সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার এয়ারস্ট্রাইকের পরেই মিসাইল যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে। সূত্র মারফত এমনটাই জানা গিয়েছে। জঙ্গিদের খতম হওয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত পাকিস্তানের তরফে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই তৎপর হয়ে ওঠে ভারত। পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে স্থল, জল ও আকাশপথে মিসাইল হামলার সিদ্ধান্তও নাকি নেওয়া হয়েছিল। এমনকী পাকিস্তান হামলা চালাবে এটা নিশ্চিত হলেই নাকি প্রথমে হামলা চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তাই জন্য ভারতীয় মিসাইল সিস্টেমকেও স্টান্ডবাই মোডে রাখা হয়েছিল। যাতে সরকারের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ মিলতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে ধ্বংস করা সম্ভব হয় পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলি।
উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় ২৭ ফেব্রুয়ারির পর। ওইদিন সকালে বালাকোটের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের বদলা নিতে আকাশসীমা লঙ্ঘন করে ভারতের মাটিতে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের কয়েকটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। সেসময় মিগ-২১ বিমান নিয়ে তাদের তাড়া করতে গিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মাটিতে প্রবেশ করেন ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। সেখানে বিমানটি ভেঙে পড়ার কারণে পাকিস্তানের সেনার হাতে আটক হন তিনি। পরে তাঁকে মারধরের ভিডিও সামনে আসতেই পাকিস্তানের মাটিতে মিসাইল হামলার বিষয়ে নাকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়াও হয়ে গিয়েছিল। ভারতের শীর্ষস্তরের এক আমলার তরফ থেকে নাকি পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের শীর্ষকর্তার কাছে ফোনও যায়। হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় অভিনন্দন বর্তমানকে জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী তাড়াতাড়ি ছেড়ে না দিলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার। এরপরই চাপে পড়ে অভিনন্দন বর্তমানকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় ইমরান সরকার।
[আরও পড়ুন- নির্বাচনী প্রচারে অন্য ‘মোদি’! বিজেপি কর্মীদের কৌতূহল তুঙ্গে ]
সূত্রের খবর, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ুসেনা খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোটে থাকা জঙ্গিঘাঁটিকে ধ্বংস করার পরেই পাকিস্তানের মৌলবাদী শক্তিগুলো ইমরান খানের উপর প্রচণ্ড চাপ দিতে থাকে। বাধ্য হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পরেরদিনই ন্যাশনাল কমান্ড অথরিটি (এনসিএ)-র বৈঠক ডাকেন ইমরান। আর পাকিস্তানের পরমাণু সংক্রান্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী এই সংস্থার বৈঠকের পরই নাকি ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, বুধবার অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি এনসিএ-র বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও মঙ্গলবার ঘোষণাটি করা হয়েছিল যাতে ভারতের নীতি নির্ধারকরা তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে পারে বলে আতঙ্কিত হন। পাশাপাশি বিশ্বের অন্য দেশগুলোও যাতে পরমাণু যুদ্ধ শুরু হওয়ার আতঙ্কে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে ও ভারতের সঙ্গে কথা বলে তাও চেয়েছিল তারা।
[আরও পড়ুন- দশ বছরে রাহুলের সম্পত্তি ৫৫ লক্ষ থেকে ৯ কোটি! কটাক্ষ বিজেপির ]
যদিও পরে পরিস্থিতি বুঝতে পেরে সুর নরম করে শান্তির বার্তা দেয় পাকিস্তান। কারণ, তারা বুঝতে পারে যে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির কাছে কোনওভাবেই মাথা ঝোঁকাবে না ভারত। উলটে তাদের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে পারে। কারণ, ভারত যে তাদের মাটিতে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলো গুঁড়িয়ে দিতে বদ্ধপরিকর তা বুঝতে পেরেছিল তারা। অন্যদিকে ভারতও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যেই মন্তব্য করছিল। এমনকী এবার শুধু পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নয়, পাকিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছিল একদম শীর্ষস্তর থেকে। পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম দুটি সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্ত ও আইএনএস চক্রের মধ্যে একটিকে নাকি এই বিষয়ে কাজেও লাগানো হয়েছিল। যা নাকি ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পাকিস্তান।
[আরও পড়ুন- অভিনব নিয়ম, সন্দেহ হলে মিলবে দ্বিতীয়বার ভোটের সুযোগ ]
আসলে পাকিস্তান ভেবেছিল পরমাণু হামলার হুমকি দিলেই মাথা ঝোঁকাতে বাধ্য হবে ভারত। কিন্তু, ঠিক তার উলটো ঘটনা ঘটতে দেখে ভয় পেয়ে যায় তারা। বাধ্য হয়ে আমেরিকা ও সৌদি আরবের কাছে সমস্যা সমাধানে আবেদন জানায়। অভিনন্দন বর্তমানকে তাড়াতাড়ি ভারতে ফেরত পাঠানোর মধ্যেও তাদের সেই বদলে যাওয়া মানসিকতাই প্রকাশ পেয়েছে। এমনকী বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, পাকিস্তানের ধারণা ছিল, ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯ থেকে ১০টার মধ্যে ভারত আক্রমণ করবে। তাই ওইদিন রাতে ইসলামাবাদ, লাহোর ও করাচির কয়েকটি অঞ্চলে সব আলো নিভিয়ে রাখা হয়েছিল।
The post পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতে মিসাইল হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত appeared first on Sangbad Pratidin.