দুলাল দে: ইগর স্টিমাচের (Igor Stimac) আগে আর কোনও জাতীয় কোচকে ঘিরে ভারতীয় ফুটবল রাজনীতিতে এতটা আলোড়ন বোধহয় হয়নি। কখনও সমস্যা হচ্ছে ফেডারেশনের সঙ্গে, কখনও শোনা যায় প্রতিপক্ষ এফএসডিএল (FSDL)। তাঁর কোচিংয়েই ফেডারেশনের সচিবের চেয়ারে বসেছেন তিনজন সচিব। তার মধ্যেও কিন্তু প্রাক বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছনোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন জোরকদমে। আর তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছলে ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তিমতো তাঁর চুক্তি বেড়ে যাবে আরও দু’বছর।
‘ট্রেলব্লেজার্স’-এর অনুষ্ঠানে প্যানেল ডিসকাশনে এসেছিলেন কলকাতায়। অনুষ্ঠানে শেষ হতেই বাইপাসের ধারে বিলাসবহুল হোটেলের ফিফথ ফ্লোরে একদম আড্ডার মুডে ধরা দিলেন তিনি। যেখানে ডার্বির প্রসঙ্গও বাদ দিলেন না ইগর স্টিমাচ।
প্রশ্ন: অবশেষে ম্যাচ দেখতে কলকাতায় এলেন?
ইগর: এভাবে জিজ্ঞাসা করলেন কেন?
প্রশ্ন: না, চারিদিকে মাঝে মধ্যে কথা শোনা যায়, আপনি ম্যাচ দেখেন না?
ইগর: ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে, কারা বলেন এই কথা? ম্যাচ দেখি না, না কি মাঠে বসে দেখি না? কী বোকা বোকা কথা। আইএসএলের (ISL) যে কোনও ম্যাচের যে কোনও ফুটবলার নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনায় বসুন না। প্রতিটা ম্যাচ দেখতে হয় আমাকে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে কোনও কোচকেই মাঠে গিয়ে ম্যাচ দেখতে হয় না। ঘরে বসে ঠান্ডা মাথায় ভালোভাবে ম্যাচ দেখা যায়। তবে এটা ঠিক, আমি শুধু দেশের এক নম্বর লিগ ‘আইএসএলে’র সব ম্যাচ দেখি। আই লিগ বা সন্তোষ ট্রফি না।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ফের অ্যাকশনে ইডি, পার্থ ঘনিষ্ঠর বাড়িতে তল্লাশি]
প্রশ্ন: কেন? আই লিগ (I League), সন্তোষ ট্রফি দেখবেন না?
ইগর: দেশের এক নম্বর লিগ আইএসএল। সেখানেই দেশের সেরা ফুটবলাররা খেলবে, এটাই স্বাভাবিক। ইংল্যান্ডের জাতীয় কোচ ইপিএল (EPL) কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ না দেখে কমিউনিটি লিগ দেখে বলছেন? ব্রাজিলের জাতীয় কোচ বিশ্বকাপের দল তৈরির জন্য দেশের প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ না দেখে দেশের দ্বিতীয় ডিভিশন লিগ দেখে? আমি তো ডেভলপমেন্ট কোচ নই। দেশের জুনিয়র ফুটবলারদের দেখবেন ডেভলপমেন্ট কোচরা। ভালো খেললে এমনিতেই দেশের সেরা লিগে খেলবে। সেখানে ভালো খেললে আমি দেখবোই। তবুও মাঝে মধ্যে আই লিগ দেখি না এরকম নয়। কালকেই কল্যাণী যাব ইন্টার কাশীর ম্যাচ দেখতে। মহামেডান ম্যাচও দেখব।
প্রশ্ন: কী রকম?
ইগর: গ্লেন মার্টিন্স তখন চার্চিলে খেলে। চার্চিলের মালিককে বললাম, এত ভালো ফুটবলার, ওকে আইএসএলে খেলতে দিন। তারপর এফসি গোয়ায় (FC Goa) সই করল। আমিও জাতীয় দলে ডেকে নিলাম। আন্তর্জাতিক ফুটবলের সঙ্গে আমাদের যতটা পার্থক্য, আইএসএল-এর সঙ্গে আই লিগ বা সন্তোষ ট্রফির ততটাই।
প্রশ্ন: আপনি তো আইএসএলের দলগুলিরও সমালোচনা করেছেন?
ইগর: কোনটা বলুন তো?
