বোরিয়া মজুমদার, পারথ: পারথ নামটার মধ্যেই কেমন যেন হিমহিমে একটা ব্যাপার আছে। পারথ নামটা শুনলে সর্বপ্রথম সবুজ, ভয়াল গতির পিচের কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে, ব্যাটারের দিকে ফাস্ট বোলারের দানবীয় ধেয়ে আসা, বিদঘুটে লেংথে পড়ে বলের চকিত লাফানো, মনে পড়ে হাজার-হাজার হিংস্র দর্শক, যারা ব্যাটারের থুতনিতে বলের আছড়ে পড়া দেখতে চায়! একটা সময় ছিল, যখন দুই বাঘা অস্ট্রেলীয় পেসার ডেনিস লিলি এবং জেফ থমসন পারথ শাসন করতেন। আর হয়তো বা সেই কারণেই বিরানব্বইয়ে পারথে শচীন তেণ্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) সেঞ্চুরি, তাঁর কেরিয়ারের সর্বশ্রেষ্ঠ ধরা হয়। অধুনা পারথ স্টেডিয়াম বদলে গিয়েছে।
প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ওয়াকার নাম বদলে এখন হয়েছে অপ্টাস স্টেডিয়াম। কিন্তু মাঠের চরিত্র বিশেষ বদলায়নি। পালটায়নি পরিবেশ। আর তাই, শচীন তেণ্ডুলকরের ক্রিকেটীয় পুনর্জন্ম ঘটেছে যাঁর মধ্যে দিয়ে, সেই বিরাট কোহলির পক্ষে কাগিসো রাবাডা, আনরিখ নখিয়া, এনগিডিদের মহড়া নেওয়া খুব সহজ হবে না। রাবাডা-নখিয়া-এনগিডি, এঁরা প্রত্যেকেই দুর্ধর্ষ পেসার। এবং রাহুল-রোহিত-বিরাটকে (Virat Kohli) পিচের বাউন্সের সঙ্গে সবার আগে মানিয়ে নিতে হবে। তবে ভারতের পক্ষে একটা ভাল খবর যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (T-20 World Cup) আগে দিন সাতেকের শিবির পারথেই করেছিল রাহুল দ্রাবিড়ের ভারত। দু’টো প্র্যাকটিস ম্যাচও খেলেছিল। তাই পিচের বাউন্স কেমন, রোহিতদের একটা সম্যক ধারণা আছে।
[আরও পড়ুন: ইস্টবেঙ্গলকে ডোবাল গোলরক্ষকের ভুল! যুবভারতীতে ডার্বি জিতে সপ্তম স্বর্গে মোহনবাগান]
রবিবাসরীয় ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা যুদ্ধের ট্যাগলাইন নির্বাচন খুব সহজ, ভারতীয় ব্যাটিং বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিং। প্রাক্তন ইংল্যান্ড পেসার অ্যালান মুলালির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। প্রায় এক যুগ হল যিনি পারথে শিফট করেছেন। মুলালি বলছিলেন, ‘‘পারথে খেলতে হবে পিচের চরিত্র আর পরিবেশ বুঝে। ভারত কিন্তু ভাল ব্যাটিং করছে। দক্ষিণ আফ্রিকা পেসারদের সঙ্গে ওদের লড়াই দেখার মতো হবে।’’ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের কেউ দেখলাম না দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ের কথা বলছেন। কিন্তু এই দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে এমন দু’জন আছেন, যাঁরা কি না বরাবর ভারতীয় বোলিংয়ের বিরুদ্ধে খেলতে পছন্দ করেছেন। কুইন্টন ডি’কক এবং ডেভিড মিলার। দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa) টিমের একজন বলছিলেন, সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে আসায়, বিপক্ষ নিয়ে ধারণা টাটকা আছে। অতএব, হাড় হিম করা এক ক্রিকেট-যুদ্ধের মঞ্চ প্রস্তুত। সঙ্গে একটা সুখবরও আছে। পারথে রবিবার বৃষ্টি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। আর এই ম্যাচে যে জিতবে, তার গ্রুপ সেরা হয়ে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে যাওয়া অনেকাংশেই নিশ্চিত হয়ে যাবে। শুধু দু’টোই যা খচখচানি। যা ভারতীয় টিমকে মৃদু হলেও ভাবনায় রাখবে।
[আরও পড়ুন: বেকারত্ব দূর করতে মিছিল, আমজনতাকেই পেটাল মুখোশধারী আন্দোলনকারীরা! ভাঙচুর অ্যাম্বুল্যান্সেও]
এক) অশ্বিন-অক্ষরের স্পিন জুটি। দুই) কেএল রাহুলের (KL Rahul) ফর্ম। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে যতই নিখুঁত খেলে উঠুক ভারত, অক্ষর-অশ্বিন জুটি যথেষ্ট ভরসা কিন্তু এখনও দিতে পারছেন না। এটা নয় যে, তাঁদের ক্ষমতা নেই। কিন্তু যুজবেন্দ্র চাহাল যখন টিমের বাইরে বসে, তখন অশ্বিন-অক্ষরের বোঝানো উচিত যে, তাঁদের খেলানোর সিদ্ধান্ত সঠিক। একই সঙ্গে গোটা ভারত দেখতে চাইবে ওপেনিংয়ে কেএল রাহুলের প্রত্যাবর্তন।
পারথ দিয়ে লেখা শুরু করেছিলাম, পারথ দিয়ে লেখা শেষ করি। অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের তুলনায় পারথ বেশ চুপচাপ। খেলাধুলোর প্রেক্ষিতে শহরটাকে ‘মৃত’ বলে ধরা হয়, কারণ আহামরি খেলা কিছু এখানে হয় না। আর পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া যেন নিজেই স্বতন্ত্র একটা দেশ। ছ’মাস আগেও কোভিডের কারণে এখানে বাকি প্রদেশের মানুষের যাতায়াত বন্ধ ছিল। সেই পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে এক এবং একমাত্র আকর্ষণ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট যুদ্ধ। যা দেখতে বহু ভারত সমর্থকের উপস্থিত হওয়া শেষ, এখন শুধুমাত্র জমজমাট লড়াইয়ের ঢাকে কাঠি পড়ার অপেক্ষা!
আজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, পারথ বিকেল ৪.৩০, স্টার স্পোর্টস