সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যদের ইস্তফা দিতে বলে রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের (Arif Mohammad Khan) নির্দেশ ঘিরে কেরলের (Kerala) রাজ্য-রাজনীতি সরগরম। এরমধ্যেই বড় ধাক্কা রাজ্যপালের। সোমবার কেরালা হাই কোর্ট (Kerala High Court) রাজ্যপালের নির্দেশ সংক্রান্ত ওই চিঠি বাতিল করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এটি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে সোমবার জারি করা শো-কজ নোটিসের ভিত্তিতে আচার্য তথা রাজ্যপাল চূড়ান্ত আদেশ জারি না করা পর্যন্ত উপাচার্যরা তাঁদের পদে থাকতে পারবেন।
এদিকে এই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপালের এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan)। তাতে বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। অনেকেই আবার এই সময় জগদীপ ধনকড়ের আমলে বাংলায় রাজ্যপাল-সরকার সংঘাত মনে করিয়ে দিচ্ছেন। রবিবারই এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিএম ও সিপিআইয়ের দুই নেতা এম ভি গোবিন্দন এবং কানম রাজেন্দ্রন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে রাজ্যপালকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদ থেকে সরাতে সরকার বিধানসভায় বিল আনতে পারে। তাছাড়া, কেটিইউ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাবে সরকার। পাশাপাশি, ১৫ নভেম্বর রাজভবন ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে জোট-শরিকরা।
[আরও পড়ুন: কেনিয়া সরকারের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট, দুই ভারতীয় যুবকের ‘খুনে’ ঘটনায় কড়া বার্তা বিদেশমন্ত্রকের]
রবিবার কেরলের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাজ্যপালের তীব্র সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। তাঁর মতে, রাজ্যপালের এই আহ্বান জানানোর এক্তিয়ারই নেই। তিনি সংবিধান এবং গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির বিরুদ্ধে কাজ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “গণতন্ত্রকে সম্মান করে এমন কেউই এই ধরনের প্রবণতা মেনে নিতে পারবেন না। রাজ্যপাল আরএসএস-এর এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে।” তিনি জানান, রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানকে প্রত্যাহার এবং তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে আরজি জানাবে কেরল সরকার। অন্যদিকে, রাজ্যপালের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাই কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন ওই নয়জন উপাচার্য।
সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-র নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য কেরলের এপিজে আবদুল কালাম টেকনোলজিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কেটিইউ) উপাচার্যর নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলে ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের এই সিদ্ধান্তের কথা উল্লেখ করে, রবিবার রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান সে কেরলের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ২৪ অক্টোবর সকাল সাড়ে এগারোটার মধ্যে পদত্যাগ করার নির্দেশ জারি করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ ইউজিসির (UGC) নিয়ম মেনে করা হয়নি বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যপাল। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। রাজ্যপালের সমালোচনায় সরব হয় শাসক জোট এলডিএফ (LDF)। তবে, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন নিজে মুখ খুলতেই রাজ্যপাল-সরকার সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করে।
[আরও পড়ুন: দীপাবলিতে কাটল করোনার আঁধার! দীর্ঘদিন পর দেশে দৈনিক কোভিড আক্রান্ত হাজারের কম]
বিজয়ন এদিন বলেন, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্বকে লঙ্ঘন করেছে। তাঁর মতে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ‘ধ্বংস’ করার লক্ষ্যে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ করেছেন আরিফ মহম্মদ খান। মুখ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, রাজ্যপালই এই নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়োগকর্তা। যদি এই নির্বাচনগুলিতে ভুল থাকে, তা হলে রাজ্যপালেরই তার দায় নেওয়া উচিত। উপাচার্যদের পদত্যাগ করার অনুরোধ আচার্যও জানাতে পারেন না। বিজয়ন আরও বলেন, “রাজ্যপাল তাঁর আচার্য পদের অপব্যবহার করছেন। নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন। এটা অগণতান্ত্রিক উপায়ে উপাচার্যদের ক্ষমতা দখল করে নেওয়া। রাজ্যপালের পদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য নয়, সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য। উনি আরএসএস-এর এজেন্ট হিসাবে কাজ করছেন।”
ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক জোট আগামী মাসে রাজ্যপালের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে রাজ্যের সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি আদালতেও এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবে তারা। সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এদিন বলেছেন, “রাজ্যপালের এই ধরনের নির্দেশ দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই। এটি স্বেচ্ছাচারী, বেআইনি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ওরা কেরলের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংস করতে চায়। ওরা সেখানে আরএসএস কর্মীদের নিয়োগ করতে চায়, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দুত্ববাদের মতাদর্শ প্রচার করতে পারে। আদালতে এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা হবে। কারণ, সংবিধান রাজ্যপালকে এমন কোনও আদেশ জারি করার অনুমতি দেয়নি।”