স্টাফ রিপোর্টার: একে তো টিমের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। দু’জনের একজনের ব্যাটেও রান নেই। যে কারণে তাঁদের সমালোচনা চলছে আসুমদ্রহিমাচলে। ক্রিকেট ভক্তরা টেস্ট থেকে দ্রুত অপসারণ চাইছেন দু’জনের। এবার তারই মধ্যে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হল গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে। আরও ভালো করে বললে, ভারতীয় হেড কোচের দল চালানোর পন্থা নিয়ে। তাঁর ম্যান ম্যানেজমেন্ট নিয়ে।
অধুনা ক্রিকেটবিশ্বে ম্যান ম্যানেজমেন্ট নামক বস্তুকে প্রভূত গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। বলা হয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচিং করানোর কিছু থাকে না। স্ট্র্যাটেজি-ফাইন টিউনিং বাদ দিলে একটাই কাজ থাকে যে কোনও দলের হেড কোচের। এক একজন প্লেয়ারকে তাঁর মতো করে সামলে, তাঁদের থেকে সেরাটা বার করে আনা। ভারতীয় দলের হেড কোচ থাকার সময় রবি শাস্ত্রী যা করেছেন। রাহুল দ্রাবিড় যা করেছেন। কিন্তু গৌতম গম্ভীর করতে পারছেন না।
খবর যা, তাতে টিমের অধিকাংশ প্লেয়ারের সঙ্গেই মতের মিল হচ্ছে না গম্ভীরের। শাস্ত্রী কিংবা দ্রাবিড় জমানায় প্লেয়ারদের সঙ্গে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল, তা-ও নাকি আর নেই। নির্বাচনী ব্যাপারস্যাপার নিয়ে এত দিন প্লেয়ারদের সঙ্গে অধিনায়ক রোহিত শর্মা কথা বলতেন। এ-ও শোনা যায় যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের সময় টস করে ফিরে এসে নাকি সঞ্জু স্যামসনকে ভারত অধিনায়ক বুঝিয়েছিলেন, কেন তাঁকে প্রথম একাদশে রাখা সম্ভব হয়নি। এত সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও রোহিতের এমন নম্র ব্যবহার মুগ্ধ করে দিয়েছিল সঞ্জুকে। কিন্তু গম্ভীর কোচ হয়ে আসার পর থেকে সেটা নাকি আর হচ্ছে না। একদম জুনিয়র নন, এমন ক্রিকেটারদেরও নাকি ভারত অধিনায়ক বলেননি কেন তাঁদের দলে রাখা সম্ভব হয়নি।
এ মুহূর্তে নিজের ফর্ম নিয়ে ঘোরতর ভুগছেন রোহিত। কী করে তিনি নিজে রানে ফিরবেন, সে পথ খুঁজতেই তাঁর অধিকাংশ সময় কেটে যাচ্ছে। এ রকম অবস্থায় গম্ভীর পারতেন টিমকে সামাল দিতে। কোচ হিসেবে তিনি পারতেন, অধিনায়কের চাপটা অনেকটা হালকা করে দিতে। কিন্তু তিনি নিজেও সেটা পারেননি। বরং একদল প্লেয়ারের কাছে গ্রহণযোগ্যতাই নাকি নেই গম্ভীরের! মনে রাখা দরকার, সেই সমস্ত ক্রিকেটাররা যেমন বিরাট-রোহিতের মতো সিনিয়র নন, তেমন হর্ষিত রানা-নীতীশ রেড্ডির মতো জুনিয়রও নন।
সমস্যা আরও বাড়িয়েছে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে টিমের খারাপ পারফরম্যান্স। পারথ টেস্ট জিতে মধুর ভাবে সিরিজ শুরু করেছিল ভারত। কিন্তু অ্যাডিলেড আর মেলবোর্নে হারার পর সেই সুখাবহ আর নেই। বরং ভারতীয় ড্রেসিংরুম থেকে নানাবিধ অশান্তির খবর নানা জায়গা থেকে বেরিয়ে আসছে। লেখালেখি হচ্ছে, এমসিজি টেস্ট হারার পর ড্রেসিংরুমে নাকি প্লেয়ারদের উপর ফেটে পড়েছেন গম্ভীর। কড়া বার্তা দিয়ে বলেছেন যে, প্লেয়ারদের নিজেদের ইচ্ছেমতো খেলা অনেক তিনি বরদাস্ত করেছেন, আর করবেন না। টিম এক রকম পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে, কিন্তু মাঠে নামার পর সব বদলে যাচ্ছে। প্লেয়াররা নিজেদের মর্জিমাফিক খেলে চলেছেন। যা তিনি মেনে নেবেন না। এবার থেকে তাঁর বেঁধে দেওয়া নির্দিষ্ট পন্থায় দলকে খেলতে হবে। তিনি যে ভাবে বলবেন, যা করতে বলবেন, সেটা করতে হবে। আর যে সমস্ত প্লেয়াররা সেটা করবেন না, তাঁদের জন্য ভারতীয় টিমের দরজা বন্ধ!
অনেকেরই মনে হচ্ছে, গম্ভীরের নিজের উপরেও চাপ বাড়ছে। টিমের পারফরম্যান্স, দল নির্বাচন, কোনও কিছুই তাঁর পক্ষে যাচ্ছে না। নীতীশ কুমার রেড্ডিকে খেলানোর সিদ্ধান্ত খেটে গেলে কী হবে, মেলবোর্নে শুভমান গিলকে বাদ দিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। বোর্ডের কেউ কেউ বলছেন, সিডনি টেস্ট আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যদি ভালো পারফর্ম না করতে পারে ভারত, তা হলে গম্ভীরের চাকরি বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়বে। বলা হচ্ছে, এমনিই বিশ্বজয়ী ভারতীয় ওপেনার কখনও কোচ হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিলেন না। প্রথমে ভিভিএস লক্ষ্মণকে ভাবা হয়েছিল। নামী বিদেশি নামও বিবেচনায় ছিল। কিন্তু তাঁরা কেউ একসঙ্গে তিনটে ফর্ম্যাটে কোচিং করাতে চাননি বলে বাধ্য হয়ে গম্ভীরকে কোচ করতে হয়। ইতিমধ্যে একটা মত ভারতীয় ক্রিকেটের অলিন্দে ঘুরছে যে, গম্ভীরকে শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টিতে দায়িত্ব দেওয়া হোক। যে ফর্ম্যাটে তিনি পরীক্ষিত এবং সফল। আইপিএলের দু’টো ফ্র্যাঞ্চাইজিতে তিনি সফল হয়েছিলেন। জাতীয় নির্বাচকদের সঙ্গেও কোচের সম্পর্ক সুমধুর, বলা যাবে না। শোনা যাচ্ছে, চেতেশ্বর পুজারাকে নাকি গম্ভীর চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া সফরের দলে। নির্বাচকরা আমল দেননি।
সব মিলিয়ে যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে সিডনি ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুধুমাত্র রোহিত-বিরাটের কেরিয়ার নয়। একই সঙ্গে গুরু গম্ভীরের ভাগ্যও না নির্ধারণ করে দেয়!