সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বঙ্গ বিজেপির অন্দরের টানাপোড়েনে এই মুহূর্তে শুভেন্দু-সুকান্তর লবিই যে বেশি শক্তিশালী, সেটা একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গেল শুক্রবার। একদিকে যেখানে দুর্গাপুরে শুভেন্দু অধিকারী এবং সুকান্ত মজুমদারদের সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পাশে স্বমহিমায় আসীন হতে দেখা গেল, তখন দিল্লিতে দিলীপের মুখে একপ্রকার লাগাম পরানোর চেষ্টা করল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রীর সভায় দিলীপ ঘোষ ডাক পান কিনা, সে নিয়ে দীর্ঘদিন বঙ্গ বিজেপির অন্দরে টানাপোড়েন চলেছে। শেষমেশ মোদির সভায় ডাকা হয়নি দিলীপকে। একটা সময় তিনি গোঁ ধরে বসেছিলেন দল যদি মঞ্চে জায়গা না দেয়, তাহলে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে বসেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনবেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য সেই পণ থেকে সরে দিল্লি চলে যান দিলীপ। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি ছিল, দিলীপবাবুকে হাই কম্যান্ডই ডেকে পাঠিয়েছে। কিন্তু শুক্রবার সকালে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বাড়িতে গিয়েও তাঁর দেখা পাননি মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদ।
বিকালে ফের নাড্ডার বাড়ি যান তিনি। ঘণ্টাখানেক দিলীপের সঙ্গে কথা হয় বিজেপি সভাপতির। কিন্তু সেই কথোপকথন দিলীপের জন্য খুব একটা উর্বর হয়নি বলেই সূত্রের খবর। শোনা যাচ্ছে, ঘণ্টাখানেকের বৈঠকে দিলীপকে সমঝে দেওয়া হয়েছে তিনি যেভাবে বারবার সংবাদমাধ্যমে বেফাঁস মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলছেন, সেটা বরদাস্ত করা হবে না। সংবাদমাধ্যমে আরও সংযত থাকতে হবে। গত কয়েকমাসে দিলীপের একাধিক কর্মকাণ্ডে দল যে বিরক্ত সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের দাবি। এর মধ্যে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে গিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। একুশের মঞ্চে থাকবেন না, জোর গলায় বলেননি। তাতে রীতিমতো আপত্তি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিলীপ প্রকাশ্যে অবশ্য ওই বৈঠক নিয়ে বিশেষ কিছু বলেননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, 'ঘণ্টাখানেক কথা হল, অনেক গল্প হয়েছে।'
বস্তুত, লোকসভা ভোটের পর থেকে বিজেপির অন্দরে ক্রমশই কোণঠাসা হচ্ছেন দিলীপ। এই মুহূর্তে তাঁর কোনও সাংগঠনিক পদ নেই। কোনওরকম সরকারি পদেও তিনি নেই। দলের পাওয়ার স্ট্রাগলেও ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন সেটা শুক্রবার একপ্রকার স্পষ্ট হয়ে গেল। যেখানে শুভেন্দু-সুকান্তরা মোদির পাশে বসে লাইম লাইট কুড়োলেন, সেখানে দলের অন্যতম 'সফল' রাজ্য সভাপতিকে কার্যত আরও অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হল। শমীক ভট্টাচার্য রাজ্য সভাপতি হয়ে আসার পর তাঁর পুনরুজ্জীবনের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সেটার আপাতত সলিলসমাধি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
