সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়েছিল ৩ বছর আগে। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তা সারাইয়ের সময় ৬০ কেজি আইইডি বিস্ফোরক পুঁতে রেখেছিল মাওবাদীরা। রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে তাতেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয় দূর থেকে। গত সোমবার ছত্তিশগড়ের বিজাপুরের কুটরু রোডে ভয়ংকর মাওবাদী হামলা ও ৯ জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকাশ্যে আসছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সংবাদ মাধ্যম দৈনিক ভাস্করে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুটরু থেকে বেদরে যাওয়ার জন্য এই রাস্তা তৈরি হয়েছিল ১০ বছর আগে। তিন বছর আগে প্রবল বৃষ্টির জেরে এই রাস্তা ও পুল জলের তোড়ে ভেসে যায়। এরপর ওই রাস্তা সারাইয়ের সময় মাটির নিচে আইইডি পুঁতে রাখে মাওবাদীরা। স্থানীয়দের দাবি, তিন-চার বছর আগে ওই রাস্তা সারাইয়ের সময় বহু জায়গায় এভাবে বিস্ফোরক পুঁতে রাখে মাওবাদীরা। সাধারণত মাও অধ্যুষিত এইসব অঞ্চলে রাস্তা নির্মাণ ও সারাইয়ের সময় সেখানে উপস্থিত থাকে আধাসেনা। তারপরও কোনওভাবে ওই বিস্ফোরক লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয় আততায়ীরা। তাতেই ঘটানো হয় বিস্ফোরণ।
উল্লেখ্য, গত ৪ জানুয়ারি অবুধমাড়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে গিয়েছিল নায়ারণপুর, বস্তার, ও দান্তেওয়াড়ার এসটিএফ ও ডিআরজির টিম। সেই অভিযানে ৫ মাওবাদীকে খতম করে ফিরছিল নিরাপত্তাবাহিনী। কোন রাস্তা দিয়ে জওয়ানরা ফিরবে তা আগে থেকেই জানত মাওবাদীরা। সেইমতো প্রস্তুতি নিয়ে ছিল। দান্তেওয়াড়ার টিমের ১২ টি গাড়ি ওই রাস্তা দিয়ে ফেরার সময় ১১ নম্বর গাড়িটিকে টার্গেট করা হয়। নির্দিষ্ট জায়গায় জাওয়ানদের গাড়ি আসার পর দূর থেকে রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। বিস্ফোরণের তিব্রতা এতটাই ছিল যে ১০ ফুটের গর্ত তৈরি হয় ওই জায়গায়। ঘটনাস্থল থেকে ৫০০ মিটার দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে জওয়ানদের শরীরের অংশ। ঘটনাস্থলেই গাড়ির চালক-সহ ৯ জনের মৃত্যু হয়। চালকের দেহ এমনভাবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয় যে শরীরের সব অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তদন্তে জানা যাচ্ছে, ওই কনভয়ে অন্যান্য আধাসেনার জওয়ানদের গাড়ি থাকলেও ১১ নম্বর গাড়িতে থাকা 'ডিসট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড' বা ডিআরজির গাড়ি টার্গেট করে হামলা চলে। গত কয়েক বছরে এই ডিআরজি মাওবাদীদের কাছে সবচেয়ে বেশি মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে। মাও অধ্যুষিত জেলা থেকেই এই জওয়ানদের নিয়োগ করা হয়। এবং আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীরা এই টিমের সদস্য হন। যে অঞ্চলে অভিযান চলে সেখানে সেই জেলার জওয়ানরা উপস্থিত থাকেন। এতে অভিযান চালাতে অনেক সুবিধা হয়। কারণ নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষের ভাষা, সেখানকার ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকেন ডিআরজি সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, মাওবাদকে দেশ থেকে নির্মুল করতে কোমর বেঁধে নেমেছে কেন্দ্র। সম্প্রতি এই বিষয়ে বার্তা দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি, লড়াই এখন শেষ পর্যায়ে। চূড়ান্ত হামলার সময় এসেছে। ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে আমরা দেশ থেকে মাওবাদ নির্মূল করব।’’ তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করলেও পরিস্থিতি যে এতটাও সহজ নয়, তা এই হামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এভাবে নিখুঁত এবং ভয়ংকর হামলা মাওবাদী চিন্তা বাড়াচ্ছে সরকারের।