। পরে গলা, নাক, কান ও স্তন কেটে ফেলে।
[আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের ফেরানোর প্রস্তুতি! উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্পে পরিদর্শন মায়ানমারের প্রতিনিধি দলের]
পুলিশ সূত্রে খবর, ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে মোজাম্মেলের মা ও আত্মীয়রা শাহনাজকে মোজাম্মেলের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। বিয়ের পর তাঁদের সংসার শান্তিতেই চলছিল। কিন্তু, কিছুদিন পর থেকে শাহনাজের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করে মোজাম্মেল। বিষয়টি নিয়ে তার মা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে শাহনাজের ঝগড়াও হত। তাই শাহনাজকে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে নিজের কাজ করতে থাকে মোজাম্মেল। তবে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। এরই মধ্যে শাহনাজের পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারে মোজাম্মেল। গত ৩০ নভেম্বর বেলা একটার সময় অটোয় করে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চণ্ডীপুল থেকে গোয়ালাবাজার যায় মোজাম্মেল ও শাহনাজ। সেখান থেকে ওসমানি নগরের উনিশ মাইল এলাকার আগে থাকা নাটকিলায় নেমে পড়ে। তারপর ধানের জমির মধ্যে দিয়ে উনিশ মাইলে মোজাম্মেলের বড় পিসি ফুলমতির বাড়িতে দিকে হাঁটতে থাকে। যাওয়ার পথে শাহনাজ যৌন সঙ্গম করতে চান বলে দাবি মোজাম্মেলের।
[আরও পড়ুন: চাপের মুখে রাজাকারদের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ তালিকা প্রত্যাহার করল বাংলাদেশ]
কিন্তু, সে এতে রাজি হয়নি। আর এর জেরেই নাকি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শাহনাজ। মোজাম্মেলকে গালিগালাজ করে বলেন, তিনি মোহন নামের এক যুবককে বিয়ে করবেন। এমনকী তাঁকে ‘আম্মা’ বলে ডাকতেও বলেন মোজাম্মেলকে। এতে ক্ষিপ্ত হয় মোজাম্মেল। শাহনাজের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শাহনাজের বোরখা ও জামাকাপড় সব খুলে ফেলে নিজের হাতব্যাগ এবং মোবাইল-সহ সবকিছু একসঙ্গে করে। এরপর নিজেও উলঙ্গ হয়ে পুকুরের কাদা গায়ে মেখে উনিশ মাইল বাজারে যায়। সেখান থেকে ধারালো স্টিলের পাত কুড়িয়ে এনে শাহনাজের গলা কেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। নাক, কান, স্তন কেটে ছুঁড়ে ফেলে। আর দেহ থেকে ২০০ গজ দূরে পুঁতে রাখে কাটা মাথাটি। পরে সেখান থেকে সরে এসে পশ্চিম কালারাই গ্রামের দক্ষিণে নাটকিলা নদীতে ওই স্টিলের পাত ছুঁড়ে ফেলে। শাহনাজের কাপড়চোপড়, মোবাইল সব পাশের একটি ইটভাটার জ্বলন্ত চুল্লিতে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ভাগলপুরে নির্জন রাস্তায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে ভোরের আজানের পর বাস করে সিলেটে পিসির বাড়ি চলে যায়।
The post ভালবাসার মাশুল! ধর্ম বদলে বিয়ে করেও জীবন গেল যুবতীর appeared first on Sangbad Pratidin.