ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ভূত পর্যটন বা হরর টুরিজমের সঙ্গে এখন কমবেশি অনেকেই পরিচিত। শনিবার ভূত চতুর্দশী। তার আগে সামনে এল হরর টুরিজম নিয়ে আরও এক নতুন তথ্য। আর সেই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চলেছে শহর। এখনও স্মৃতি থেকে পুরুলিয়ার বেগুনকোদরের ঘটনা মুছে যায়নি। নানা সমস্যায় সে অভিযান অসম্পূর্ণই রয়ে গিয়েছে। তার মধ্যেই নতুন অভিযান ইছামতির পাড়ে।
প্যারানরমাল সোসাইটি অফ কলকাতার উদ্যোগেই এক সময় হয়েছিল বেগুকোদরের অভিযান। সে কথা জানানোর আগে জানাব, অ্যালকাইল নামে আরেকটি সংস্থার নতুন উদ্যোগের কথা। তাদের উদ্যোগের নাম ‘ভূত চতুর্দশীর রাতে অদ্ভুত পার্বণ’। সোজা কথায়, ভূত চতুর্দশীর রাতে ভূত দেখানোর দাবি করেছে তারা। এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে বেশ কিছু সংস্থাই। তাতে বেড়ানোও হচ্ছে। যাঁরা পৌরাণিক বা ভৌতিক স্বাদ নিতে চান, তাঁদের সে শখও পূর্ণ হচ্ছে।
বস্তুত, একটু অজানা জায়গা ঠিক করে নেওয়া হয়। জায়গাটার বদনাম থাকলে আকর্ষণ দ্বিগুণ। অ্যালকাইল ঠিক করেছে বনগাঁয় ইছামতীর ধারে এক গাঁয়ে তাঁবু ফেলা হবে। ইতিমধ্যে বহু উৎসাহী মানুষ তাদের সঙ্গ নিয়েছে। মঙ্গলগঞ্জে কাটা সাহেবের কুঠিই তাদের গন্তব্য। পারমাদন অরণ্যের কাছে এটি ব্রিটিশ আমলের পরিত্যক্ত এক নীলকুঠি। নানা ধারণা কিছু ভ্রমের সঙ্গে মিলেমিশে একগুচ্ছ গল্পের জন্ম দিয়েছে। শোনা যায়, এই নীল সাহেব একসময় বহু বাঙালির ক্ষতি করেছিল। বড় অত্যাচারী ছিল। অনেক বিরুদ্ধ মতও শোনা যায়। সংস্থাটি জানাচ্ছে, প্রথা মেনে ওই কুঠির কাছাকাছি ভূত চতুর্দশী পালন করবে তারা। ভূত চতুর্দশী অর্থাৎ শনিবার সকালে পৌঁছে প্রথমে আশপাশ রেইকি করে নেওয়া। সঙ্গে একটু গ্রাম দর্শন। তারপর রাত নামতেই ‘তেনাদের’ আবাহন।
[আরও পড়ুন: অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে চিতাবাঘ! ভাইরাল ভিডিওয় আতঙ্কে পাহাড়বাসী]
সংস্থার তরফে শ্রীচেতা দত্তর কথায়, “একেবারে অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চার। চারদিক ছমছমে। সামনে পোড়ো ভাঙা কুঠিবাড়ি। অমাবস্যার আগের রাত। রক্ত হিম করে দিতে পারে এমন অভিজ্ঞতা।” শ্রীচেতা জানাচ্ছেন, উপরি পাওনা ভূত চতুর্দশীর মতো সব তিথি নক্ষত্রের কার্যকারণ ব্যাখ্যা নিয়ে নানা গল্প। শিহরন জাগবেই। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ভূতের দেখা কি পাওয়া যাবে? ভূত দেখানোর গ্যারান্টি কি তাঁরা দিচ্ছেন? অ্যালকাইল বলছে, একটি ভৌতিক পরিবেশকে আরও ভৌতিক করে তুলতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে। এমন পরিবেশে যদি সত্যিই প্রেতাত্মা থেকে থাকে তবে দেখা মিলবে বই কী!
প্রশ্ন আরও একটা। ভূতের দেখা মিলুক আর নাই মিলুক, অন্ধকার রাতে এমন পোড়ো বাড়িতে অভিযান কতটা নিরাপদ? শ্রীচেতার দাবি, গোটা অভিযানটাই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে করা হবে। নিরাপত্তায় কোনও ফাঁক রাখা হবে না। প্যারানরমাল সোসাইটির অভিজ্ঞতা যদিও এত সুখের হয়নি। পর্যটনের পাশাপাশি তারা ভূত বা আত্মার উপস্থিতি নিয়ে গবেষণাও করতে চেয়েছিল পুরুলিয়ার কুখ্যাত বেগুনকোদর রেল স্টেশনে। সেখানে নাকি সকাল নাগাদ দু’-একটি ট্রেন দাঁড়ালেও বিকেলের পর থেকে আর সেখানে কোনও ট্রেন দাঁড়ায় না। ভূতুড়ে স্টেশন, ভৌতিক কাণ্ড-কারখানার বদনাম শুনেই সেখানে পৌঁছেছিলেন সোসাইটির সদস্যরা। তাঁদের তরফে সৌমেন রায় জানিয়েছেন, “আমরা সবরকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করে সেখানে গিয়েছিলাম। গবেষণার কাজ শুরু হয়েছিল রাতে। সঙ্গে যে পর্যটকদের পেয়েছিলাম, তাঁরাও উৎসাহী।” তবে? বাধ সাধল কোথায়? সৌমেন বলছেন, “স্থানীয়দের কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছিল। তাঁরা চাইছিলেন না আমরা ওখানে থাকি। আমরা আরও কদিন ওখানে থেকে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয়দের কাছ থেকে এমন ব্যবহার আমাদের অবাক করেছিল। যার কোনও ব্যাখ্যাও আর পাইনি।”
তবে হরর টুরিজম নিয়ে আগ্রহের পাশাপাশি বহু মানুষের উদ্যোগও বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কখনও ভূত চতুর্দশী বা কখনও হ্যালোইনকে সামনে রেখে এই ধরনের টুরিজমের ঝোঁক বাড়ছে। বাড়ছে সেইসব রীতি রেওয়াজ পালনের ইচ্ছেও। এমনকী, অভিজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে বিদেশের মতো স্বদেশেও বাড়তে পারে জম্বিদের নিয়ে আগ্রহ।
[আরও পড়ুন: কেউ পিঠে চড়লেই মৃত্যু হয় এই ঘোড়ার! ভাইরাল ভিডিওয় অবাক নেটদুনিয়া]
The post চতুর্দশীর রাতে ভূত দেখতে চান? সোজা চলে যান এই জায়গায় appeared first on Sangbad Pratidin.