নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: কখনও পড়লেন কবিতা। কখনও বা শোনালেন নিজের জীবনের আক্ষেপের কথা। তুললেন পূর্বসূরি জওহরলাল নেহরুর লেখা তথাকথিত চিঠির প্রসঙ্গও। বুধবার বাজেট অধিবেশনে (Budget Session) জবাবি ভাষণে নানা তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর যাবতীয় মন্তব্যেই ফুটে উঠছিল ‘কংগ্রেসের ব্যর্থতা’র খতিয়ান। কীভাবে কংগ্রেস সরকারের আমলে দেশের ক্ষতি হয়েছিল, গুজরাটের সঙ্গে কীভাবে বৈমাত্রেয়সুলভ আচরণ ছিল তৎকালীন দিল্লি দরবারের, সংসদে প্রায় দেড় ঘণ্টার ভাষণে সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরলেন মোদি (Narendra Modi)।
এদিন ভাষণের মধ্যেই একটি কবিতা পড়ে শোনান মোদি। রাহুল গান্ধীর ‘ভালোবাসার দোকান’কে ফুরিয়ে যাওয়ার গ্যারান্টির দোকান বলে কটাক্ষ করেন নমো। সাফ বলেন, “এখন তো একজন সংসদে নেই। তাই বিনোদন একটু কম হচ্ছে।” দলের যুবরাজ হিসাবে কংগ্রেস একজনকে তুলে ধরতে চাইছে, কিন্তু সে তো কিছু করেই না।”
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কীভাবে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের বিরোধিতা সহ্য করতে হয়েছে সেই বিষয়ও উঠে আসে মোদির ভাষণে। মনমোহন সিংয়ের তৎকালীন ইউপিএ সরকারকে একহাত নিয়ে তিনি সাফ বলেন, “প্রাকৃতির বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল গুজরাট। আমি প্রধানমন্ত্রী মহাশয়কে বারবার পরিদর্শনে আসার অনুরোধ করলেও তিনি কান দেননি। বলা হয় বিমান থেকেই পরিস্থিতির খতিয়ান নিয়ে নেওয়া হবে।” মোদি আরও বলেন, সেসময় অনেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই নাকি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইতেন না, পাছে সেই ছবি কেউ দেখে ফেলে।
পিএসইউ বা সরকারি সংস্থাগুলোকে নিয়ে কংগ্রেস ভুল তথ্য দিচ্ছে এবং বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলেও তোপ দেগেছেন মোদি। ভাষণে তিনি বলেন, পিএসইউগুলোকে নিয়ে অপপ্রচার চালাত কংগ্রেস। কিন্তু এখন বিনিয়োগকারীরা ভরসা করছেন পিএসইউয়ের উপরে। বেড়েছে এলআইসির শেয়ার। দুরাবস্থা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে হ্যাল।” মোদি আরও মনে করিয়ে দেন, কংগ্রেসের আমলেই বিএসএনএল, এমটিএনএলের মতো সংস্থাগুলোর ভরাডুবি হয়েছে। তবে তাঁর আমলে ৪জি-৫জি পরিষেবা দিতে সক্ষম সেই রুগ্ণ বিএসএনএল।
[আরও পড়ুন: ‘হিমালয় যদি বলে জল দেব না’, কংগ্রেসের ‘প্রাদেশিকতা’কে তোপ দেগে ‘অখণ্ড ভারতে’র বার্তা মোদির]
কংগ্রেসকে ব্রিটিশের ‘পা চাটা’ দল বলেও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের ধাঁচে ইন্ডিয়ান পেনাল কোড চালু করা থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সঙ্গে সময় মিলিয়ে বিকেলবেলা বাজেট পেশ করা হত বলে হাত শিবিরকে নিশানা করেন। মনে করিয়ে দেন, কংগ্রেস তো তৈরিই হয়েছে এক ব্রিটিশের হাতে।
ভাষণ দিতে গিয়ে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা জওহরলাল নেহরুর একটি চিঠির প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মোদি। সেই চিঠির অনুবাদ পাঠ করেন। দাবি করেন, দেশের অনগ্রসর মানুষের কথা ভাবতে বা চাকরিতে সংরক্ষণ দিতে একেবারেই রাজি ছিলেন না নেহরু। কারণ, তেমনটা হলে কাজের মান পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর। রাজনৈতিক বিশ্লেছকদের মতে, জাত গণনা তথা সংরক্ষণ নিয়ে কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের পালটা দিয়ে ‘পিছিয়ে পড়া’ তথা আদিবাসীদের ভোট বাতে রাখতেই এই তাস কাজে লাগালেন মোদি।
দেশকে উত্তর-দক্ষিণে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছে কংগ্রেস (Congress), এই অভিযোগও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। কয়েকদিন আগে কর্নাটকের কংগ্রেস সাংসদ ডি কে সুরেশ বলেছিলেন, এবারে পৃথক রাষ্ট্রের দাবিতে সুর চড়াবে দক্ষিণের রাজ্যগুলো। সেই মন্তব্য টেনেই মোদির তোপ, দেশকে ভেঙে ফেলাই হাত শিবিরের অন্যতম লক্ষ্য।
কংগ্রেস নেতৃত্বের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই ভারতের বিশাল জমি চলে গিয়েছে শত্রুদের হাতে। সংসদে দাঁড়িয়ে সাফ এই কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। হাত শিবিরকে বিঁধে মোদির দাবি, ভারতীয় সেনার আধুনিকীকরণ করতেও বাধা দিয়েছে আগের সরকার। তার জেরে প্রশ্নের মুখে পড়েছে দেশের নিরাপত্তা।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়েও এদিন সংসদে সুর চড়ান মোদি। বলেন, ৩৭০ ধারা বলবৎ করে কাশ্মীরের ক্ষতি করেছিল আগের সরকার। কিন্তু ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার পরে কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে সরকার। আমজনতার কথা মাথায় রেখে বিনামূল্যে রেশন প্রকল্পও চালু রাখার কথা জানিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।