প্রশ্ন: এশিয়ান কাপে (Asian Cup) বিদায়ের পর বলেছিলেন, আইএসএলের চ্যাম্পিয়ন দলগুলি মালদ্বীপ, বাংলাদেশের দলগুলির বিরুদ্ধে জিততে পারে না।
ইগর: বলুন তো, কোনটা ভুল বলেছি? এএফসি কাপে মোহনবাগান (Mohun Bagan) হারেনি? বিদেশি সমৃদ্ধ দেশের এক নম্বর দল যদি মালদ্বীপ, বাংলাদেশের দলের বিরুদ্ধে জিততে না পারে, তাহলে জাতীয় দল কীভাবে অস্ট্রেলিয়া, উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনওরকম প্রস্তুতি ছাড়া জিতবে?
প্রশ্ন: সরাসরিই জিজ্ঞাসা করছি, ফেরান্দো না হাবাস? কার কোচিং ভাল লাগে?
ইগর: ফেরান্দোর সময় মাঠের ভিতর ফুটবলারদের আচরণ আর এখন হাবাসের কোচিংয়ে মাঠের ভিতর ফুটবলারদের দেখলেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। ফেরান্দোর সময় ফুটবলাররা খেলত, খেলতে হবে বলে। আর হাবাস কোচ হওয়ার পর মোহনবাগান ফুটবলারদের বদলে যাওয়াটা দেখেছেন? দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজটাই চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে জেতার অদম্য খিদে রয়েছে।
[আরও পড়ুন: পদ্মে এবার গান্ধী ‘কাঁটা’? বিজেপি টিকিট দেবে বরুণকে? তুঙ্গে জল্পনা]
প্রশ্ন: এক সময় না কি এই হাবাসের সঙ্গেই আপনার বেশ ঝামেলা হয়েছিল?
ইগর: আইএসএলের সব কোচের সঙ্গে সারা বছর টাচে থাকি। অনেক আগে হাবাসের (Antonio Habas) কোচিংয়ে মোহনবাগানের খেলা দেখে বলেছিলাম, হয়তো ম্যাচ জিতছে, কিন্তু উঁচু করে লম্বা বল ফেলা স্টাইলটা আমার পছন্দ নয়। আমার মন্তব্যে হাবাস মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয়েছিল। হাবাসের কোচিং এখন আমার দারুণ লাগে। প্রায়ই কথা হয় আমাদের। ডার্বির (Kolkata Derby) পরের দিন ওর সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশ্ন: আর ইস্টবেঙ্গল কোচ কুয়াদ্রাত ?
ইগর: সুপার কাপ (Super Cup) জেতাটাকে খুব বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না। তখন সবাই সেরা দল নিয়ে খেলেনি।
প্রশ্ন: কুয়াদ্রাতকে আমি কোচ হিসেবে বিশ্লেষণ করতে বলছি।
ইগর: আইএসএলের লিগ টেবিলে পজিশন দেখলে আপনিই বিশ্লেষণ করতে পারবেন। আমি আর কী বলব?
প্রশ্ন: সরাসরি বলুন তো, ডার্বিতে কে এগিয়ে?
ইগর: (হেসে) বলব না। দেখুন, ক্লাব কোচদের অনেক সুবিধা থাকে। সারা বছর ধরে দলটাকে তৈরি করতে পারে। আমার সেই সুবিধা কোথায়? এশিয়ান কাপের আগে মাত্র দুই সপ্তাহর শিবির!
প্রশ্ন: ফেডারেশন কর্তাদের বলেননি?
ইগর: ফেডারেশন প্রেসিডেন্টকে সব বলেছি। সত্যিটা লুকিয়ে লাভ নেই তো। কল্যাণ চৌবেকে এরকমও বলেছিলাম, সেরকম হলে আমাকে ছেড়ে দিতে পারেন। এশিয়ান কাপে নতুন কোচ নিয়ে নিতে পারে ফেডারেশন। সম্মানের সঙ্গে আমরা আলাদা হতে পারতাম। আনোয়ার আলি ছিল না, যে ডিফেন্স থেকে খেলাটা শুরু করে। মাঝমাঠে জিকসন সিং নেই, যে মাঝমাঠ ব্যালান্স করে। সাহাল আবদুল সামাদও ছিল না। ফলে আক্রমণেও সমস্যা। তারমধ্যে প্রস্তুতি নেই। এভাবে আর যাই হোক এশিয়ান কাপে ভাল কিছু হয় না। সভাপতির সঙ্গে আমার দূরত্ব নিয়ে যে খবর প্রচার চলছে, পুরোটাই মিথ্যে।
প্রশ্ন: প্রাক বিশ্বকাপের জন্য এদিন যে ৩৫ জনের দল ঘোষণা করলেন, তাতে আবার চোটের জন্য সন্দেশ নেই ?
ইগর: আনোয়ার এল সন্দেশ নেই। তবে কুয়েত ম্যাচটা আমি কলকাতায় খেলতে চাই। ফেডারেশনকে ইতিমধ্যে জানিয়েছি। কলকাতার গ্যালারির চিৎকারটা প্রচণ্ড দরকার।