শম্পালী মৌলিক: যতদূর চোখ যায় জনসমুদ্র। সিনেমার জন্য এভাবেও ভিড় করা যায়! নক্ষত্রদের কাছ থেকে দেখার এত আনন্দ? অতিমারী-উত্তর পর্বে ফিল্মোৎসবের প্রাঙ্গণে এই ভিড়টাই মন ভাল করে দেয়। এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাব্যঞ্জক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ‘ইফি’-র (IFFIGoa) উদ্বোধন হয়ে গেল রবিবার গোয়ার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি স্টেডিয়ামে।
৫৩তম ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া (IFFI53) চলবে আগামী ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত। উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, তথ্য সম্প্রচার দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এল মুরুগান, গোয়ার গভর্নর শ্রীধরন পিল্লাই, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত, এছাড়াও সুজিত সরকার, প্রসূন যোশী-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলেন। অতিমারীর কারণে বিগত বছরে জৌলুস কিছুটা ফিকে থাকলেও এবারে উৎসবের রোশনাই চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার মতো।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের থিম ছিল ‘একশো বছরের ভারতীয় সিনেমার বিবর্তন’ কেন্দ্র করে, যেখানে মূল ফোকাসে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তিতে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উদযাপন। এবারের উদ্বোধনী ছবি ডিটার বারনার পরিচালিত অস্ট্রিয়ান ফিল্ম ‘আলমা অ্যান্ড অস্কার’। পানাজির আইনক্সে দুপুরে যার রেড কার্পেট ও ফিল্ম প্রদর্শনী ছিল। সেখানে অনুরাগ ঠাকুর-সহ বিশিষ্টজনরা ছিলেন।
চলচ্চিত্র উৎসব প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অনুরাগ ঠাকুর বলেন, “ইফি’ সারা বিশ্বের পরিচালকদের কাজ প্রদর্শনের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, আমি নিশ্চিত ভারত কো-প্রোডাকশন, পোস্ট প্রোডাকশন, ফিল্ম কনটেন্ট, টেকনোলজির ক্ষেত্রে হাব হয়ে উঠবে।” মূল অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও যোগ করেন, ‘‘ভারত ক্রমে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার অবস্থানে পৌঁছচ্ছে। G ২০-র সভাপতিত্বেও রয়েছে। এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ নীতির রূপায়ণের পথে এগিয়ে চলেছি আমরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে।’’
[আরও পড়ুন: ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আর কখনও কিছু লিখবেন না! ফেসবুক প্রোফাইল মুছলেন সব্যসাচী]
উৎসবের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Narendra Modi) শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালনার হাল ধরেন অপারশক্তি খুরানা। তারপর ম্রুণাল ঠাকুরের নৃত্য প্রদর্শন। এদিন সংবর্ধনা দেওয়া হল মনোজ বাজপেয়ী, সুনীল শেট্টি, অজয় দেবগন, পরেশ রাওয়াল ও বিজয়েন্দ্র প্রসাদকে। উদ্বোধনে সত্যজিৎ রায় লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হল স্প্যানিশ পরিচালক কার্লোস সওরাকে। অসুস্থতার কারণে উনি আসতে পারেননি। নবতিপর পরিচালকের কন্যা অ্যানা পুরস্কার নেন।
পরিচালক কার্লোসের রেস্ট্রোস্পেকটিভ থাকছে এবারে। ইফি-র এবারে স্পটলাইট দেশ ফ্রান্স। ২০২২-এর ‘ফিল্ম পার্সোনালিটি অফ দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হয়েছেন মেগাস্টার চিরঞ্জীবী।
অনুষ্ঠানে পারফর্ম করলেন কার্তিক আরিয়ান, সারা আলি খান, বরুণ ধাওয়ান, ক্যাথরিন টেরিজা এবং মঞ্চ মাতান ঋতাভরী চক্রবর্তী। তিনি পশ্চিমবঙ্গ ও নর্থ-ইস্টের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
এবারে ৭৯টি দেশের ২৮০টি ছবি দেখানো হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ ফিল্মের স্ক্রিনিং রয়েছে। ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ অফ ইন্ডিয়ার কিছু ছবি, যা এনএফডিসি দ্বারা সংরক্ষিত সেইরকম কিছু ছবিও দেখা যাবে। যেখানে থাকবে সত্যজিৎ রায়ের (Satyajit Ray) ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’ ও ‘গণশত্রু’। এছাড়া ‘দ্য স্টোরি টেলার’, ‘দৃশ্যম টু’, ‘গোল্ডফিশ’, ‘ভেদিয়া’, ‘তেরা কেয়া হোগা লাভলি’ ইত্যাদি ছবিগুলোর প্রিমিয়ার রয়েছে। এবারের উৎসবে OTT-র গুরুত্বও রয়েছে। জনপ্রিয় সিরিজ ‘ফৌদা’-র সিজন ৪-এর প্রিমিয়ার হবে ইফি-তে। রয়েছে মণিপুরি সিনেমার পঞ্চাশ বছর উদ্যাপন। আশা পারেখ-এর রেস্ট্রোস্পেকটিভ উৎসবের বড় আকর্ষণ। পঁচিশটা ফিচার ফিল্ম এবং কুড়িটা নন-ফিচার ফিল্ম প্রদর্শিত হবে এবার ইন্ডিয়ান প্যানোরামায়।
কান ফেস্টিভ্যালের ফিল্ম মার্কেটের আদলে উৎসবের বড় আকর্ষণ হতে চলেছে ফিল্ম বাজার এবং মাস্টার ক্লাস। এর পাশাপাশি আর্ট ইনস্টলেশন, সেলফি পয়েন্টের মতো বিষয় নজর কাড়বে। এবারে রেকর্ড হচ্ছে চল্লিশ শতাংশ মহিলা ফিল্মমেকারের উপস্থিতি। ইন্ডিয়ান প্যানোরামাতেও মেয়েদের তৈরি বেশ কিছু ছবি থাকছে। কান পারলে গোয়া পারবে না কেন! চলচ্চিত্র উৎসবের শুরুর দিনে উৎসবের সেই সুর বাঁধা হয়ে গেল।