‘দাবাড়ু’ ছবিতে কোচের ভূমিকায় চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী। সিনেমা, রাজনীতি, জীবন নিয়ে অকপট তিনি। শুনলেন শম্পালী মৌলিক
‘উইন্ডোজ’-এর ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
চিরঞ্জিৎ: খুব ভালো। ওদের সঙ্গে আমি আগেও কাজ করেছি। ‘মুশকিল আসান’ বলে একটা সিরিজ করেছিলাম একসময় ইটিভি-র জন্য, তবে ‘উইন্ডোজ’ হওয়ার পরে ওদের সঙ্গে কাজ করা হয়নি আমার, এই প্রথম হল।
প্রোডাকশন নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হলেও পরিচালকের আসনে পথিকৃৎ বসু। ওঁদের থেকে জুনিয়র। কেমন লাগল?
চিরঞ্জিৎ: যথেষ্ট ভালো। তবে আরেকটু অভিজ্ঞতা লাগবে। যখন যখন মনে হয়েছে আমি ওকে একটু হেল্পও করেছি। বলেছি যে, এটা এরকম না করে একটু অন্যরকম করলে ভালো। বা এই কথাটা না বলে, এভাবে বললে হয়। সামান্য কিছু। ওরও অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এখন তো মিঠুনকে নিয়েও কাজ করে ফেলল।
‘দাবাড়ু’ ছবিটি সূর্যশেখর গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবন ভিত্তি করে। তাঁর আদলে তৈরি চরিত্রের কোচের রেলে আপনি। বাংলা সিনেমায় কোচ বললে, এখনও আমাদের মনে পড়ে ‘কোনি’-র ‘ক্ষিদ্দা’।
চিরঞ্জিৎ: হ্যাঁ, ঠিকই।
সেক্ষেত্রে আপনার চরিত্রটা পর্দায় দেখতে গিয়ে তেমন ছায়া খুঁজে পাবে দর্শক?
চিরঞ্জিৎ: একটু তো পাওয়া যাবে মনে হয়। প্রথমে ছবিতে আমার এই রোলটা খুব পছন্দ হয়নি। তারপর আমি একটু সাজেস্ট করি, যদি এরকম করা যায়। আসলে ওরা কিছুতেই ছাড়তে চাইছিল না আমাকে। তখন আমি শিবুকেও বলি। তারপর একটু অন্য অ্যাঙ্গেল যোগ করা হয়। তাতে আমার চরিত্রে ওই চ্যালেঞ্জিং পার্টটা এসে যায়। একটা সময় আমি সূর্যকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। যেখানে একজনের হাতে ওকে দিয়ে গিয়েছিলাম। যে চরিত্রে কৌশিক সেন। তারপরে দেখা যায়, কৌশিক ওকে বুঝতে পারেনি যে, ও একটা জিনিয়াস। ওর খেলার টেকনিক আলাদা। আমি আবার ফিরে এসে ওকে বলি– অর্জুনকে শিক্ষা দিতে অন্যভাবে ভাবতে হবে। মানে যে বলে, পাখি দেখছে না, শুধু পাখির চোখ দেখছে, সেটা আর কেউ বলবে না। কাজেই তুমি যে টেকনিক ওকে শেখাতে চাইছ, সেটা নরমাল প্রসেস হতে পারে। ওকে বোঝার জন্য সেই মন বা চোখ তোমার নেই। এইরকম একটা জায়গা আছে, যেখানে ক্ষিদ্দার মতো ব্যাপার রয়েছে।
আপনার অভিনীত ছবি মানেই মনে রেখে দেওয়ার মতো সংলাপ। সেইরকম সিকোয়েন্স পাবে দর্শক?
