স্টাফ রিপোর্টার: প্রত্যাশামতোই আই লিগের ক্লাবগুলো সমবেত ভাবে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিল, আইএসএলকে শীর্ষ লিগ ঘোষণা করা হলে আদালতে যাবে। এফএসডিএলের চাপে ৩ জুলাই কার্যকরী কমিটির মিটিং ডেকেছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। যেখানে নিশ্চিত হওয়ার কথা, এতদিন ধরে শীর্ষে থাকা আই লিগকে সরিয়ে শীর্ষ লিগ করা হবে আইএসএলকে। যদি সত্যিই এরকমটা হয়, তখন কী করবে আই আই লিগের ক্লাবগুলো? এদিন দিল্লিতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আই লিগের ক্লাব প্রতিনিধিরা যৌথ ভাবে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিলেন, সেরকম হলে ফেডারেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাবে আই লিগের ক্লাবগুলি। ফলে আইএসএলের পাশাপাশি আই লিগের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে। ঘোর সমস্যায় পড়ে যাবে ভারতীয় ফুটবল।
[আরও পড়ুন: জুনিয়র ডার্বিতে ইঁটবৃষ্টি ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের, ভণ্ডুল বাংলা লিগের ফাইনাল]
এদিন দু’টি ইস্যুতে দিল্লিতে আলোচনায় বসেছিলেন আই লিগের কর্তারা। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল নিয়ে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেরাই অ্যাপিল কমিটিতে গিয়েছিল ফেডারেশন। আর শাস্তিপ্রাপ্ত অন্য ক্লাবগুলো শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির নির্ধারিত শাস্তির বিরুদ্ধে অ্যাপিল কমিটিতে আবেদন করেছিলেন। সোমবারই ছিল সেই অ্যাপিল কমিটির সভা। ফলে একটা কারণ তো ছিলই। পাশাপাশি, এফএসডিএল যেভাবে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে ফেডারেশনকে চাপ দিয়ে আইএসএলকে শীর্ষ লিগ ঘোষণা করে আই লিগকে শেষ করে দিতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে আলোচনা করার জন্যও সোমবার দিল্লিতে বসেছিলেন আই লিগ ক্লাবগুলির কর্তারা। মোহনবাগানের তরফে উপস্থিত ছিলেন সৃঞ্জয় বোস এবং দেবাশিস দত্ত। কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসির পক্ষে অজিত আইজ্যাক। চার্চিলের ভালেঙ্কা। মিনার্ভা পাঞ্জাবের রঞ্জিত বাজাজ। সঙ্গে গোকুলামের কর্তা ব্যাক্তিরাও। সবাই আলোচনা করে ঠিক করেন, এফএসডিএল যেভাবে আই লিগকে শেষ করে দিতে চাইছে, এরকমটা চলতে দেওয়া হবে না। এর বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবাদ করা হবে।
সোমবার মিটিং শেষে ক্লাব প্রতিনিধিরা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “সংবাদ মাধ্যমের খবরের ভিত্তিতে ৩ জুলাই ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে ঠিক হতে চলেছে, দেশের শীর্ষ লিগ হবে আইএসএল। এর বিরুদ্ধে আই লিগের ক্লাবগুলি একত্রে প্রতিবাদ জানাবে। কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসি, মোহনবাগান, চার্চিল ব্রাদার্স, মিনার্ভা পাঞ্জাব, আইজল এফসি, নেরোকা এবং গোকুলাম এফসি একত্রে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফেডারেশন যে মুহূর্তে আইএসএলকে দেশের শীর্ষ লিগ ঘোষণা করবে, তখনই আদালতে যাবে ক্লাবগুলো।
[আরও পড়ুন: সম্মানরক্ষার ম্যাচে জয় উরুগুয়ের, কোপার কোয়ার্টারে সহজ প্রতিপক্ষ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার]
