সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ক্রমবর্ধমান ছাত্র আত্মহত্যায় চিন্তিত দেশের শীর্ষ আদালত। এই অবস্থায় পড়ুয়াদের আত্মহত্যা প্রবণতা কমাতে ১৫টি জরুরি নির্দেশিকা বা 'গাইডলাইন' আনল সুপ্রিম কোর্ট। এই নির্দেশিকা মানতে হবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার, প্রশিক্ষণ অ্য়াকাডেমি এবং হোস্টেলগুলিকে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিপুল সিলেবাস এবং পরীক্ষার চাপ সামলাতে না পেরেই আত্মহত্যা করছে শিক্ষার্থীরা। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাশে দাঁড়াচ্ছে না তাদের। সেই কারণেই বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে সুপ্রিম 'গাইডলাইন'। কী রয়েছে এই গাইডলাইনে?
সুপ্রিম নির্দেশিকা অনুযায়ী, এবার থেকে ছাত্রদের মানসিক স্বাস্থ্যের কাউন্সিলিং বাধ্যতামূলক। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সক্রিয় রাখতে হবে অভিযোগ গ্রহণ এবং তার প্রতিকার ব্যবস্থা। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, ছাত্রদের ছোট ব্যাচগুলিতেও একজন করে পরামর্শদাতা (মেন্টর বা কাউন্সিলর) রাখতে হবে, বিশেষ করে পরীক্ষার সময় এবং প্রতিষ্ঠানে নতুন আসার পরে। গোপনে পড়ুয়াদের এই সাহায্য করা হবে। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, দেশে পড়ুয়াদের আত্মহত্যার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি আসলে পদ্ধতিগত ব্যর্থতা যা উপেক্ষা করা যায় না।
শুক্রবার বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের নির্দেশ, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনেরও বেশি পড়ুয়া রয়েছে, সেখানে কমপক্ষে একজন মনোবিদ, কাউন্সিলর অথবা সমাজকর্মী নিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেল্পলাইন নম্বর চালু করতে হবে ক্যাম্পাস, হোস্টেলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলিতে তা আপলোড করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বছরে কমপক্ষে দু'বার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। আত্মহত্যার সম্ভাবনা কমাতে আবাসিক হোস্টেলগুলিকে অবশ্যই টেম্পার-প্রুফ সিলিং ফ্যান ইনস্টল করতে হবে এবং ছাদ, বারান্দায় প্রবেশাধিকার সীমিত করতে হবে।
পড়ুয়া আত্মহত্যা নিয়ে সুপ্রিম নির্দেশিকার নেপথ্যে ২০২৩ সালে জুলাই মাসে বিশাখাপত্তনমে এক নিট পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার মামলা। আকাশ বাইজু'স ইনস্টিটিউটে মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি চলাকালীন ১৭ বছর বয়সি ওই পড়ুয়া আত্মহত্যা করেন। আদালত পড়ুয়ার বাবার আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলার তদন্ত সিবিআই-কে দেয়। একই সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের রায় খারিজ করে দেয়। এদিন শীর্ষ আদালত মন্তব্য করে, ভারতের তরুণদের মধ্যে হতাশা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কাঠামোগত অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
সুপ্রিম রায়ের নেপথ্যে জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) পরিসংখ্যান। যেখানে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ভারতে ১,৭০,৯২৪টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৭.৬% অর্থাৎ প্রায় ১৩,০৪৪ জন পড়ুয়া। এর মধ্যে ২,২০০ জনেরও বেশি পড়ুয়া পরীক্ষায় ব্যর্থতার কারণেই আত্মহত্যা করছে। এই পরিস্থিতি দুই বিচারপতি জানিয়েছেন, আদালতের এই নির্দেশাবলী আনুষ্ঠানিক আইন প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের আইন হিসেবেই গণ্য হবে।
