সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: গত আড়াই বছরে সীমান্তের ওপার থেকে একবারও গোলা বর্ষণ করেনি পাকিস্তান। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ বার তিনেক গুলি চলেছে। যাতে চারজন জওয়ান আহত হয়েছেন। এর বাইরে আর তেমন কোনও ‘অ্যাডভেঞ্চার’ হয়নি সীমান্তের ওপার থেকে।
অর্থনৈতিক ও সামরিক- উভয় দিক থেকেই পাকিস্তান ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে ভারতের থেকে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীকরণের পাশাপাশি মানবিক দিকে জোর দিয়েই মূলত প্রতিবেশী দেশের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ করেনি ভারত। গত কয়েক দশক ধরেই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তের পরিস্থিতি ঠান্ডা করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে নয়াদিল্লি। কিন্তু তাতে কখনওই আমল দেয়নি পাকিস্তান। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে মাঝেমধ্যেই চোরাগোপ্তা আক্রমণ চালিয়েছে তারা। কখনও নির্বিচারে গুলি, বোমা বর্ষণ করেছে। কখনও সীমান্ত পার করিয়ে পাঠিয়েছে সন্ত্রাসবাদী। কখনও ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো বা অস্ত্র, মাদক সরবরাহ হয়েছে ওপার থেকে। এই সবকিছু বন্ধ করতেই বারবার পাকিস্তানের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করেছে ভারত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তেমনই এক বৈঠক হয় দুই দেশের সেনার ডিরেক্টরেট জেনারেল স্তরে। সেই বৈঠকে পাকিস্তানকে ঠিক কী বলা হয়েছে, সুরক্ষার স্বার্থে তা প্রকাশ করা না হলেও প্রতিরক্ষামন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, তারপর থেকেই বন্ধ হয়েছে পাকিস্তানের অপকর্ম।
[আরও পড়ুন: উপাচার্য পেতে চলেছে যাদবপুর? ছাত্রমৃত্যুর আবহেই আজ জরুরি বৈঠকের ডাক রাজ্যপালের]
২০২০ সালে ওপার থেকে আসা গোলাগুলিতে নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ২৪ জন ভারতীয় জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছিলেন। একই অবস্থা হয়েছিল ২২ জন সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের। সেখানে আড়াই বছর আগে হওয়া সেই বৈঠকের পর মাত্র তিনবার ওপার থেকে উড়ে এসেছে গুলি। যাতে আহত হয়েছেন চার জওয়ান। কোনও সাধারণ ভারতীয় এই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। সবথেকে বড় কথা, সেই গুলি চলার ঘটনাও ঘটেছিল বৈঠকের ঠিক পরপর। তারপর থেকে না এসেছে গুলি, না গোলা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই বৈঠকে নিশ্চয়ই ভারতের পক্ষ থেকে এমন কিছু বার্তা দেওয়া হয়েছিল ইসলামাবাদকে, যা তাদের চিন্তার কারণ হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাদের দেশের অচলাবস্থা।
যদিও পাকিস্তান হঠাৎ ‘ভদ্র’ হয়ে যাওয়ায় নিশ্চিন্তে বসে নেই ভারত। সবসময় ওপারের দিকে তাক করে থাকা ইনসাস রাইফেল, দূরবিনে চোখ রেখে বসে আছেন ভারতীয় জওয়ানরা। কোনও সময় যদি ওপার থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন হয়, তার কড়া জবাব দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত তাঁরা। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি, কুটনৈতিক প্রক্রিয়াও ধারাবাহিকভাবে চলছে। ফ্ল্যাগ মার্চ, প্রতি সপ্তাহে ডিরেক্টরেট জেনারেল স্তরের বৈঠক, সবই চলছে নিয়ম মেনে।