চিরঞ্জিৎ: সেইরকম হয়তো নেই (হাসি)। তবে নিশ্চিত করে বলা যায় না। ছবি দেখে দর্শকের কেমন লাগে দেখার। অনেক সময় দেখা যায়, পাবলিক যে ডায়লগ নিয়ে নেয় সেটাই ফেমাস হয়ে যায়, আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না।
দাবা নিয়ে আপনার নিজের কোনও আগ্রহ রয়েছে?
চিরঞ্জিৎ: দাবা নিয়ে চিরকালই আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু দাবা খেলায় অত মন দিইনি। আমি বেশি আউটডোর গেমস পছন্দ করি। ক্রিকেট, ফুটবল খেলতাম। টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টনও খেলেছি। দাবা সাংঘাতিক ইন্টেলিজেন্ট গেম। দাবা যারা খেলতে পারে তারা আমার থেকে বেশি ইন্টেলিজেন্ট বলব না (জোরে হাসি)।
এত কম ছবি করছেন কেন?
চিরঞ্জিৎ: যেরকম পাই তেমন করি। আমি তো কোনওদিন ছবি চাইনি।
কেন? এত জনপ্রিয়তা পেয়েছেন...
চিরঞ্জিৎ: কেন পাইনি বলতে পারব না।সে দর্শক-প্রযোজক-পরিচালকরা
বলতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: ‘গদ্দার’ শব্দে আপত্তি! ‘চাইলে মিঠুনদাকে কিডনি দিতে পারি’, সাফ কথা দেবের]
সেক্ষেত্রে কি রাজনীতি কিছুটা সময় কেড়েছে?
চিরঞ্জিৎ: না, তা নয়। রাজনীতি করার সময়েই ‘চতুষ্কোণ’-এর মতো ছবিও করেছি।
আপনি ছাড়া টলিউডের অনেক তারকাই রাজনীতিতে রয়েছেন। কেউ নিজে ছেড়েছেন, কেউ ছাড়তে চেয়েও পারেননি। অনেকে এখনও আছেন। আপনি এখনও সক্রিয় রাজনীতিতে। কী ভেবে?
চিরঞ্জিৎ: কিছু ভেবে না, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছেতে। আমি যতবারই বলেছি, আমি ছেড়ে দেব, এটা আমার কাজ না, উনি আমাকে ছাড়েন না। এই আর কি। (হাসি)
অনেক সময় অভিযোগ ওঠে, তারকারা নিজের কেন্দ্রে সময় দেন না।
চিরঞ্জিৎ: আমি তো সময় দিই। নয়তো পনেরো বছর থাকতে পারতাম না। প্রত্যেক সপ্তাহে দুদিন করে আমি যাই কেন্দ্রে। যদি হিসাব করো, পনেরো বছরে যতগুলো সপ্তাহ। মানে মাসে আটদিন যাই। এক বছরে ৯৬ দিন আর ১৫ বছরে প্রায় ১৫০০-র কাছাকাছি দিন যাই আমি। অ্যাপ্রক্স হিসাব এটাই।
এতটা সময় দেন, সেটা কি আনন্দ পান বলেই? না কি দায়বদ্ধতা থেকে?
চিরঞ্জিৎ: আনন্দ পাই ডেফিনিটলি। তবে অভিনয় বা ফিল্ম আমার আরও প্রিয় জিনিস। অনেক কিছু করি আমি। ছবি আঁকি, লিখি, গান গাই, নানারকম করি। ফলে সব মিলিয়ে থাকি আমি। সবের মধ্যেই আনন্দ পাই।
শেষদিন পর্যন্ত কোনটা আঁকড়ে থাকতে চান?
