সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিশ্বকাপের ধারেকাছে ভারত বনাম ইংল্যান্ড ওয়ান ডে সিরিজ আসে না। কিন্তু তার পরেও তর্কটা উঠছে। চলতি সপ্তাহে কে বেশি ভয়ঙ্কর? ক্রোয়েশিয়ার লুকা মদ্রিচ? নাকি ভারতীয় ক্রিকেটের কুলদীপ? মদ্রিচের তবু একটা মান্দজুকিচ লেগেছিল ফুটবল বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের স্বপ্ন শেষ করে দিতে। ভারতের কুলদীপ যাদবের সেটাও লাগল না। রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করলেন বটে। কিন্তু প্রথম ওয়ান ডে-তে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের প্রধান কারিগর হয়ে থাকলেন চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব। যাঁর এদিনের বোলিং গড় ঈর্ষণীয় ১০-০-২৫-৬! যা বিশ্বরেকর্ড। এগারো বছর আগে ভারতীয় বাঁ হাতি স্পিনারদের মধ্যে মুরলী কার্তিক ২৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে। কিন্তু বৃহস্পতিবার কার্তিককে টপকে যান কুলদীপ। ইংল্যান্ডকে একা শেষ করে দেন। যার পর ম্যান অফ ম্যাচ বাছা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। তার সুযোগও ছিল না। বল হাতে একজন প্রতিপক্ষকে ভাঙ্গলেন। আর একজন ব্যাটকে চওড়া করতেই ইংল্যান্ডের জারিজুরি শেষ। প্রথমজন কুলদীপ যাদব। অন্যজন রোহিত হিট-ম্যান শর্মা। মাঠের বাইশ গজে এঁরা দাপট দেখালে কারোর জবাব দেওয়ার জায়গা থাকে না। সেটা আগে হয়েছে। ট্রেন্ট ব্রিজের মাঠে আবার হল। ইংল্যান্ডের ২৬৮ রানের জবাবে ভারত ৫৯ বল বাকি থাকতে আট উইকেটে জিতল। টি২০ সিরিজের পর প্রথম ওয়ান ডে-তে একই মেজাজ। এক দাপট। রুটরা মাথা তুলে দাঁড়াবেন কীভাবে?
[শুধু সুন্দরীদের না দেখিয়ে খেলা দেখাও, সম্প্রচারকারী সংস্থাকে হুঁশিয়ারি ফিফার]
মদ্রিচদের কাছে ফুটবল বিশ্বকাপ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, বিরাট কোহলিদের কাছে তার চেয়ে হয়তো আরও বেশি। কারণ চার বছর আগে ইংল্যান্ডে হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরেছিল ভারত। যে কারণে প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইক আথারটন কোহলিকে এ দিন ম্যাচ শেষের পর জিজ্ঞাসাও করলেন, “টেস্ট সিরিজের দল তো এখনও ঘোষণা হয়নি। তা, সেখানে কি কুলদীপ-চাহাল রিস্টস্পিন জুটিকে দেখা যাবে?” তাতে বিরাট হেসে বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকাতে আমরা ৫—১ জিতেছিলাম। মিডল ওভারে এরা দু’জন মিলে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিয়েছিল। এরপর আমার আর কিছু বলার নেই।”
[জানেন, বিশ্বকাপ জিতলে কত টাকা পাবে চ্যাম্পিয়ন দল?]
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবার বিশ্লেষণ করছিলেন, কেন কুলদীপের কাছে বারবার হার মানছে ইংল্যান্ড। দিন কয়েক আগে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টি-টোয়েন্টিতে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন কুলদীপ। এ দিন নিলেন ছয়। সৌরভ বলছিলেন, “চাহাল যে বলটা করে, কুলদীপ সেটাই করছে। বরং আমি বলব, কুলদীপের ক্ষেত্রে বলটা খেলার সময় বেশি পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, এরা কেউ ওয়ার্নি (শেন ওয়ার্ন) নয়। কিন্তু কুলদীপের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মানসিক ব্লকেজ হয়ে গিয়েছে। ব্যাটিং অর্ডারও ভুলভাল নামাচ্ছে। জস বাটলারকে চার বা পাঁচ নম্বরে নামানো দরকার।” এর পর ম্যাচ সেরা কে, তা নিয়ে তর্ক ছিল না। রোহিত ১১৪ বলে ১৩৭ অপরাজিত থাকার পরেও নয়। কারণ, দু’জনকে নিয়ে বিচার করতে বসলে ভারতের রিস্ট স্পিনার আগে চলে আসবেন। তাঁকে বাইরে রেখে অন্য কাউকে ভাবাই যায় না।
[ক্রোটদের সেলিব্রেশনে ধরাশায়ী চিত্র-সাংবাদিক, জানেন কে ইনি?]
অথচ ইংল্যান্ড দুর্দান্ত শুরু করেছিল। ওভারপিছু সাতের উপর রান। কিন্তু কুলদীপ আসার পর সব পাল্টে যায়। বিশেষ করে এক ওভারে ভারতীয় চায়নাম্যান তিন উইকেট তুলে নেওয়ার পর। ইংল্যান্ড ওখান থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। যে ইংল্যান্ডকে মনে হচ্ছিল, তিনশো প্লাস করবে। তারা শেষ পর্যন্ত তুলল ২৬৮। ভারতীয় টিমের কাছে যা কিছুই না। এবং রানটা তুলতেও কোনও অসুবিধে হয়নি। উল্টে ভারত শিখর ধাওয়ান ঝড়ে ওভার পিছু দশ রান করে তুলতে শুরু করল। আর তার পর বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা মিলে ম্যাচটাকে আরও সহজ করে দিলেন। রোহিত-বিরাট জুটিতে উঠল ১৬৭ রান। বিরাট শেষ পর্যন্ত স্টাম্পড হলেন। ওয়ান ডে ক্রিকেটে তিনি কবে শেষ স্টাম্পড হয়েছিলেন, ভেবে বার করা মুশকিল। ঠিক যতটা মুশকিল রোহিত শর্মার ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের বর্ণনা করা। ওয়ান ডে ক্রিকেটে নিজের আঠারো নম্বর সেঞ্চুরিটা করলেন রোহিত। ১১৪ বলে ১৩৭। আর একটা তথ্য বলে রাখা ভাল। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম পঞ্চাশটা ওয়ান ডে-তে ক্লাইভ লয়েড আর রিকি পন্টিং জিতেছিলেন উনচল্লিশটায়। বিরাট মাত্র একটা কম। ৩৮! কেউ কেউ বলছেন, পরের ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ।
The post কুলদীপ-রোহিত যুগলবন্দিতে ধরাশায়ী ইংল্যান্ড, সিরিজ শুরুতেই জাত চেনাল ভারত appeared first on Sangbad Pratidin.