সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পড়শি দেশগুলির সঙ্গে কোনওকালেই সদ্ভাব ছিল না চিনের। দক্ষিণ চিন সাগরে বেজিংয়ের অতি আগ্রাসী মনোভাবে চটে লাল জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনেই, ফিলিপিন্স-সহ একাধিক দেশ। এহেন পরিস্থিতিতে বেজিংয়ের উদ্বেগ বাড়িয়ে ইন্দোনেশিয়াকে অত্যাধুনিক ব্রহ্মস ক্রুজ মিসাইল জোগান দেওয়া নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ভারত (India)।
[আরও পড়ুন: তিব্বতে তৎপর লালফৌজ, উপগ্রহ চিত্রে প্রকাশ্যে ‘ড্রাগনে’র অভিসন্ধি]
গত রবিবার তিনদিনের সফরে ভারতে পা রাখেন ইন্দোনেশিয়ার (Indonesia) প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল পারবোও সুবিআন্ত। দু’দেশের মধ্যে সামরিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক মজবুত করতে এই সফর বলে খবর। বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যুতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের পর থেকেই ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার চেষ্টা করছে ভারত। সোমবার নয়াদিল্লিতে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে উঠে আসে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একাধিক ইস্যু। সূত্রের খবর, বৈঠকে ব্রহ্মস মিসাইল (Brahmos) সরবরাহ নিয়েও আলোচনা হয়। অত্যাধুনিক এই ক্রুজ মিসাইলটি কিনতে আগ্রহী ইন্দোনেশিয়া। আর চিনের সঙ্গে সংঘাতের আবহে ভারতও বন্ধু দেশটিকে এই হাতিয়ার জোগান দিতে দ্বিধা করবে না বলেই খবর। তবে এই মর্মে কবে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইন্দোনেশিয়া সফরকালে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল দুই দেশ।
উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রহ্মস মিসাইল। গত ডিসেম্বর মাসেই অত্যাধুনিক SU-30 MKI বা সুখোই যুদ্ধবিমান থেকে একটি ব্রহ্মস মিসাইল ছোঁড়া হয়। নয়া নজির গড়ে বিশ্বে প্রথম যুদ্ধবিমান থেকে ‘ট্রাইসনিক ক্লাস’ মিসাইল ছুঁড়ে ভারতীয় বাযুসেনা। ২.৫ টন ওজনের এই মিসাইলটি ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। প্রতি সেকেন্ডে এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারে ব্রহ্মস। যে কোনও টার্গেটে ৯৯.৯৯ শতাংশ নিখুঁত হামলা চালাতে পারে। ‘অগ্নি’ ও ‘পৃথ্বী’র মতো ব্যালিস্টিক মিসাইলের মতোই মারাত্মক এই ক্রুজ মিসাইল। একবার এই মিসাইল লঞ্চ করা হয়েছে গেলে শত্রুর পক্ষে একে আটকানো কার্যত অসম্ভব। ব্রহ্মস মিসাইলের চরিত্র ও গতিবিধি আঁচ করতে পারে না শত্রুপক্ষ, তাই ভারতীয় নৌসেনা ও পদাতিক বাহিনীও এই ক্ষেপণাস্ত্রকে শামিল করেছে তাদের বহরে। ৮.৪ মিটার লম্বা এই মিসাইল বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান সুখোই ৩০ এমকেআই থেকে নিক্ষেপ করা হবে শত্রুর দিকে।
উল্লেখ্য, ব্রহ্মস মিসাইলের জন্ম ১৯৯৮-তে, মস্কোয়। ১৯৯১-এ ইরাকে ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’-এ ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করে সাফল্য পায় আমেরিকা। যা দেখে ভারতও ক্রুজ মিসাইলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়ার জন্মলগ্নে নয়াদিলির সঙ্গে মস্কোর দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের সৌজন্যে ব্রহ্মস আমদানি ও এদেশে তৈরির সুযোগ পেয়ে যায় ভারত। ১৯৯৮-এ দুই দেশের মধ্যে ব্রহ্মস মিসাইল নিয়ে চুক্তি সম্পাদিত হয়। ভারতে এই মারণ ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করে ব্রহ্মস এরাস্পেস প্রাইভেট লিমিটেড। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৫ পর্যন্ত পুরোদমে মিসাইল তৈরি ও ২০৩৫ পর্যন্ত এগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করবে তারা। ব্রহ্মসের পাল্লা বাড়িয়ে ৮০০ কিলোমিটার করা হচ্ছে। হাইপারসনিক এই মিসাইল ডুবোজাহাজ থেকেও নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
[আরও পড়ুন: চিনের সঙ্গে সংঘাতের আবহেই আমজনতার জন্য সিয়াচেনের দরজা খুলল ভারতীয় সেনা]
The post চিনকে বেকায়দায় ফেলে ইন্দোনেশিয়াকে ব্রহ্মস মিসাইল দেবে ভারত! appeared first on Sangbad Pratidin.