সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাসন থাকায় ফাইনালের আগে সরকারি সাংবাদিক সম্মেলনে থাকতে পারেননি কোচ ইগর স্টিমাচ। সন্দেশ ঝিঙ্ঘানকে সঙ্গী করে সকাল সকাল কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন সহকারী কোচ মহেশ গাওলি। স্টিমাচ তখন রেসকোর্স রোডের টিম হোটেলে মেডিটেশন শেষ করে দলের স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট শ্যামবল্লভজির ক্লাসে বসেছেন।
ভারতীয় হলেও শ্যামবল্লভজি এই মুহূর্তে থাকেন প্যারিসে। ২০০৩-এ জন রাইট যখন ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ, সেই সময় বায়োমেকানিকস, কনসালটেন্ট হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে শ্যামবল্লভকে নিয়ে যায় ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI)। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের সঙ্গেও চুক্তিবদ্ধ হন তিন বছরের জন্য। ছিলেন আইপিএলে কিংস ইলেভেনের সঙ্গেও। স্টিমাচ এই শ্যামবল্লভের সন্ধান পান এক বন্ধু মারফত। ভারতীয় দলে লাঞ্চ না-ও হতে পারে, কিন্তু এই স্পোর্টস সাইকোলজিস্টের সঙ্গে ফুটলারদের প্রতিদিনকার সেশন করতেই হবে। তা এহেন শ্যামবল্লভজির সঙ্গে ফাইনালের আগে অনেকক্ষণ কাটালেন ইগর স্টিমাচ। ফুটবলারদের না হয় ফাইনাল নিয়ে ফোকাসড থাকতে হবে। কিন্তু আপনি তো গ্যালারিতে থাকবেন? হেসে স্টিমাচ বললেন, ‘‘মানসিকভাবে আমরা কোচ-ফুটবলাররা একসঙ্গে পাখির চোখ না দেখলে সাফ ফাইনালটা জিতব কী করে?’’
ফাইনালে স্টিমাচের কোচের বেঞ্চে না থাকাটা যেরকম সমস্যার, সেরকম কার্ড সমস্যা কাটিয়ে প্রথম দলে সন্দেশের ফিরে আসাটাও ভারতীয় দলের জন্য যথেষ্ট স্বস্তির খবর। তবে সেমিফাইনালে লেবানন ম্যাচের আগে স্টিমাচের যে আগ্রাসী মনোভাব ছিল, শ্যামবল্লভজির ক্লাস শেষে দেখা গেল অনেকটাই শান্ত তিনি। বরং জোর দিচ্ছিলেন ট্যাকটিক্যাল মুভেমেন্টের উপর। কারণ, আগেরদিন প্র্যাকটিসের পর ফুটবলারদের কুয়েত ম্যাচের যে ক্লিপিংস তিনি দেখিয়েছেন, তাতে বারবার করে বুঝিয়েছেন, অ্যাটাকিং থার্ড, মিডল থার্ড কিংবা ডিফেন্সিভ থার্ডে কুয়েত যে বেশি শক্তিশালী এরকম নয়। কুয়েতের ফুটবলাররা ডিফেন্স থেকে পাস খেলতে খেলতে আক্রমণ তৈরি করে। তাই পরিকল্পনা হয়েছে, মিডফিল্ডেই আটকে দিতে হবে কুয়েতকে। যাতে মিডল থার্ডে তারা বেশি পাস না খেলতে পারে। কিন্তু কোন দল নিয়ে ফাইনালে কুয়েতকে হারাতে চাইছেন স্টিমাচ?