চিরঞ্জিৎ: (হাসি) নিশ্চয়ই সিনেমা। এখন যেটা মন দিয়ে করছি, বিরাট বিরাট ছবি অঁাকছি। ছবি আঁকতে অন্য লোক লাগে না, একা একা করা যায়। গান গাইতে গেলেও একজন তবলচি লাগে। সিনেমার ক্ষেত্রেও প্রচুর লোকের কোঅপারেশন লাগে। কিন্তু ছবি অঁাকার ক্ষেত্রে একজনেই করা যায়।
ইদানীং কালে বাংলা ছবির মান সামগ্রিকভাবে পড়েছে, এরকম বক্তব্য রাখছেন অনেকেই। অনুরাগ কাশ্যপও ‘ঘাটিয়া’ মন্তব্য করে গিয়েছেন। যা নিয়ে হইচই হয়েছে। আপনি কী বলবেন?
চিরঞ্জিৎ: না, আমি ওরকম কিছু বলছি না। চিরকালই যেমন হয়, এখনও তেমনই আছে। কিছু ভালো ছবি হয়, কিছু পচা ছবি হয়। তা না হলে এত বছর আগে আমি নিজের নাম ‘দীপক’-কে তুলে রেখে চিরঞ্জিৎ (Chiranjeet Chakraborty) করেছিলাম কেন? তার মানে পচা ছবি তখনও হত, এখনও হয়। বুঝেছ? (হাসি) দীপক ছেড়ে আমি বদ নাম নিয়েছিলাম কেন? আমার আচরণেই প্রমাণ যে তখনও পচা ছবি হত, এখনও হয়। কিছু ডিরেক্টর ছিলেন তাঁরা সত্যজিৎ, মৃণাল, ঋত্বিকের মতো। ইভেন বুদ্ধদেবের মতো। যাঁরা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। এখন বাংলা ছবিতে আন্তর্জাতিক পুরস্কার কমে গিয়েছে। এটাই তফাত।
এই পচা ছবির প্রসঙ্গেই জিজ্ঞেস করি, তার মানে ‘বেদের মেয়ে জোসনা’-র থেকে ‘বাড়িওয়ালি’-কে আপনার বেশি কাছের মনে করেন?
চিরঞ্জিৎ: হ্যাঁ, সেটা দীপকের কাছের। আর চিরঞ্জিতের জন্য ‘বেদের মেয়ে জোসনা’। হিউজ পপুলারিটি তো ওটার।
এই মুহূর্তে টলিউডের সায়নী ঘোষ, দেব, জুন মালিয়া খুব সক্রিয়ভাবে রয়েছেন রাজনীতিতে। সিনিয়র হিসাবে ওঁদের কী বার্তা দেবেন?
চিরঞ্জিৎ: যদি করতে হয়, সিরিয়াসলি করো কাজটা। ওই যে বললাম, দেড় হাজার বার গিয়েছি কেন্দ্রে। সেইভাবে কনসেনট্রেট করো তোমরা। অ্যাটাচমেন্ট ডেফিনিটলি সিনেমার সঙ্গে বেশি আছে আমার। দেবেরও তাই থাকবে, ইলেকশনের সময় ও সক্রিয় থাকে বেশি। সায়নী হয়তো দেবের মতো সফল অ্যাক্টর নয়, তবে রাজনীতির জায়গাটায় ও অত্যন্ত সক্রিয়। জুন উৎসাহী, ওর ভিতরে সততা আছে। বিধায়ক ছিল, সেখান থেকে কেন্দ্রের প্রতিনিধি হতে চলেছে। সেক্ষেত্রে যে সিনসিয়ারিটি প্রয়োজন আমার মনে হয় ওর আছে।
আর সামনে কী কাজ? পারমিতা মুন্সীর ‘হেমা মালিনী’ করেছেন তাই না?
চিরঞ্জিৎ: হ্যাঁ, পারমিতার ছবিটা করেছি। আর অর্ঘ্যদীপ চট্টোপাধ্যায়ের ‘দ্য লুপ’ করেছি। একদিনের কাজ বাকি। আরেকটা করেছি ‘খাইবার পাস’। আরও একটা অনেক দিন আগের হয়ে রয়েছে। ছবিটার নাম ‘ধূসর’। আপাতত এই। (হাসি)