সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নীরবের সংস্থা ফায়ারস্টার ডায়মন্ড ইনকর্পোরেট থেকে ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলির অর্থ আদায় রুখতে বৃহস্পতিবার আমেরিকার একটি আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ জারি করেছে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন জানিয়ে সংস্থাটি আদালতে আবেদন জানায়। জানা যাচ্ছে, সোমবরাই নীরবের সংস্থা নিউ ইয়র্ক সাউদার্ন ব্যাঙ্করাপসি কোর্টে আবেদন জানায়।
নীরবের সংস্থার মামলাটি গ্রহণ করে নিউ ইয়র্ক সাউদার্ন ব্যাঙ্করাপসি কোর্ট বলেছে, স্বাভাবিকভাবেই সংস্থাটি থেকে সবরকমের পাওনা আদায়ের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যাবে। দুই পাতার রায়ে বলা হয়েছে, “ঋণদাতারা সংস্থার কাছে পাওনা টাকা আদায় করতে পারবেন না এবং তাদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন না।” আদালতের এই রায়ে নীরব মোদি কিছুটা স্বস্তি পাবেন ঠিকই, কিন্তু পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রতারণা তদন্তে এর কোনও প্রভাব পড়বে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। আমেরিকায় ফায়ারস্টারকে ঋণ দেওয়া সংস্থাগুলি ৩০ মার্চ আদালতের এই রায় নিয়ে আলোচনায় বসবে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ব্যাঙ্ক প্রতারণায় অভিযুক্ত সেলিব্রিটি হিরে ব্যবসায়ী আমেরিকায় আছেন কি না, নিশ্চিত করতে পারবে না ওয়াশিংটন। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সে দেশের বিদেশ দপ্তর। দপ্তরের মুখপাত্র সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, “নীরব মোদি আমেরিকায় আছেন বলে সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে যে খবর করা হচ্ছে সেটা আমরা জানি। কিন্তু সেগুলি আমরা নিশ্চিত করতে পারবো না।”
[ছত্তিশগড়ে তুমুল গুলির লড়াই, নিকেশ ১০ মাওবাদী]
ব্যাঙ্কের কিছু কর্মী ও আধিকারিকের সঙ্গে যোগসাজশে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর থেকে দুই ‘হাই প্রোফাইল’ হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদি এবং মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ২৯ জানুয়ারি পিএনবি কর্তৃপক্ষ তদন্ত সংস্থাকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু তদন্তে প্রকাশ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই নীরব-চোকসি সপরিবার ভারত ছেড়ে বিদেশে চলে যান। সিবিআই ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁদের বিরুদ্ধে প্রথম এফআইআর করে। চলতি সপ্তাহের শুরুতেই সিবিআই নীরব আর চোকসির সংস্থার ১০ জন সিনিয়র এগজিকিউটিভের নামে ‘লুক আউট সার্কুলার’ জারি করে। তদন্তকারী সংস্থার সুপারিশেই ভারতের বিদেশমন্ত্রক নীরবের পাসপোর্ট প্রথমে সাসপেন্ড ও পরে বাতিলই ঘোষণা করে।
কিন্তু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়, নীরব মোদি বহাল তবিয়তেই নিউ ইয়র্কের বিলাসবহুল হোটেলে দিন কাটাচ্ছেন। খবরে প্রকাশ, নিউ ইয়র্কে জে ডব্লিউ ম্যারিয়টের এসেক্স হাউসে বিলাসবহুলভাবেই ছুটি কাটাচ্ছেন তিনি। ১৬০ সেন্ট্রাল পার্ক সাউথে হোটেল ও অ্যাপার্টমেন্ট দুই’ই রয়েছে। সেখানেই দিব্যি রয়েছেন নীরব। ম্যানহাটনে সবচেয়ে ‘প্রিমিয়ার লোকেশন’-এ নীরবকে দেখা গিয়েছে। সেই হোটেলে নীরবের স্ত্রীকেও কয়েকবার আসতে-বেরতে দেখা গিয়েছে। উল্লেখ্য, নীরব মোদির স্ত্রী এমি আমেরিকার নাগরিক।
[বীর্যের পর এবার প্রস্রাবে ভরা বেলুন ছোড়া হল ছাত্রীদের লক্ষ্য করে]
নীরব মোদিকে খুঁজে বের করতে মার্কিন বিদেশ দপ্তর ভারত সরকারকে কোনও সহযোগিতা করবে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে ওই মুখপাত্র বলেছেন, নীরব মোদি নিয়ে তদন্তে ভারতীয় সংস্থাকে কোনও আইনি সহায়তা দেওয়া যায় কি না, তা বিচার দপ্তরের কাছে জানতে হবে। যদিও বিচার দপ্তরও নীরব প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ভারত সরকারের কাছে কোনও খবর নেই নীরব মোদি কোথায় আছেন। যোগাযোগ যেটুকু চলছে তা ই-মেল মারফত। বিদেশ মন্ত্রক নীরবের অফিসিয়াল ইমেল আইডিতে পাসপোর্ট সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত ও শোকজ নোটিস পাঠিয়েছিল। পরে সিবিআই সেই ইমেল আইডিতেই হাজিরার নির্দেশ দিয়ে সমন পাঠিয়েছে। প্রথমে ইডির সমনে হাজার না হতে পারার জন্য নীরব তাঁর পাসপোর্ট সাসপেনশনের কারণ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সিবিআইয়ের পাঠানো সমনে তাঁকে বলা হয়েছে, তিনি যে দেশে রয়েছেন সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে যেন দেখা করেন। তারাই ভারতে ফেরানোর ব্যবস্থা করবে। অবশ্য নীরব তাতে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ব্যবসার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। তাই ফিরতে পারবেন না। বিদেশ মন্ত্রকের আশা, পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় নীরব দেশ বদল করতে পারবেন না। তিনি যেখানে আছেন তাঁকে সেখানেই আটকে থাকতে হবে।
[স্ত্রীর রান্না অখাদ্য, বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে স্বামী]
The post টাকা ফেরত চাইতে পারবেন না ঋণদাতারা, মার্কিন আদালতের রায়ে স্বস্তিতে নীরব appeared first on Sangbad Pratidin.