সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশে গণ অভ্যুত্থানের পর ভারতে উড়ে আসেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে অভিযোগ, ভারত থেকেই হাসিনা মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়ে চলেছেন। যদিও ওই বিবৃতি সমর্থন করে না ভারত। ঢাকা থেকে ফিরে বিদেশ সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিতে জানালেন বিদেশসচিব বিক্রম মিসরি। বলা বাহুল্য, দিল্লির এই অবস্থান বড় কূটনৈতিক হাওয়া বদলের ইঙ্গিত।
ঢাকা সফর সেরে বুধবারই কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের নেতৃত্বাধীন বিদেশ সংক্রান্ত সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির মুখোমুখি হন বিক্রম। সেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেন, ইউনুস এবং তাঁর সরকার সম্পর্কিত হাসিনার বাঁকাকথা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য কতটা ক্ষতিকারক। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যক্তি বিশেষ বা নির্দিষ্ট সরকারে সীমাবদ্ধ নয়। বরং বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তে চায় নয়াদিল্লি।
‘দ্য হিন্দু’-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে মিসরি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে ওই বিবৃতি দিতে ‘ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম’ (প্রাইভেট কমিউনিকেশন ডিভাইস) ব্যবহার করেন হাসিনা। এইসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করেন, এ দেশের মাটি থেকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার কোনও সুযোগ দেওয়া হয় না। ভারত কখনওই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে মিসরির এই ব্যাখ্যা কূটনৈতিক হাওয়া বদলের ইঙ্গিত। দিল্লির সঙ্গে আওয়ামি লিগের সঙ্গে প্রাচীন। যার সূত্রপাত ইন্দিরা-মুজিবর আমলে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হাসিনার সঙ্গেও সাউথ ব্লকের সম্পর্ক বরাবর মজবুত। এই কারণেই হাসিনার পতনের পরে দিল্লিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। হাসিনাকে দিল্লির পুতুল বলে ভারত বিদ্বেষে ইন্ধন দেওয়া হয়। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলের বদলে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলে আদতে কূটনৈতিক অবস্থান বদল করল দিল্লি। এমনটাই মনে করা হচ্ছে। মিসরি জানিয়েছেন, এই অবস্থানের কথা ঢাকাকে জানিয়ে এসেছেন তিনি। পাশপাশি ‘নিন্দনীয় ঘটনা’ নিয়ে উদ্বেগেও প্রকাশ করেন তিনি।
সোমবার দুপুরে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মহম্মদ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিক্রম মিসরি। ১২০ মিনিটের হাই প্রোফাইল বৈঠকের পর সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের বিদেশ সচিব। সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগের কথা দিল্লির তরফে জানানো হলেও মোটের উপর একে অপরকে বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তাই দিয়েছে দুই দেশ।