সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধোঁয়াশা ও দূষণে দমবন্ধ পরিস্থিতি দিল্লির। দিওয়ালির সময় থেকে সেই যে বাতাসে দূষিত কণার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে পরিস্থিতি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। দীপাবলির পর থেকে ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। এবার, একের পর এক কড়া পদক্ষেপ করতে শুরু করল প্রশাসন। দিল্লি সরকার কঠোর দূষণ বিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে বিএস - ছয় (BS-VI) ইঞ্জিন নেই এমন গাড়িকে দিল্লিতে প্রবেশ করতে দেবে না। পেট্রোল পাম্পগুলিকে জানানো হয়েছে দূষণ সংক্রান্ত সার্টিফিকেট ছাড়া কোনও গাড়িকে জ্বালানী না দিতে।
জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র বিএস - ছয় (BS-VI) ইঞ্জিন রয়েছে এমন গাড়িগুলিকে দিল্লিতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। এরফলে গুরুগ্রাম, গাজিয়াবাদ, ফরিদাবাদ এবং নয়ডা থেকে আশা প্রায় ১২ লক্ষ্য গাড়ি দিল্লিতে ঢুকতে পারবে না। নয়ডা থেকে ৪ লক্ষেরও বেশি, গুরগাঁও থেকে ২ লক্ষ এবং গাজিয়াবাদ থেকে আসা ৫.৫ লক্ষ গাড়ির দিল্লিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে। গাড়িগুলিতে তল্লাশির জন্য ৫৮০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি, ১২৬টি চেকপয়েন্টে ৩৭টি এনফোর্সমেন্ট ভ্যান মোতায়েন করা হবে। পরিবহন বিভাগ, পুর কর্পোরেশন এবং খাদ্য বিভাগের কর্মীদের পেট্রোল পাম্পগুলিতে দায়িত্ব দেওয়া হবে।
দিল্লির পেট্রোল পাম্পগুলিতে ইতিমধ্যেই স্বয়ংক্রিয় নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এর ফলে বৈধ পিইউসি সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি শনাক্ত হবে সহজে। মঙ্গলবার দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মনজিন্দর সিং সিরসা এই ঘোষণা করেন। দিল্লিতে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের (GRAP) চতুর্থ পর্যায় কার্যকর থাকাকালীন এই ব্যবস্থা বহাল থাকবে। শীতকালে বাতাসে পিএম ১০ এর ১৯.৭ শতাংশ এবং পিএম ২.৫ এর ২৫.১ শতাংশ দূষণের জন্য এই গাড়িগুলি দায়ী বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে।
দিল্লির প্রায় ১০০ হটস্পটে যানবাহনের ভিড় কমানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। এর মাধ্যনে সিগনালে গাড়ির চাপ এবং দূষণ কমবে।
নভেম্বর মাস থেকে দিল্লির বায়ু মানের সূচক 'গুরুতর' এবং 'অত্যন্ত খারাপ' এর মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বুধবার বিকেল ৪টে পর্যন্ত, শহরের ২৪ ঘন্টার গড় AQI ছিল ৩৩৪, যা 'অত্যন্ত খারাপ' বিভাগের মধ্যে পরে। যদিও, এই পরিসংখ্যান মঙ্গলবারের তুলনায় ভাল। মঙ্গলবার এই মাত্রা ছিল ৩৫৪।
প্রসঙ্গত, দীপাবলির পর থেকেই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে দিল্লির বাতাস। তাই 'ক্লাউড সিডিং'-এর ব্যবস্থা করেছিল দিল্লি সরকার। সম্প্রতি তার ট্রায়ালও হয়। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে না-হওয়ার-মতো। অথচ ইতিমধ্যেই তিনটি ব্যর্থ ট্রায়াল বাবদ প্রায় ১.০৭ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লাভের লাভ কিছু হয়নি। বরং লাফিয়ে বেড়েছে দূষণ। প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ও বিজেপি নেত্রী কিরণ বেদি কয়েকদিন আগেই দাবি করেন, রাজধানীর বর্তমান পরিস্থিতি কোভিডের সঙ্গে তুলনীয়! এরপরেই প্রশ্ন উঠছে এই ব্যবস্থা কিভাবে কার্যকর হবে দিল্লি মত শহরে। বাইরে থেকে আসা গাড়ি আটকালেও দিল্লির অন্দরে থাকা গাড়িতে কিভাবে কারজকর হবে এই ব্যবস্থা সেই প্রশ্ন করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর পাশাপাশি যমুনার জল শোধন বা পাশের পাঞ্জাব এবং হরিয়ানায় খর পোড়ানো বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ না নিয়ে গাড়ি আটকানো কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বিশেষত, দিপাবলীর সময় বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেকেই।
