সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: জাতীয় স্তরে বা সংসদে সম্পর্কের সমীকরণ যাই হোক, রাজ্যে তৃণমূল বিরোধিতায় পিছপা হবে না কংগ্রেস। রাজ্য নেতাদের সে নির্দেশ আগেই দিয়েছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। এবার নিজেই সেই লক্ষ্যে প্রথম পদক্ষেপটি করলেন রাহুল গান্ধী। সুপ্রিম রায়ে রাজ্যের চাকরিহারা শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কথা বললেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা।
বুধবার পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার জনা চারেক চাকরিহারা শিক্ষককে নিয়ে দিল্লির ১০ জনপথে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে যান। বুধবার সন্ধ্যায় যখন জানা যায় যে পরদিন মামলার রায়দান হবে, তখনই দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। আগের শুনানিগুলির সময়ও তাঁরা নিয়মিত আসতেন। উল্টোদিকে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে হাইকমান্ডের বৈঠকের জন্য দিল্লিতে ছিলেন প্রদেশ সভাপতিও। এই খবর পেয়ে শুভঙ্করের সঙ্গে যোগাযোগ করেন দিল্লিতে থাকা শিক্ষকদের একাংশ। বাকি কাজ করেন প্রদেশ সভাপতি। সূত্রের খবর, সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে হওয়া বৈঠকে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন চাকরিহারারা। রাহুল তাঁদের জানান, যেহেতু অধিবেশন শেষ, তাই সংসদের ভিতর কিছু করার অবকাশ না থাকলেও তাঁর ও কংগ্রেসের পক্ষে যতখানি সম্ভব চেষ্টা করবেন যোগ্য শিক্ষকদের পাশে থাকতে। বিষয়টি যেহেতু আদালত সংক্রান্ত তাই পথে নেমে আন্দোলনের কোনও জায়গা নেই। যদিও আইনি-সহ অন্যান্য দিক থেকে যতখানি সাহায্য করা প্রয়োজন, তা কংগ্রেস করবে আশ্বাস দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। শিক্ষকদের ভেঙে না পড়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি। এত মানুষের চাকরি একসঙ্গে কীভাবে যেতে পারে, সেটা নিয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেন তিনি।
বৈঠক সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টে চলা মামলার অন্যতম আবেদনকারী মেহবুব মণ্ডল বলেন, “আমরা তো কোনও দুর্নীতি করিনি। হকের চাকরি করছিলাম। আমাদের উপর যে অবিচার হল, যার জেরে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হল লক্ষাধিক মানুষকে তা নিয়ে কেন দেশের আইনসভায় আলোচনা হবে না? এই জন্যই আমরা লোকসভার বিরোধী দলনেতার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। এবার ওঁরা কী করবেন, সেটা নিজেরা জানেন। তবে উনি অনেকক্ষণ সময় দিয়েছেন। মনোযোগ দিয়ে কথা শুনেছেন। সবরকম সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রেস বিবৃতি জারি করে নিজের বক্তব্য জানানোর কথাও বলেছেন।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, "কীভাবে এঁদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সেটাই এখন এক ও একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। এর জন্য রাজনীতি সরিয়ে রেখে প্রয়োজনে সবাই মিলে উপায় খুঁজতে হবে।"
দেশ ও রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসএসসির চাকরিহারাদের সঙ্গে রাহুলের সাক্ষাৎ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এমনিতে বঙ্গ কংগ্রেস যতই তৃণমূল বিরোধিতা করুক, রাহুল গান্ধীর মতো শীর্ষস্তরের নেতারা সেভাবে রাজ্যের ইস্যুতে মাথা ঘামান না বা সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না। কিন্তু দিল্লি নির্বাচনের পর কিছুটা অবস্থান বদলেছে কংগ্রেস। বঙ্গ নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্যে দলের শক্তি বাড়াতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনে তৃণমূল বিরোধিতা করতেও আপত্তি নেই হাইকম্যান্ডের। রাহুল গান্ধীরাও বুঝেছেন, রাজ্যে শক্তি বাড়াতে হলে এসএসসির মতো ইস্যুতে সরব হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।