সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্থায়ী সরকার নাকি মিলিজুলি সরকার। দেশের উন্নয়নে বেশি অবদান কার? এ নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। এতদিন মোদি নিজেই জোট সরকারকে কটাক্ষ করতেন। এবার 'আত্মনির্ভর ভারতে'র প্রধানমন্ত্রী মোদিই জোট সরকারের উপর নির্ভরশীল।
কেন্দ্রে প্রথমবার সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। এর আগে দুবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদি সরকার চালিয়েছেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে। স্বাভাবিকভাবেই ওই ১০ বছর নরেন্দ্র মোদি নিজের 'মজবুত সরকার' নিয়ে রীতিমতো বড়াই করতেন। এমনকী 'মিলিজুলি সরকার' ছেড়ে দেশ যে শক্তিশালী সরকার গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে, সেজন্য বহুবার দেশবাসীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন মোদি। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। দেশের 'শক্তিশালী' এবং 'যশস্বী' প্রধানমন্ত্রীকে এবার সরকার চালাতে হবে শরিকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে। অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন, এতদিন মোদি যেভাবে সরকার চালিয়ে আসছেন তাতে তাঁর পক্ষে জোট সরকার চালানো কঠিন। এমনকী মুডিজের মতো রেটিং সংস্থাও স্বীকার করে নিচ্ছে, মোদি ৩.০-র সময় দেশের উন্নয়নের গতি স্লথ হবে।
[আরও পড়ুন: শপথ গ্রহণের আগে মোদির ‘চায়ে পে চর্চা’, সম্ভাব্য মন্ত্রী কারা?]
কিন্তু বাস্তব বলছে, এদেশে 'স্থায়ী' এবং 'শক্তিশালী' সরকার অর্থনৈতিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যতটা সাহায্য করেছে, তার চেয়ে বরং দেশের আর্থিক উন্নতিতে অবদান বেশি জোট সরকারেরই। হিসাব বলছে, ১৯৫২ থেকে ১৮৮৯ পর্যন্ত অর্থাৎ ভারতের আর্থিক অগ্রগতির প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার গড়ে ছিল ৪ শতাংশ। ওই সময় কংগ্রেস (Congress) কার্যত গোটা দেশে একচেটিয়া আধিপত্যে সরকার চালিয়েছে। মোটামুটি ভাবে এদেশে জোট রাজনীতির সূত্রপাত হয় নয়ের দশক থেকে। এর মাঝে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোনও সরকার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ওই সময়কালে দেবেগৌড়া, চন্দ্রশেখররা চরম 'অস্থির' সরকার চালিয়েছেন। অথচ, হিসাবে বলছে নয়ের দশক থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশের বৃদ্ধির হার ছিল ৫.৮ শতাংশ। এবার আসা যাক ২০১৪ সালের পর থেকে মোদি সরকারের গত ১০ বছরের আর্থিক বৃদ্ধিতে। হিসাব বলছে মোদি জমানায় গত ১০ বছরে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫.১ শতাংশ। প্রশ্ন, হল তাহলে স্থায়ী মজবুত সরকারে আর্থিকভাবে কোথায় লাভবান হল দেশ? প্রশ্ন আরও আছে। জোট সরকারের আমলে আর্থিক উদারীকরণ, গ্রামীণ রোজকার গ্যারান্টি, স্বর্ণ জয়ন্তী গ্রাম স্বরোজগারের মতো ঐতিহাসিক এবং উপযোগী আইন পাশ হয়েছে। সেখানে শক্তিশালী মোদি সরকারের আমলে নোট বাতিলের মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে, যা নিয়ে এখনও বিতর্ক চলছে। এমনকী বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয় জিএসটিও (GST)।
[আরও পড়ুন: মোদির শপথে চাঁদের হাট, থাকবেন মুইজ্জু,হাসিনা-সহ ৭ রাষ্ট্রপ্রধান, রইল পূর্ণাঙ্গ তালিকা]
যদিও এর পালটা একটা যুক্তিও রয়েছে। অনেকেই মনে করেন স্বাধীনতার পর প্রথম ৩০-৩৫ বছর দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৪ শতাংশ থাকাটাও বড় সাফল্য। কারণ, ওই সময় নতুন করে পথচলা শুরু করে একটা দেশের পক্ষে খুব দ্রুত গতিতে এগোনো সম্ভব ছিল না। প্রথম ৩০ বছরে দেশের সরকারগুলির মূল উদ্দেশ্য ছিল আর্থিক স্থায়িত্ব তৈরি করা। আবার মোদি সরকারের আমলে করোনার মতো মহামারীর মোকাবিলা করতে হয়েছে। আবার রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই গত দশ বছরে খানিক মন্থর হয়েছে অর্থনীতির গতি। সেক্ষেত্রে আরেকটা কথাও বলতে হয়, জোট সরকারের আমলেও কিন্তু লাইসেন্স রাজ, বৈশ্বিক মন্দা সামলাতে হয়েছে। সেটাও ভারত সফলভাবে সামলেছে।