[আরও পড়ুন: সিপিএমের সংগঠন তলানিতেই, পঞ্চায়েত নির্বাচনে বুথে কর্মী না থাকলে স্থানীয় নেতারাই এজেন্ট]
কোন ম্যাচে কোন একাদশ খেলবে, তা ঠিক করার জন্য স্টিমাচের একমাত্র অস্ত্র হল, ম্যাচের দিন সকালে ফুটবলারদের ‘বায়ো মেকানিকস’ রিপোর্ট। সঙ্গে শেষ প্র্যাকটিসে ফুটবলারদের মনোভাব। এই দুইয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় কোচ খুঁজে নেন, কোন ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার জায়গায় রয়েছেন। তিনি শুধু চিন্তায় রয়েছেন, অনিরুদ্ধ থাপাকে নিয়ে। কারণ, পর পর দুটো ম্যাচে সামান্য হলেও ক্লান্ত লেগেছে অনিরুদ্ধকে। ফলে ফাইনালে কুয়েতের বিরুদ্ধে অনিরুদ্ধকে শুরু থেকে খেলানো হবে কি না, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ভারতীয় ফুটবলের ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’। তবে কার্ড সমস্যায় স্টিমাচ কোচের চেয়ারে থাকতে পারবেন না বলে লেবানন ম্যাচের আগে যে কান্নাকাটি শুরু হয়েছিল, সেই কান্নাকাটিটা অন্তত ফাইনালে কুয়েত ম্যাচের আগে দেখা যাচ্ছে না। কারণ, সেমিফাইনালে অসাধারণ খেলা আনোয়ার আলির সঙ্গে এবার ডিফেন্সে যোগ দিচ্ছেন সন্দেশ। ফাইনালে দলে ফিরতে পেরে খুশি সন্দেশ বলছিলেন, ‘‘লেবাননের বিরুদ্ধে মেহতাব আর আনোয়ার অসাধারণ ফুটবল খেলেছে। কিন্তু লেবানন ম্যাচটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা শেষ ৯-১০ টা যা ম্যাচ খেলেছি তাতে কুয়েতই সবচেয়ে শক্তিশালী দল।’’
গ্রুপ লিগের ম্যাচের পর ভারতীয় দলের বক্তব্য ছিল, খেলার মধ্যে শরীরকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করেছিল কুয়েত। ফলে ফাইনালেও সেই আশঙ্কা রয়েছে। অথচ সাংবাদিক সম্মেলনে এসে পুরো দোষটা ভারতের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে কুয়েতের পর্তুগিজ কোচ রুই বেন্তো বলেন, ‘‘ভারতীয় দলই আমাদের বিরুদ্ধে শরীরকে বেশি প্রয়োগ করেছে। আসলে আমরা শারীরিকভাবে ভারতীয় ফুটবলারদের থেকে বেশি শক্তিশালী বলে মনে হয়েছে, আমরা শরীরকে প্রয়োগ করছি।’’ আর তা শুনে সন্দেশ মজা করে বলেন, ‘‘কী আর করা যাবে, আমরা না হয় শারীরিক ভাবে দুর্বল। কাল ম্যাচেই দেখা যাবে!’’
লেবানন ম্যাচে যেভাবে অধিনায়ক সুনীল বারবার করে ফুটবলারদের হয়ে প্রতিবাদ করেছেন, তাতে অধিনায়কের আচরণে অভিভূত কোচ ইগর স্টিমাচ। কিন্তু সমস্যা রয়েছে অন্য জায়গায়। ফাইনালে গোলের নিচে কে দাঁড়াবেন? গুরপ্রীত না অমরিন্দর? লেবানন ম্যাচে ভারতকে টাইব্রেকারে জিতিয়ে গুরপ্রীত এই মুহূর্তে নায়ক। আবার অসাধারণ ফর্মে রয়েছেন অমরিন্দরও। ফলে কে খেলবেন কুয়েতের বিরুদ্ধে? শুধু এই প্রশ্নের মীমাংসা করতে গিয়ে স্টিমাচের ঘুম হলে হয়! ম্যাচের দিন সকালেই না তাঁকে ফের দলের স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট শ্যামবল্লভজির কাছে বসতে হয়!