শেখর চন্দ্র, আসানসোল: উৎসবের আবহে রক্তাক্ত হয়েছিল আসানসোলের (Asansol) মাটি। রামনবমীর মিছিলে ঝামেলার জেরে খুন হয়ে যায় তরতাজা এক যুবক। বছর চারেক আগেকার সেই ঘটনার পর তপ্ত আসানসোলকে শান্তির বার্তা শুনিয়ে নজর কেড়েছিলেন নিহত যুবকের বাবা ইমাম রশিদি (Imam Rashidi)। এবার তিনি নিজের ছেলেদের খুনিদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিতেই গেলেন না। বললেন, খুনিদের চোখেই দেখেননি, কীভাবে সাক্ষী দেবেন। আর তাঁর এই বয়ানের ভিত্তিতেই অভিযুক্ত দুই নাবালককে বেকসুর খালাস করে দেয় আদালত।
২০১৮ সালের রামনবমীর (Ramnavami)দিন আসানসোলের রানিগঞ্জ এলাকায় মিছিল চলাকালীন সামান্য ঝামেলা থেকে খুনোখুনির মতো গুরুতর ঘটনা ঘটে যায়। নিহত হন ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদির ছেলে। সাম্প্রদায়িক আগুনে জ্বলে ওঠে এলাকা। বাংলার মাটিতে ঘটতেই পারত বড়সড় কোনও অশান্তি। কিন্তু উত্তাপ প্রশমিত করতে আসরে নামেন স্বয়ং ইমাম। হাতজোড় করে সকলকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। বার্তা দেন, আইন আইনের পথে চলুক। কেউ কোনও অশান্তি যেন না ছড়ান। পালটা অশান্তিতে তাঁর মতো আর কোনও বাবার কোল যেন খালি না হয়। তাঁর এই বার্তায় ধীরে ধীরে অশান্তির আঁচ নিভতে থাকে রানিগঞ্জে।
[আরও পডুন: পরা যাবে না ছেঁড়া জিনস, কলকাতার কলেজের নয়া পোশাক ফতোয়া নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক!]
সন্তানশোক বুকে নিয়েও কীভাবে এমন সম্প্রীতির বার্তা তিনি দিলেন, তা ভেবে অনেকেই সেসময় বিস্মিত হয়েছিলেন। শুধু এটাই নয়, এর পরবর্তী সময়ে বাংলার যে কোনও প্রান্তেই সাম্প্রদায়িক অশান্তি সামান্য উসকে উঠলেই শান্তির বার্তা শোনা গিয়েছে ইমাম ইমদাদুল্লা রশিদির গলায়। বারবারই তিনি আইনের উপর ভরসা রাখার কথা শুনিয়েছেন। এবার তিনি মানবিকতার আরও এক নজির রাখলেন। ছেলের খুনিদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষীই দিলেন না। জানালেন, ছেলের খুনিদের দেখেনইনি। মিথ্যে সাক্ষী দিতে চান না। প্রসঙ্গত, এই ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁরা প্রত্যেকেই জানিয়েছিলেন, খুনি ঠিক কে, তা কেউই দেখেননি। ইমামও তাঁদের সুরে সুর মিলিয়েই জানালেন, খুনিদের না দেখে মিথ্যে সাক্ষী দেবেন না।
[আরও পডুন: উপহারের লোভ দেখিয়ে ১১ বছরের কিশোরীর উপর পাশবিক যৌন অত্যাচার, বসিরহাটে গ্রেপ্তার দুই]
ইমামের এই পদক্ষেপে নাবালক দুই অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। তাঁর এই আচরণে অবাক আইনজীবীও। বলছেন, ছেলের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দের বিরুদ্ধে সাক্ষী না দেওয়ার ঘটনা তাঁর পেশাগত জীবনে এই প্রথম।