সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রায় নায়কের সম্মান পাচ্ছিলেন তিনি। দেশবাসী কুর্নিশ জানাচ্ছিলেন তাঁকে। যে চিকিৎসক শিশুদের বাঁচাতে, অক্সিজেন জোগাড় করতে লড়াই করেন তাঁকে সম্মান না জানিয়ে কী উপায়। হয়তো সকলকে বাঁচাতে পারেননি, তবু অনেকের প্রাণ তো রক্ষা হয়েছিল। তো এ কাজের বিনিময়ে প্রশাসনের পক্ষে তিনি কী পুরস্কার পেলেন? ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নিজের পদ থেকে বরখাস্ত হলেন ডাঃ কাফিল খান।
[ অক্সিজেনের অভাবে শিশুমৃত্যু রুখতে রাতভর লড়াই এই ডাক্তারের ]
উত্তরপ্রদেশের বাবা রাঘবদাস মেডিক্যাল কলেজের এনসেফালাইটিস বিভাগের প্রধান ছিলেন তিনি। এ হাসপাতালেই ঘটেছে বিপর্যয়। ঢল নেমেছে শিশুমৃত্যুর। অক্সিজেনের অভাবে অকালে ঝরে গিয়েছে শিশুরা। তবে সে রাতে এই চিকিৎসকের কাজেই খানিকটা হলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। রাত দু’টো নাগাদ হাসপাতালের কর্মীরা এসে ডাক্তার কাফিল খানকে জানান, হাসপাতালের অক্সিজেন ফুরিয়ে এসেছে। যেটুকু অক্সিজেন রয়েছে, তাতে বড়জোর আর এক ঘণ্টা সরবরাহ অব্যাহত রাখা যাবে। এই কথা শুনে এক মুহূর্তও দেরি করেননি ডাক্তার কাফিল। বুঝতে পারেন, এত রাতে সরকারি নিয়মকানুন মেনে অক্সিজেন পেতে দেরি হয়ে যাবে। তাই তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক বন্ধুদের ফোন করে ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে আনেন হাসপাতালে। ফোন করেন ‘স্বশস্ত্র সীমা বল’-এর ডিআইজিকেও। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সেখান থেকে জোগাড় করা হয় ১০টি সিলিন্ডার।কিন্তু মাত্র ২২টি অক্সিজেন সিলিন্ডারে আর কতক্ষণ যমে-মানুষে টানাটানি আটকানো যায়? তবু লড়াই থামাননি ডাক্তার কাফিল ও অন্যান্য জুনিয়র ডাক্তাররা। জেলার এক সিনিয়র ডাক্তারের কাছ থেকে ছ’টি অতিরিক্ত সিলিন্ডার আনানো হয় সকালে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী নগদ টাকার বিনিময়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিতে রাজি হলে ডাক্তার কাফিল তাঁর এটিএম কার্ড দিয়ে দেন ওই ব্যবসায়ীকে। ট্রাকে করে আনা হয় বাড়তি অক্সিজেন সিলিন্ডার। তার ভাড়াও মেটান ওই চিকিৎসকই। ফোন যায় জেলার অন্যান্য হাসপাতালে। কিন্তু এত লড়াই করেও শিশুদের মৃত্যু আটকানো যায়নি। তবে সংখ্যাটা যে অনেকটাই কমিয়ে আনা গিয়েছে, সে কথা স্বীকার করছেন হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকরা।
[ পরিদর্শনে যোগী, হাসপাতাল থেকে সরতে হল অসুস্থ শিশুদের ]
কিন্তু নায়কের মতো অসমসাহসে যিনি শিশুদের প্রাণরক্ষা করলেন, তিনিও প্রশাসনের কোপ থেকে বাঁচলেন না। নোডাল অফিসারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। বিআরডি-র প্রিন্সিপালেরও পদ থেকে সরানো হয়েছে। সেই সঙ্গে কোপ পড়েছে কাফিল খানের উপরও।
যদিও তাঁর উপর এই সাজার খাঁড়া নেমে আসায় তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে গোটা দেশে।
The post শিশুদের বাঁচাতে প্রাণপণ লড়াই করেও বরখাস্ত চিকিৎসক কাফিল খান appeared first on Sangbad Pratidin.
