নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: পাকিস্তানের ভিতরে ঢুকে ভারতীয় বায়ুসেনার লড়াকু বিমান মিরাজ ২০০০ মঙ্গলবার ভোরে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের সবথেকে বড় প্রশিক্ষণ শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সকাল সাড়ে এগারোটায় বিদেশসচিব বিজয় গোখলে সাংবাদিক বৈঠক করে সে কথা ঘোষণা করলেন। অবশ্য তার আগেই পাক সেনার মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর টুইট করে ভারতের হামলার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে পাকবাহিনী যে হামলা প্রতিহত করেছে সেই দাবিও করেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকেই সংবাদমাধ্যমে ভারতীয় বায়ুসেনার হামলার কথা ছড়িয়ে পড়ে।
[‘আমাদের ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে’, জইশ প্রধানের বিবৃতিতেই ফাঁস পাক দ্বিচারিতা]
কোনও মন্ত্রী-নেতা নন, বায়ুসেনাও নয়, বিদেশ সচিবের মুখ থেকেই কেন বায়ুসেনার পাক জঙ্গিঘাঁটিতে হামলার কথা শুনতে হল সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে। বিদেশ সচিবের মুখ দিয়ে হামলার কথা ঘোষণা এবং তার ব্যাখ্যা দেওয়ার পিছনে দিল্লি কূটনৈতিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গোখলে যে শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছেন তা-ও তাৎপর্যপূর্ণ। সংবাদমাধ্যমের সামনে যে ব্যখ্যা তুলে ধরা হয় একই ব্যখা নয়াদিল্লিতে বিভিন্ন দেশের যে সমস্ত দূতাবাস রয়েছে তার প্রতিনিধিদের সামনেও রাখা হয়। বিদেশমন্ত্রকে তাঁদের ডেকে এনে এই বিবৃতি দেওয়া যে আন্তর্জাতিকমহলকে পাশে পেতেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পুলওয়ামার বদলা নিতেই যে এই হামলা তা সর্বজনবিদিত। কিন্তু গোখলে ‘বদলা’ বা ‘প্রতিশোধ’ এমন কোনও শব্দ উচ্চারণই করেননি। উল্টে নিজের দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই ভারত সন্ত্রাস দমনে নেমেছে সেই কথাই বিবৃতিতে তুলে ধরেছেন। আত্মরক্ষার অধিকার যে সকলেরই রয়েছে সেই নীতিতেই বায়ুসেনা নিজের কাজ করেছে সে কথা বিদেশ সচিবের বক্তব্যের পরতে পরতে উঠে এসেছে।
গোখলে বলেন, “১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের হাত ছিল। আমাদের কাছে এমন খবরও রয়েছে যে জইশ জঙ্গিরা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় আরও হামলা চালানোর চেষ্টা করছে, ষড়যন্ত্র করছে। এর জন্য ফিঁদায়ে জেহাদিদের প্রশিক্ষিণ দেওয়া হচ্ছে। এই বিপদ আটকানোর জন্য আমাদের এই পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছিল।” বায়ুসেনার হামলা নিয়ে পাকিস্তান যাতে আর্ন্তজাতিকমহলে জলঘোলা করতে না পারে সেই কারণেই ভারত আত্মরক্ষার তত্ত্ব প্রয়োগ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প-সহ একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে আগেই নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভারত বাধ্য হয়েই হামলা চালিয়েছে সে কথা বলার পাশাপাশি কীভাবে, কোথায় হামলা চালানো হয়েছে তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন গোখলে। বালাকোটে হামলাতে যে মাসুদ আজহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজহার নিহত হয়েছে সে কথাও জানান তিনি। ভারতের উদ্দেশ্য যে শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদকেই দমন করা সাধারণ মানুষের উপর কোনও হামলাই করা হয়নি সেকথাও স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন বিদেশ সচিব।
[ভারতের প্রত্যাঘাতের পর পাকিস্তানের পাশে নেই চিনও!]
The post এয়ারস্ট্রাইক নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এড়াতে সতর্ক বিদেশমন্ত্রক appeared first on Sangbad Pratidin.