প্রণব সরকার, আগরতলা: একদা 'হাত' চিহ্নই ছিল অপাংক্তেয়, হাস্যকর চিহ্ন এবং প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! এখন কিনা সেই 'হাত' চিহ্নেই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা ত্রিপুরার পাঁচবারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। শুক্রবার, প্রথম দফার ভোটগ্রহণ পর্বে ভোটও দিলেন কংগ্রেসের হাত চিহ্নে! সারাজীবন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই আন্দোলন করে ২৫ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মানিকবাবু। আর চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) কংগ্রেসের প্রার্থী আশিস কুমারকে ভোট দিলেন। অবশ্য তা নিয়ে বিশেষ খেদ নেই তাঁর। বলছেন, গণতন্ত্রের স্বার্থেই তাঁর এই ভোট।
ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। ফাইল ছবি।
একেই বোধহয় বলা হয় দর্পচূর্ণ। দম্ভের পতন। শিবরাত্রির সলতের মতোই অস্তিত্বের জানান দিচ্ছিল ত্রিপুরার সিপিএম (CPM) নেতৃত্ব। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ায় কার্যত পরগাছার মত কংগ্রেসকে আঁকড়ে ধরেছিল। কিন্তু এভাবে পরজীবী হয়ে কতদিন আর বাঁচা যায়? শেষ পর্যন্ত যা হওয়ার তাই হল। INDIA জোটের স্বার্থে এবার তাঁর কেন্দ্রে এবার কংগ্রেসের প্রার্থী দিয়েছে। ফলে তাঁকেই ভোট দিতে হল একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী মানিক সরকারকে (Manik Sarkar)।
[আরও পড়ুন: মে মাসের শুরুতেই মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ, প্রস্তুত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও]
ত্রিপুরায় সিপিএম দলের অন্যতম মসিহা মানিক সরকার। মুখ্যমন্ত্রিত্বে তাঁর রেকর্ড আছে। বলা হয়, তিনি দেশের কমিউনিস্ট 'থিঙ্ক ট্যাঙ্কার'দের একজন। কারাট-ইয়েচুরি সমগোত্রীয় নেতা। পলিটব্যুরোর সদস্য। তাঁর গুণগ্রাহীরা বলে থাকেন, তিনিই হচ্ছেন ত্রিপুরার (Tripura) 'সাচ্চা' কমিউনিস্ট। অত্যন্ত সামান্য সাদা-পাজামা পরেন। বিলাসিতা নাক এড়িয়ে চলেন। সবসময় খেত-খামার মেহনতি মানুষের কথা বলেন। তাঁর মুখ নিঃসৃত বক্তব্য কমিউনিজমের দলিল। অত্যন্ত লড়াকু নেতা।
[আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকেও এবার সাপ্লির সুযোগ, নয়া নিয়ম জানাল শিক্ষা সংসদ]
সময়ে কত কিছু পালটে যায়। স্বার্থের জন্য কত মূল্যবোধই না ঝরে যায়! খেত-খামারের প্রতিনিধিরা অস্তিত্ব বাঁচাতে পুঁজিপতিদেরই এখন তোষামোদ করতে ব্যস্ত তাঁরা! 'বুর্জোয়া' কংগ্রেস (Congress)এখন তাদের আদর্শ। গত কয়েক দশক ধরে এ রাজ্যের কমিউনিস্টদের সকাল আর সান্ধ্য চায়ের আড্ডায় ঘৃণার বস্তু ছিল কংগ্রেস। ঘৃণার পাত্র ছিল কংগ্রেসের এক একটি মুখ। কংগ্রেসের এক একজন নেতা নাকি এদের কাছে ছিলেন ধর্ষক তথা ক্রিমিনাল। কিন্তু শেষপর্যন্ত সমস্ত বিবেক সর্বকালের আদর্শ সর্বকালের বিশ্বাসকে বিলোপ করে, ধ্বংস করে মানিকবাবুকে ওইসব ঘৃণার পাত্রদের কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হল! আদর্শের জন্য নয়, শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য! ক্ষমতার জন্য মার্কস আর লেনিনের আদর্শকে পায়ের তলায় পিষে ফেলা মানিকবাবুর দর্পচূর্ণ কিংবা অহংকারের পতন হলেও এর জন্য তিনি মোটেও অনুতপ্ত নন।