সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য পিথমপুরে ধ্বংস করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চরম আকার নিল। মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ফেটে পড়ল পিথমপুরের জনতা। বিক্ষোভস্থল থেকেই গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগালেন দুই আন্দোলনকারী। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার ৪০ বছর পর সেই ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে পিথমপুরে সরানো হয়েছে ৩৩৭ মেট্রিক টন রাসায়নিক বর্জ্য। এই ঘটনায় প্রতিবাদে নেমেছে পিথমপুর বাঁচাও কমিটি। তাদের অভিযোগ, সরকার যতই পরিকল্পিতভাবে এই এলাকায় বর্জ্য নষ্ট করুক না কেন, এতে স্থানীয় পরিবেশ ও জনতার ক্ষতি হবে। রাসায়নিক বর্জ্য ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে বনধের ডাক দেওয়া হয়। প্রতিবাদীদের দমন করতে কড়া হাতে মাঠে নামে পুলিশ। লাঠিচার্জও করা হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় ঘটনাস্থলে দুই ব্যক্তি নিজেদের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগান। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করে ইন্দোরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাঁরা বিপদমুক্ত বলেই দাবি করেছে পুলিশ।
এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। তিনি বলেন, 'সরকার কোনওভাবেই চায় না রাজ্যের কোনও নাগরিকের ক্ষতি হোক। সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টে এই অঞ্চলে ওই রাসায়নিক বর্জ্য ধ্বংস করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। আমার আবেদন কোনও গুজবে কান দেবেন না। বিশেষজ্ঞরা গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই ধ্বংস করা হবে বর্জ্য।' তিনি আরও জানান, দীর্ঘ বছর পর ওই বর্জ্যে এখন ৬০ শতাংশ মাটি ও ৪০ শতাংশ ন্যাপথল রয়েছে। ফলে এটি আর ক্ষতিকারক নয়। তবে ৪০ বছর আগে ভোপাল যে ভয়াবহতা দেখেছিল সেই স্মৃতি স্মরণ করে আঁতকে উঠছেন সাধারণ মানুষ। চিড়ে ভিজছে না সরকারের আশ্বাসে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস লিক করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই দুর্ঘটনায় সরকারি হিসেবে মৃত্যু হয় ৩৭৮৭ জনের। যদিও বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। এর প্রভাবে নানা শারীরিক ক্ষতি হয় প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের। তার পর থেকে গত ৪০ বছর বন্ধ পড়ে রয়েছে কারখানাটি। পড়ে রয়েছে বিষাক্ত বর্জ্য। এই ঘটনায় শীর্ষ আদালতে তোপের মুখে পড়ে রাজ্যসরকার। গত ৩ ডিসেম্বর ওই বর্জ্য সরানোর জন্য ৪ সপ্তাহের ডেডলাইন দিয়ে দেওয়া হয় মধ্যপ্রদেশ সরকারকে।
আদালতের নির্দেশ মেনে বছরের প্রথম দিন ওই অভিশপ্ত কারখানার ৩৩৭ মেট্রিক টন বর্জ্য ২৫০ কিলোমিটার দূরে পিথমপুর শিল্পাঞ্চলে স্থানান্তর করা হয়। রীতিমতো গ্রিন করিডোর করে প্রতিটি ট্রাকে ৩০ টন বর্জ্য নিয়ে রওনা দেয় ১২ টি গাড়ি। ৫০ কিমি গতিতে যাওয়ার সময় আশেপাশের ২০০ মিটার এলাকা ফাঁকা করে দেওয়া হয়। গাড়ির কনভয়ে থাকে পুলিশ, ডাক্তার, দমকল ও অ্যাম্বুলেন্স।