কৃষ্ণকুমার দাস ও দীপেন্দু পাল: কলকাতা শহরের নামিদামি পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম চেতলা অগ্রণীর দুর্গাপুজো৷ মহালয়ায় মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের এই পুজোয় মাতৃমূর্তির চোখ আঁকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে চেতলা অগ্রণী ক্লাবের থিম ‘অন্তহীন’। মাতৃমূর্তি তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৫ ফুট উঁচু মেহগনি কাঠের গুঁড়ি দিয়ে৷ আর এখানেই বেধেছে বিপত্তি৷ পরিবেশবিদদের দাবি, সোনার মতো দামি মেহগনি কাঠের একটি আস্ত গুঁড়ি কী করে পেল ক্লাব কর্তৃপক্ষ? তা কি আইন মেনে আনা হয়েছে? আগামী সোমবার এই বিষয়ে পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করার হুমকি দিয়েছেন পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত৷
চেতলায় এবছরের থিম পরিকল্পনায় রয়েছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার। প্রায় চার মাসের প্রচেষ্টায় এই থিম তৈরির কাজ প্রায় শেষের পথে। মা দুর্গার ১৫ ফুট উঁচু প্রতিমাটি তৈরি হচ্ছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো মেহগনি গাছের বিশাল গুঁড়ি দিয়ে। নিচে অসুর-মহিষ, সিংহ অন্য আর একটা গুঁড়ি দিয়ে। পাশে লক্ষ্মী-কার্তিক, সরস্বতী-গণেশ, সবই কাঠের গুঁড়ি কেটেই তৈরি করেছেন শিল্পী। ক্লাব কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘আমরা সৃষ্টি, চেতনা এবং জ্ঞানের ধারাপ্রবাহ নিয়ে থিম করেছি। পরিবেশ সমৃদ্ধকরণে সবুজের জয়গান গাইছি। যে কেউ মণ্ডপে এলে দেখে বুঝতে পারবেন নীরস-শুকনো কাঠ থেকে কীভাবে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টিকে উপস্থাপন করা হয়েছে। যাঁরা মামলা করার কথা বলছেন, তাঁরা মণ্ডপে এসে দেখলে বুঝবেন প্রকৃত পরিবেশবিদ কারা?’
এই মণ্ডপে ঢোকার সময় এক দিকে দেবী দুর্গা আর অন্যদিকে শিবের নটরাজ মূর্তি দেখতে পাবেন দর্শকরা৷ পুরো মণ্ডপই তৈরি হয়েছে গাছের কাঠ দিয়ে৷ মেহগনি কাঠে খোদাইয়ের কাজ ভাল হয়৷ বাটালির দিয়ে ‘কার্ভিং’ করা সহজ হয়৷ বেআইনি পথে কাঠ এসেছে, এই অভিযোগ উড়িয়ে শিল্পীর বক্তব্য, “সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে ওই কাঠ এসেছে। বাদুড়িয়া থেকে মেহগনি গাছটি আনা হয়েছে। বন দপ্তরের অনুমতি না পেলে অত বড় গুঁড়ি রাস্তায় বার করা যায় নাকি? গাছের গায়ে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের স্টিকার পর্যন্ত সাঁটা রয়েছে। আদালতে সময়মতো সব নথি পেশ করা হবে।” তবে এমন বিতর্ক যে চেতলার প্রতিমার আকর্ষণ আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে পুজোর কলকাতায়, এমনটাই মনে করছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিমাশিল্পীরা।
[জ্ঞান-চেতনা-সবুজের সৃষ্টি নিয়ে দেবীর ‘অন্তহীন’ যাত্রা চেতলা অগ্রণীতে]
যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত। তাঁর একান্ত প্রতিক্রিয়া, ‘জানতে হবে ওই প্রতিমা তৈরিতে যে কাঠ ব্যবহৃত হুয়েছে সেটা বৈধ উপায়ে শহরে এসেছে কি না৷ বৈধ পথে মেহগনি কাঠ তিনভাবে কলকাতায় আসতে পারে৷ প্রথমত, মালয়েশিয়া বা মায়ানমার থেকে জাহাজে করে আমদানি করা হতে পারে৷ দ্বিতীয়ত, কোনও জঙ্গল থেকে আসতে পারে৷ সবশেষে স্থানীয় কোনও জায়গা থেকে, যেমন যশোর রোডের ধারে বা সাদার্ন অ্যাভিনিউতে এখনও কিছু মেহগনি গাছ রয়েছে৷’ তাঁর স্পষ্ট কথা, তিনি আদালতে এই বিষয়ে মামলা দায়ের করবেন৷ এই পুজোর সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত রয়েছেন বলেই বেআইনিভাবে গাছ আসতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা৷ মুখে না বললেও তাঁর তির যে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়্ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের দিকে, সেটা বুঝে নিতে সমস্যা হয় না। যদিও তাঁর পুজোয় কোনওরকম বেআইনি কাজ হয়েছে বলে মানতে চাননি মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, ‘ এই কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্পীকে। তিনিই পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন।’ মন্ত্রীর বিশ্বাস এই কাজে বেআইনি কোনও কিছুই নেই। তবে আপাতত এই কাঠের প্রতিমা নিয়েই সরগরম শহরের পুজোর মহল।
[সাহিত্যের মহোৎসব: পাঠকের হাতে ‘শারদীয় সংবাদ প্রতিদিন’]
The post চেতলার কাঠের দুর্গা প্রতিমা নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক appeared first on Sangbad Pratidin.