সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতকে এমন একটা হিন্দু রাষ্ট্র (Hindu Rashtra) হিসাবে তৈরি করতে হবে যে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে লোকে এসে এদেশের মানুষের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (Rashtriya Swayamsevak Sangh) প্রতিটি স্বয়ংসেবককে সেভাবেই তৈরি করতে হবে। বুধবার কলকাতায় এসে এ রাজ্যের আরএসএস (RSS) নেতৃত্বের উপর সেই দায়িত্বই দিয়ে গেলেন সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত (Mohan Bhagwat)। উল্লেখ্য, ক’দিন আগেই দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মুসলিমদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন আরএসএস প্রধান। অল ইন্ডিয়া ইমাম অর্গানাইজেশনের প্রধান উমের আহমেদ ইলয়াসির সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। যা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। সাতদিনের মাথায় ভাগবতের মুখে হিন্দু রাষ্ট্রের বার্তা হিন্দু লাইনের ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ কিনা, উঠছে প্রশ্ন।
এদিন সায়েন্স সিটিতে (Science City) বাংলায় সংঘের প্রবীণ প্রচারক কেশবরাও দীক্ষিত ও শ্যামলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় যোগ দেন ভাগবত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংঘের সহ কার্যবাহ রামদত্ত চক্রধর, সহ প্রচারক অদ্বৈতচরণ দত্ত, ক্ষেত্রীয় সংঘচালক ড. অজয় নন্দী প্রমুখ। মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রয়াত কেশবরাও-এর জীবন ও কাজের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভাগবত বলেন, নিজের জীবনকে কীভাবে মানুষের কাজে নিয়োজিত করতে হয়, তার প্রমাণ এঁরাই।
[আরও পড়ুন: টেকনোর শিক্ষক-পড়ুয়াদের কামাল, গৃহস্থের ফেলে দেওয়া সামগ্রীতে তৈরি দেবী দুর্গার প্রতিমা]
সে সময়ই নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) ‘বিশ্বনায়ক’ তত্ত্বের ছায়ায় সংঘচালক বলেন, ভারতকে গোটা বিশ্বের কাছের আদর্শ হিসাবে গড়ে তুলতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে দায়িত্ব নিতে হবে। সেভাবেই স্বয়ংসেবকদের তৈরি করতে হবে। দেশ ও সমাজকে গড়ে তুলতে হবে। সব মিলিয়ে হিন্দুত্বের চেনা লাইনেই এদিন ভাষণ দেন আরএসএস নেতা। যদিও সাতদিন আগে মুসলিমদের সঙ্গে তার ‘শান্তি বৈঠক’কে নরমপন্থি মনোভাব বলে মনে করা হচ্ছিল। ওই বৈঠকের পরে ভাগবতকে ‘রাষ্ট্রপিতা’ বলে উল্লেখ করেন ইলিয়াসি। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের আলোচনা, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ তৈরি করবে। যদিও মুসলিম সমাজে ওই বৈঠকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়। মুসলিমদের একটি অংশ মনে করে, ভাগবতের সৌজন্য বৈঠক আসলে ভাওতা। কারণ আরএসএস এবং সহদর বিজেপি নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুল সরেনি। যদিও গেরুয়া শিবিরের একটি অংশের যুক্তি, সৌজন্য বৈঠক ও হিন্দু রাষ্ট্রের বার্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব নেই। কারণ আরএসএস বরাবর মনে করে সমস্ত ভারতীয় আদতে হিন্দু।
যখন কলকাতায় এসে হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার ডাক দিচ্ছেন ভাগবত, তখনই মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’কে নিষিদ্ধ করেছে মোদি সরকার। শয়ে শয়ে পিএফআই সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সব মিলিয়ে চাপানউতর শুরু হয়েছে। অনেকেরই বক্তব্য, আরএসএস আর পিএফআই আসলে মুদ্রার এপিঠ। গেরুয়া শিবিরের বিরোধীদের আরও এককদম এগিয়ে বলেছেন, পিএফআইকে নিষিদ্ধ করলে আরএসএসকেও নিষিদ্ধ করা উচিত। এই বিষয়ে বিতর্ক বাড়িয়েছেন কংগ্রেস নেতা কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং।
[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতি: সাদা খাতা জমা দিয়েও প্রাপ্ত নম্বর ৫০-৫২! SSC-র নম্বর কারসাজিতে স্তম্ভিত বিচারপতি]
গতকাল কংগ্রেস নেতা মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’কে সঙ্গে আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তুলনা করেন। তাঁর দাবি, আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ পিএফআইয়ের মতোই মৌলবাদী এবং উগ্র। তাই PFI-এর বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।