সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আইএএস (IAS) ও ডব্লুবিসিএসদের (WBCS) বেতন বৈষম্য দূর করতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার। তা নিয়ে আগে একাধিকবার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। এবার পুলিশের ক্ষেত্রেও বেতন কাঠামোর ফারাক ঘোচানোর কথা বললেন তিনি। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আইএএস-আইপিএস অফিসারদের হয়ে বলার অনেকে আছেন। ডব্লুবিসিএস অফিসারদেরও বলার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাজ্য পুলিশের হয়ে বলার কেউ নেই। তাই আইপিএসদের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের বৈষম্য কমিয়ে আনতে এবার নিজেই উদ্যোগ নিচ্ছেন তিনি। বললেন, “ইতিমধ্যেই আইএএসদের সঙ্গে ডব্লিউবিসিএসদের ফারাক কমাতে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা অর্থসচিবের কাছে পাঠানোও হয়ে গিয়েছে। আইপিএসদের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের বৈষম্য রয়েছে। এ ব্যাপারেও আমরা সামঞ্জস্য আনব।”
আইএএসদের সঙ্গে ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের মধ্যে বেতন ও অন্যান্য বিষয়ে সামঞ্জস্য আনতে সপ্তাহ দুয়েক আগে টাউন হলে বড় ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের অনুষ্ঠানে পুলিশে বৈষম্য কমানোর আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি নিচুতলার পুলিশকর্মীদের ‘অ্যাসেট’ বলে সম্মান জানান মুখ্যমন্ত্রী। ‘উঁচুতলা’-কে মনে করিয়ে দেন, “নিচুতলা যদি সঙ্গ না দেয়, জীবন-মরণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ না করে, তাহলে সাফল্য আসে না।” পাশাপাশি পুলিশের বড়কর্তাদের রাস্তা ব্লক করে দুরন্ত গতিতে গাড়ি ছোটানোর ব্যাপারেও বিরক্তি প্রকাশ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমি মিনিস্টারদের বারণ করে দিয়েছি, লাল-নীল আলো জ্বালাতে। পুলিশেরও কাউকে কাউকে দেখা যায় স্পিডে গাড়ি নিয়ে যেতে। হাইফাই দেখানোর জন্য স্পিডে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, পাবলিক দাঁড়িয়ে থাকছে, রাস্তা ব্লক থাকছে – মনে রাখবেন, এটা মানুষ কিন্তু পছন্দ করে না। পুলিশের বড় কর্তা বলে রাস্তায় বিশেষ সুবিধা নেওয়া যাবে না। গাড়ির মাথায় নীল-লাল আলো জ্বালিয়ে দুরন্ত গতিতে ছোটার ক্ষেত্রেও লাগাম টানতে হবে।”
[আরও পড়ুন: হিন্দির মতোই কাজের ভাষা হোক তামিলও, মোদির সামনেই দাবি স্ট্যালিনের]
এ ব্যাপারে নিজের উদাহরণও টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “অনেক সময় লোককে দাঁড় করিয়ে রেখে আমার গাড়ি পাশ করালে আমি বকাবকি করি। মানুষ যাবে, আমিও যাব। গাড়ি সচল থাকলে রাস্তা সচল থাকে।” এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশে মহিলাদের আরও বেশি করে যোগদানের আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমরা চাই মহিলারা আরও বেশি করে যোগ দিক পুলিশে। আমরা উইনার্স বাহিনীর জন্য মহিলাদের নিয়োগ করছি।” মুখ্যমন্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, “কাজ করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে কিন্তু একজন মহিলার গায়ে হাত দেওয়া বা মহিলাকে অসম্মান করা এতটা সহজ নয়। আমি চাই পুলিশে মহিলারা আলাদা জায়গা তৈরি করে নিক। আমার বিশ্বাস, নাকা চেকিং, গুণ্ডা দমন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মহিলা পুলিশ স্মার্টলি কাজ করতে পারবে।”
[আরও পড়ুন: অল্প বয়সেই কেন দিশাহীন বিদিশা? মডেলের ‘আত্মহত্যা’য় হতবাক প্রতিবেশীরা]
মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, “আরও বেশি করে পুলিশকে লোক নিতে হবে। আমাদের সময়ে আমরা পুলিশে অনেক রিক্রুটমেন্ট করেছি। কিন্তু কোনও ইন্টারফেয়ার করি না। করি না যখন বলছি, করি না। স্ট্রেট পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে, উচ্চতা-টুচ্চতা মেপে-পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড করে। শূন্যপদ যেগুলো রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হবে।’’ এদিন ২০১৮ ও ২০১৯ সালের কলকাতা পুলিশ মেডেল প্রাপকদের পুরস্কৃত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৮ সালের ‘নিষ্ঠা’ পদক পান তিনজন, ‘প্রশংসা’ পদক ২৪ জন ও সেবা’ পদক পেলেন ২৫ জন। ২০১৯ সালের নিষ্ঠা পদক প্রাপক ২ জন, প্রশংসা পদক ২০ জন ও সেবা পদক প্রাপকের সংখ্যা ২০ জন। সবমিলিয়ে মোট ৯০ জন পুলিশ পদক পেলেন।