নন্দিতা রায় ও সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন না। তাই প্রতিশ্রুতি দিয়েও দেখা করলেন না কেন্দ্রীয় গ্রামন্নোয়ন মন্ত্রী। রাজ্যের বকেয়া মেটানোর দাবিতে দিল্লিতে গিয়ে গিরিরাজ সিংয়ের (Giriraj Singh) সাক্ষাৎ না পেয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির বুকে দাঁড়িয়ে অভিষেকের হুঙ্কার, “এভাবে রাজ্যের ন্যায্য পাওনা আটকে রাখা যায় না। আর ২-৩ মাসের মধ্যে টাকা না দিলে লক্ষ লক্ষ বঞ্চিতদের নিয়ে দিল্লি ঘেরাও করব।”
১০০ দিনের কাজ অর্থাৎ মনরেগা প্রকল্পে কেন্দ্রীয় গ্রামন্নোয়ন মন্ত্রকের কাছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা পাওনা রাজ্যের। গত প্রায় আড়াই বছর ধরে রাজ্যে ১০০ দিনের কাছে বেনিয়মের অভিযোগ তুলে এই টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এই বকেয়া মেটানোর দাবি তুলেছেন। কেন্দ্রীয় গ্রামন্নোয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি। কিন্ত লাভের লাভ কিছু হয়নি। একপ্রকার বাধ্য হয়েই এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের লোকসভা এবং রাজ্যসভার সাংসদরা কৃষি ভবন অভিযান করেন।
[আরও পড়ুন: নগ্ন ছবি পর্নসাইটে ছড়ানোর হুমকি! ‘শিবপুর’ সিনেমার প্রযোজকের মেল প্রকাশ করলেন স্বস্তিকা]
দিন সাতেক আগেই গিরিরাজ সিংয়ের কাছে মঙ্গলবারেরবুধবারের সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। এরাজ্যের শাসকদলের দাবি, দেখা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন গিরিরাজ। কিন্তু এদিন হঠাত করেই দিল্লি থেকে উধাও হয়ে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এমনকী গ্রামন্নোয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন না মন্ত্রকে। মন্ত্রীদের অনুপস্থিতিতেই কৃষি ভবন অভিযান করেন তৃণমূল সাংসদরা। প্রাথমিকভাবে কৃষিভবনের মূল ফটক বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। নিরাপত্তারক্ষীদের তরফে জানানো হয়, যেহেতু মন্ত্রীর সময় পাওয়া যায়নি তাই সাংসদদের ভিতরে যাওয়ার অনুমতি নেই। পালটা তৃণমূলের দাবি, দাবিদাওয়া জানিয়ে চিঠি দিতে ভিতরে যেতে চান তাঁরা। মন্ত্রী না থাকলে প্রতিমন্ত্রী বা সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান। সাংসদদের এভাবে আটকানো যায় না। এরপর কৃষিভবনের ভিতরে ঢোকেন তাঁরা। মন্ত্রীরা না থাকায় সচিবকেই স্মারকলিপি দেন।
[আরও পড়ুন: সৌদির স্কুলে রোনাল্ডোর সন্তানরা কি মারধর, হয়রানির শিকার? মুখ খুললেন জর্জিনা]
বৈঠক সেরে কেন্দ্রের মোদি (Narendra Modi) সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন অভিষেক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এভাবে সাধারণ মানুষের ন্যায্য পাওনা আটকে রাখা যায় না। প্রায় আড়াই বছর হতে চলল। আর অপেক্ষা নয়। আপনারা বলছেন, বেনিয়ম আছে। বেশ মেনে নিলাম বেনিয়ম আছে। কিন্তু সেটা কটা ক্ষেত্রে? যে যে ক্ষেত্রে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সেগুলির তদন্ত হোক। বাকি টাকা ছেড়ে দেওয়া হোক।” অভিষেক জানিয়েছেন, সব মিলিয়ে ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার গরিব মানুষের টাকা আটকে। সেটা কেন আটকে রাখা হচ্ছে তার কোনও সদুত্তর নেই কেন্দ্রের কাছে। তাঁর অভিযোগ,”আমাদের কথার জবাব দিতে পারবেন না বলেই মন্ত্রী আজ দেখা করেননি। ওদের যদি মনে হয় বেনিয়ম হয়েছে, তাহলে সেটা প্রমাণ করুক। দরকার হলে সিবিআই ডাকুক। আর বেনিয়ম তো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতেও হাজার হাজার হচ্ছে। চাইলে আমরা সে তালিকাও দিতে পারি। কিন্তু বাংলা ছাড়া আর কারও টাকা আটকানো হয়নি।” এরপরই কেন্দ্রকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর কথায়,”আগেরবার ৯ মাস অপেক্ষা করেছি। আর নয়। ১০-১২ দিনের মধ্যে বৈঠক ডাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সচিব। ২-৩ মাসের মধ্যে টাকা না দিলে লক্ষ লক্ষ বঞ্চিতদের নিয়ে দিল্লি ঘেরাও করব।”