সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অন্ধকারের শেষেই আলো থাকে। এই কথাটা সব সময় মানুষের মনে থাকে না। তার উপর যাঁদের জীবন কাটে পতিতা পল্লির পরিবেশে, তাঁদের লড়াই তো আরও অনেক বেশি কঠিন। কিন্তু এমন এক পরিবেশেও জীবনের প্রতি আস্থা হারাননি নাসিমা খাতুন। পতিতা পল্লিতে বেড়ে ওঠা এই যুবতীই এবার জায়গা করে নিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) উপদেষ্টা মণ্ডলীতে।
সম্প্রতি মানবাধিকার (Human Rights) কমিশন তাদের নয়া উপদেষ্টা মণ্ডলী ঘোষণা করেছে। সেখানে নাসিমার নাম রয়েছে। অন্ত্যজ শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে তাঁর এই সাফল্য চমকপ্রদ। বিহারের মুজফফরপুরের চতুর্ভুজ স্থানে জন্ম এই যুবতীর। এক যৌনকর্মী তাঁকে দত্তক নেন। সেই থেকেই যেন ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল নাসিমার।
[আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক! বিচারকের আসনে এবার তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি, জানালেন অভিজ্ঞতার কথা]
তাঁর জীবনে আচমকাই আলোর রেখা আসে ১৯৯৫ সালে। সেই সময় আইএএস অফিসার রাজবালা ভার্মা যৌনকর্মীদের জন্য একটি সমাজসেবামূলক প্রকল্প শুরু করেন। ‘বেটার লাইফ অপশন’ শীর্ষক সেই প্রকল্পের সূত্রেই নাসিমা সেলাই করে উপার্জন করা শুরু করেন। মাসে ৫০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার করেছেন সেই সময়।
সেই শুরু। ক্রমেই জীবনের বাধাগুলি টপকে এগিয়ে গিয়েছেন নাসিমা। সেই সঙ্গে নিজের ক্ষমতামতো সমাজসেবার কাজও শুরু করেন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে। পাশাপাশি হাতে লেখা পত্রিকাও বের করেন তিনি। সম্প্রতি আইনি সচেতনতা বাড়ানোর একটি প্রচারমূলক প্রকল্পেও অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ”আমাদের সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষরা এখন এগিয়ে আসছেন। লড়াই করছেন নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে।”
মানবাধিকার কমিশনে সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত নাসিমা। তিনি জানাচ্ছেন, ”এনএইচআরসি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে ভিন্ন ভিন্ন কমিটি গঠন করেছে। আমি তেমনই এক কমিটিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। এবার আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর সকলের কাছে পৌঁছে দিতে পারব। এবং ন্যায়ের জন্য সঠিক লোকের কাছেও পোঁছতে পারব। এটা সকলের দায়িত্ব। এবং সকলে মিলে চেষ্টা করলে আমরা সাফল্য পাবই। কমিটির সমস্ত অফিসারকে আমার তরফে ধন্যবাদ।” নাসিমা জানাচ্ছেন, বিহারের ৩৮টি জেলায় পতিতা পল্লি রয়েছে। ফলে অসহায় মেয়েদের সংখ্যা অসংখ্য। সেই সব মেয়েদের শিক্ষা ও অন্যান্য অধিকারের জন্য তিনি লড়বেন, জানিয়েছেন নাসিমা।