বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বাংলার পর এবার ত্রিপুরা। কয়েক বছর আগেও যাঁদের সঙ্গে শত্রুতা ছিল চরমে। সেই কংগ্রেসের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল সিপিএম (CPM)। বিজেপিকে ঠেকাতে এই রাজ্যেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে সবুজ সংকেত দিল সিপিএম পলিটব্যুরো। রাজ্যে বিজেপি বিরোধী বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সব দলকে জোট বাধার আহ্বান জানালেও তৃণমূল (TMC) নিয়ে পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করেনি সীতারম ইয়েচুরি, মানিক সরকাররা।
যদিও ত্রিপুরায় বিজেপি বিরোধিতা নিয়ে একাধিকবার তৃণমূলের ভূমিকার প্রশংসা করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার। আবার গত এপ্রিলে কেরলের কান্নুরের পার্টি কংগ্রেসে সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি এবং বাংলায় বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী অবস্থান নেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়। কিন্তু ত্রিপুরার ক্ষেত্রে কোনও অবস্থান পার্টি কংগ্রেসে নেওয়া হয়নি। সেক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী জোটে সিপিএম ও তৃণমূল কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করবে কিনা তা নির্ভর করবে দু’দলের সিদ্ধান্তের ওপর।
[আরও পড়ুন: মাদুরাইয়ে চিন থেকে ফেরা মা-মেয়ের শরীরে কোভিড, জানুয়ারিতে বাড়তে পারে প্রকোপ, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের]
বছর ঘুরলেই দেশের নয় রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। এর মধ্যে উত্তর পূর্বের তিন রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ভোট। এছাড়াও ভোট হবে রাজস্থান, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। জম্মু কাশ্মীরেও ভোট হতে পারে বলে রাজধানীর রাজনৈতিক মহলে জল্পনা। কিন্তু বুধবার সিপিএম পলিটব্যুরোর তরফে একটি ঘোষণা ত্রিপুরার রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দিয়েছে। পার্টির পলিটব্যুরোর তরফে জানান হয়েছে, রাজ্যে বিজেপি সরকার গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ওপর দখলদারি কায়েম করছে। বিরোধীদের ওপর নৃশংস আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেস প্রতিবাদ করছে। নির্বাচন কমিশন (Election Commission) যাতে আগামী বিধানসভা ভোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করে বিজেপি বিরোধী সব দলকে একত্রে সরব হতে হবে।
[আরও পড়ুন: রাজধানী-দুরন্তর থেকে কোথায় এগিয়ে বন্দে ভারত? কেন চড়বেন এই সুপারফাস্ট ট্রেনে?]
ত্রিপুরা কংগ্রেস সম্পর্কে এতদিন রাজ্য পার্টি নরম অবস্তান নিলেও চুপ ছিল কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরো। বুধবার পলিটবুরোর বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আগামী ভোটে সিপিএম ও কংগ্রেস (Congress) হাত ধরাধরি করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে পার্টির শীর্ষনেতৃত্বের আপত্তি করবে না। সূত্রের খবর, বৈঠকে মানিক সরকার (Manik Sarkar) নিজেই কংগ্রেসের সঙ্গে হাত ধরার পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁর যুক্তি মেনে নিয়েই জোটে সবুজ সংকেত দিয়েছে পলিটব্যুরো। অথচ ১৬ সালে বাংলায় যখন প্রথমবার বামেরা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তখন পার্টির অন্দরে চরম বিরোধিতা করেন মানিক সরকার। তিনি আবার পার্টিতে প্রকাশ কারত ঘনিষ্ট বলেই পরিচিত। যেহেতু কারাত কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের বিরোধী ছিলেন সেহেতু মানিক সরকারও বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এখানে প্রশ্ন তৃণমূলকে নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে ও বাংলায় পার্টির অবস্থান স্পষ্ট করা থাকলেও ত্রিপুরার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রণকৌশলের লাইন নেয়নি সিপিএম শীর্ষনেতৃত্ব। বিজেপি বিরোধী জোট গঠন হলে কংগ্রেসের মতো তৃণমূলের দিকেও মিত্রতার হাত বাড়াবে কমরেডকুলের নেতারা? তা এখনই স্পষ্ট করেননি ইয়েচুরি ও কারাত ও মানিক সরকাররা।
এদিকে এসবের মধ্যেই ত্রিপুরায় বিজেপির আরেক বিধায়ক পদত্যাগ করেছেন। বিজেপি বিধায়ক দিবাচন্দ্র রাঙ্খল বুধবার ইস্তফা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির সাথে তার দূরত্ব ছিল। শোনা যাচ্ছে নিজের পুরনো দল কংগ্রেসে ফিরতে পারেন তিনি।