সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্টারভিউ চলাকালীন প্রশ্নবাণে বিরক্ত হন। অনুষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা বিশিষ্ট সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ অনেক বোঝালেও লাভ হয়নি কিছুই। তার পর অবশ্য কেটে গিয়েছে প্রায় এক যুগ। দীর্ঘ সময় পর রাজ্যসভার ভোটে তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় সেই সাগরিকা ঘোষ। কেন সাগরিকা ঘোষকেই প্রার্থী হিসাবে বেছে নিল ঘাসফুল শিবির, তা নিয়ে সর্বত্র চলছে জোর আলোচনা।
খানিকটা পিছনে ফিরে যাওয়া যাক। সময়টা ২০১২ সাল। তার মাসছয়েক আগে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। যা নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। এই ঘটনার প্রায় মাসছয়েক পর সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের একটি সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠানে অতিথির আসনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই অনুষ্ঠানে সঞ্চালিকার ভূমিকায় ছিলেন সাগরিকা ঘোষ। মমতাকে প্রশ্ন করেন দুই ছাত্রী। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রী তানিয়া ভরদ্বাজ। ওই ছাত্রী মদন মিত্র এবং আরাবুল ইসলামের মতো নেতাদের নাম উল্লেখ করে প্রশ্ন ছুড়ে দেন মমতাকে। ওই ছাত্রী বলেন, “আপনি গুন্ডাদের কথা বললেন এবং জানালেন যে আপনি তাঁদের সমর্থন করেন না। কিন্তু মদন মিত্র, আরাবুল ইসলামদের মতো কয়েকজনের আচরণ নিয়ে কী বলবেন? তাঁদের শব্দচয়ন ভালো নয়। তাঁদের মতো মানুষের দায়িত্বশীল হয়ে কথা বলা উচিত নয়?”
[আরও পড়ুন: ঘাটালে দেবের পাশে তৃণমূল, সাংসদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে অপসারিত শংকর দলুই]
প্রশ্ন শুনে বেজায় চটে যান মমতা। তিনি ওই ছাত্রীকে ‘সিপিআইএমের ক্যাডার’ বলে উল্লেখ করেন। মমতা আরও বলেন, “সিপিআইএম এবং মাওবাদীরা একসঙ্গে কাজ করছে।” সাগরিকার দিকে তাকিয়ে মমতা বলেন, “আমি আপনাকে বলছি ওরা মাওবাদী ক্যাডার।” দুঃখপ্রকাশ করে মমতা বলেন, “আমি সিপিআইএমের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। ওরা মাওবাদী পড়ুয়া। আপনি ওদের তথ্য জানতে পারেন। আমি কোনও সিপিআইএমের প্রশ্নের জবাব দেব না।” সঞ্চালিকা হিসাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন সাগরিকা। তানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছাড়া আর কিছু নন বলেই জানান তিনি। যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি। সাগরিকা বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করলেও দুঃখপ্রকাশ করে ল্যাপেল রেখে অনুষ্ঠান ছেড়ে চলে যান মমতা।
এক যুগ পর সেই ঘটনাই যেন রবিবার দুপুরের পর থেকে সকলের স্মৃতিতে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। কারণ, বলাই বাহুল্য তৃণমূলের প্রার্থীতালিকায় এবার সবচেয়ে বড় চমক বিশিষ্ট সাংবাদিক সাগরিকা ঘোষ। সর্বভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে উচ্চ পদে কাজ যেমন করেছেন, তেমনই তিনি একজন লেখক। ইন্দিরা গান্ধী, অটল বিহারী বাজপেয়ীর উপর তাঁর লেখা বই যথেষ্ট সমাদৃত। এছাড়া উদারপন্থা নিয়েও সাগরিকা ঘোষের লেখা বই রয়েছে। বিশিষ্ট সাংবাদিক-লেখক রাজদীপ সরদেশাইয়ের ঘরনি সাগরিকা। মনে করা হচ্ছে, সাংবাদিক হিসেবে তাঁর বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। বিজেপির বিরোধিতায় সোচ্চার হতে দলে তাঁর মতো মুখের প্রয়োজন। সেই কারণেই তাঁকে বেছে নিল তৃণমূল।