বারবার করে ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে আলোচনা বসতে চাওয়ার পরেও তিনি দেখা করেননি। বরং আই লিগের ক্লাবগুলোর প্রতি নেমে এসেছে প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব। একই সঙ্গে এফএসডিএল ‘ব্ল্যাকমেল’ করে ফেডারেশনের পেমেন্ট আটকে রেখেছে। ফলে তৈরি হয়েছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। সেই ১৯৯৭ থেকে শুরু হয়েছে জাতীয় লিগ। যা পরে আই লিগ। এতদিনকার এই লিগের ঐতিহ্য ভারতীয় ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছে। এরপর যদি আই লিগ দেশের সেরা লিগ না হয়, তাহলে কিছুতেই আমরা তা মেনে নেব না। একটা ফুটবল পরিবার হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করব।”
আই লিগের ক্লাবগুলোর সম্মিলিত বিবৃতি পেয়েই ফেডারেশনের তরফে পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়, “৩ জুলাই ফেডারেশনের কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ের আগেই আই লিগের ক্লাবগুলো অহেতুক বক্তব্য রাখছে। এআইএফএফ সব সময় ভারতীয় ফুটবলের সকল অংশীদারদের স্বার্থ দেখেছে।
আইএসএল এবং আই লিগ লিগের ইস্যু নিয়ে আমরা এএফসি এবং ফিফার সঙ্গেও আলোচনা করেছি। ভবিষ্যতে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও তাই করব। এমনকী প্যারিসে শেষ এএফসি মিটিংয়েও এএফসি সচিবকে আই লিগ ইস্যু নিয়ে সমাধানের জন্য ভারতে আসতে বলি। এমনকী আই লিগ ক্লাবগুলোর ইস্যু নিয়েও ফেডারেশন তাদের কর্মাশিয়াল পার্টনার এফএসডিএলের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথা বলেছে। তবে ক্লাবগুলির যেভাবে ফেডারেশন সভাপতিকে সময় না দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে, তা ঠিক নয়। একমাত্র সুপার কাপের ঠিক আগে ক্লাবগুলো ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গে মিটিংয়ে বসার জন্য আবেদন করে। অথচ ভালভাবেই জানত, ১০-১৪ এপ্রিলের মধ্যে ক্লাবদের সঙ্গে বসার জন্য সময় দিয়েছিলেন সভাপতি। কেন না, আগেই ঠিক ছিল, ৬ এপ্রিল কুয়ালালামপুরে ফিফা কাউন্সিলের মিটিং নিয়ে তিনি ব্যস্ত থাকবেন। একই রকম ভাবে লোকসভা নির্বাচন নিয়েও। অথচ ক্লাবগুলো সুপার কাপ বয়কট করায় বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে কিছু ক্লাব মালিক ফেডারেশন এবং প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেগেটিভ প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ক্লাবগুলিকে সতর্ক করে বলা হচ্ছে, ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য কাজ করুন।”
[আরও পড়ুন: চাপের মুখে জ্বলে উঠল আর্জেন্টিনা, কাতারকে হারিয়ে কোপার কোয়ার্টারে মেসিরা]
এই প্রসঙ্গে কোয়েস ইস্টবেঙ্গল এফসির পক্ষে অজিত আইজ্যাক বললেন, “খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় ফুটবল। এতদিনের আই লিগকে যদি দ্বিতীয় স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, আদালতে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনও রাস্তা নেই।” মোহনবাগানের তরফে দেবাশিস দত্ত বলেন, “আই লিগ দ্বিতীয় স্থানে চলে গেলে, সবচেয়ে ক্ষতি হবে ভারতীয় ফুটবলারদের। মিনার্ভার মতো ক্লাবগুলি জুনিয়র ফুটবলারদের তুলে আনছিল। সব বন্ধ হয়ে যাবে। ভারতীয় ফুটবল আরও অন্ধকারে চলে যাচ্ছে।”
The post আইএসএল শীর্ষ লিগ ঘোষিত হলে আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত আই লিগের ক্লাবগুলির appeared first on Sangbad Pratidin.