সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: আইআইটি-বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণধর্ষণে জড়িতদের ছবি দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi), বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার (JP Nadda) সঙ্গেও। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গেও অভিযুক্তদের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়। অভিযোগ ওঠার দু’মাস পর পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই বিতর্কে এবার সুর চড়াল তৃণমূল কংগ্রেস।
সদ্য সাংসদ পদ থেকে সাসপেন্ড হওয়া মহুয়া মৈত্র (Mohua Moitra) মঙ্গলবার সরাসরি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন করেছেন, “আইআইটি-বিএইচইউ-এর এক ছাত্রীকে গণধর্ষণে ভারতীয় জনতা পার্টির স্থানীয় নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ হয়েছে। এবার বুলডোজার চালাতে কত সময় লাগবে?” যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে অভিযুক্তদের ছবি শেয়ার করে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে এই প্রশ্ন তোলেন তিনি। পাশাপাশি, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ডাঃ শশী পাঁজা (Shasi Panja) এই অপরাধকে ‘ঘৃণ্যতম’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন, “ঘটনাটি ২ নভেম্বর ঘটেছিল। অপরাধীদের ৫ নভেম্বর ছাত্রদের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর গ্রেপ্তার করতে এত সময় লাগল?” তিনি আরও বলেন, “চরম অসম্মানজনক! আইআইটি বিএইচইউ নৃশংস গণধর্ষণ মামলায় নিজেদের দলের আইটি সেল সদস্যদের গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও বিজেপির কোনও হেলদোল নেই। তৃণমূল বিজেপির কাছে উত্তর চায়, কেন আপনারা নিজেদের লোকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না? বঙ্গ বিজেপির সহ-ইনচার্জ এবং বারবার ভুয়া খবরের ফেরিওয়ালা অমিত মালব্য এখন কেন চুপ?”
[আরও পড়ুন: স্বরাষ্ট্রসচিব পদে নন্দিনীর নিয়োগকে ‘অবৈধ’ বলছেন শুভেন্দু, ‘ওর গা জ্বলছে’, পালটা কুণালের]
মুখ্যমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর যোগী আদিত্যনাথ বলেছিলেন, “কেউ অপরাধ করলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে।” তাঁর ‘ঠোক দো’ নীতি মেনে গত তিন বছরে রাজ্যে অনেক অপরাধীর বিরুদ্ধে ‘এনকাউন্টার’ করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহুয়া মৈত্র তাই লিখেছেন, ‘ঠোক দিজিয়ে, স্যর। ইস বার বুলডোজার চালানে মে ইতনি দের কিঁয়ু?” পাশাপাশি, তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিজেপি নেতৃত্ব এবং আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য কেন কোনও পদক্ষেপ করেননি, তাও জানতে চেয়েছে তৃণমূল। দলের তরফে বলা হয়েছে, বিজেপির আইটি সেলের সদস্য হওয়ার পাশাপাশি, কুণাল পাণ্ডে, সাক্ষম প্যাটেল এবং আনন্দ ওরফে অভিষেক চৌহ্বান, তিন অভিযুক্ত ধর্ষকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, বিজেপির জাতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবি, বিজেপির সঙ্গে তাদের গভীর সম্পর্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। শশী পাঁজার দাবি, “উত্তরপ্রদেশ নারী ও ধর্ষণ সংক্রান্ত অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তারা সম্পূর্ণরূপে নীরব থাকে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এই বিষয়ে কী বলবেন অমিত মালব্য? অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে? তারা কি ধর্ষকদেরও গোপনে সরিয়ে দিয়েছে? এই প্রশ্নগুলি থেকে যায়…এই ঘটনাটি ঘটেছে বিএইচইউতে, যা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী এলাকা। তারা কেন এ বিষয়ে কথা বলবে না? এই বিষয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং বিজেপির কী বলার আছে? অপরাধীরা যখন বিজেপির নিজেদেরই লোক হয়, তখন তাদের এই পক্ষপাতিত্বের জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “বিজেপির আইটি সেলের জাতীয় ইনচার্জ অমিত মালব্য এখনও কেন নীরব? যারা বিজেপির বিরোধিতা করে তাদের বিরুদ্ধে তিনি দ্রুত টুইট করেন। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কেন নীরব? কেন তিনি টুইট করে এই ঘটনার নিন্দা করছেন না? তারা সবাই এখন নীরব? বহুল আলোচিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের হল কী?”
[আরও পড়ুন: ভয়ংকর দুর্ঘটনা অসমে, বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত অন্তত ১৪]
শশী পাঁজা, জাতীয় মহিলা কমিশনের (NCW) চেয়ারপার্সনের পক্ষপাতমূলক নীরবতার দিকে ইঙ্গিত করেও বলেছেন, যিনি বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে যাচাই না করেই রিপোর্ট করা ঘটনাগুলির বিষয়ে একটু বেশিই সক্রিয় হয়ে ওঠেন, এ বিষয়ে তিনিও নিশ্চুপ। “NCW-এর প্রধান যেমন মণিপুরেও হস্তক্ষেপ করেননি ঠিক একইভাবে এই বিষয়ও কোনও ব্যবস্থা নেননি। কিন্তু বাংলায়, সবসময় আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে হস্তক্ষেপ করেই চলেছেন,” তিনি বলেছেন। যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাঁদের একজন কুণাল পাণ্ডে, তার ফেসবুক পেজে নিজেকে বিজেপি আইটি সেলের কনভেনর হিসাবে পরিচয় দিয়েছে। পাণ্ডে, সুন্দরপুর এলাকার বারাণসীর ব্রিজ এনক্লেভের স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর মদন মোহন তিওয়ারির জামাতাও। দ্বিতীয় অভিযুক্ত সক্ষম প্যাটেল সোশাল মিডিয়া প্রোফাইল অনুসারে বিজেপি বারাণসী সিটি ইউনিটের আইটি সেলের-সহ কনভেনর, আবার তৃতীয় অভিযুক্ত আনন্দ চৌহান একই ইউনিটের ওয়ার্কিং কমিটির অংশ ছিল।