স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: ফের বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ছবি সামনে এল। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক জানাল, রাজ্যের গ্রামীণ ৪৬.২০ শতাংশ বাড়িতে এখনও নেই পানীয় জলের কল। জানানো হল, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনায় রাজ্যের মাত্র ২২টি গ্রামে ২৪ ঘণ্টার বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা হয়েছে। সৌভাগ্য প্রকল্পে রাজ্যে গ্রামাঞ্চলের আরও ৭,৩২,২৯০টি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছলেও আরডিএসএস প্রকল্পে বাংলার জন্য বরাদ্দ হয়নি কোনও অর্থ। একইভাবে বাংলাকে বঞ্চিত করা হয়েছে অফ গ্রিড সৌরশক্তি প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ত্রিপুরা-সহ সাতটি রাজ্যে এই প্রকল্প চালু হলেও ঠাঁই পায়নি বাংলা।
ডায়মন্ডহারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ এদিন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রকের কাছে নির্দিষ্ট তিনটি প্রশ্ন করেছিলেন। ১) রাজ্যওয়ারি গ্রামীণ কতগুলি বাড়িতে এখনও ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ নেই। ২) রাজ্যওয়ারি গ্রামীণ কতগুলি বাড়িতে এখনও পানীয় জলের কল নেই। ৩) এই সমস্যা সমাধানে কেন্দ্র কী কী পদক্ষেপ করেছে? জবাবে কেন্দ্রের দেওয়া তথ্যে ছত্রে ছত্রে বাংলার প্রতি বৈষম্যের ছবি স্পষ্ট।
প্রথম প্রশ্নের জবাবে গ্রাম জ্যোতি যোজনার উদাহরণ দিয়েছে কেন্দ্র। সেখানে নির্দিষ্টভাবে ক'টি বাড়িতে ২৪ ঘণ্টার বিদ্যুৎ নেই, সেই উত্তর না দিয়ে বলা হয়েছে, প্রথম মোদি সরকারের আমলে রাজ্যগুলির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কোন কোন গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ নেই। রাজ্যগুলির পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বাকি থাকা ১৮,৩৭৪টি গ্রামে ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়। সেই তালিকায় ছিল বাংলার ২২টি গ্রাম। যদিও সেই গ্রামগুলির সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ পৌঁছেছিল কিনা, সেই উত্তর দেওয়া হয়নি। এরপরই বলা হয়, সৌভাগ্য প্রকল্পে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ইচ্ছুক ২.৮৬ কোটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছনো হয়। যার মধ্যে আছে বাংলার ৭.৩২ লক্ষ গ্রাম। সঙ্গে বলা হয়, এই দু'টি প্রকল্পই ২০২২ সালের ৩১ মার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, যখন দাবি করা হচ্ছে প্রথম প্রকল্পের পর সব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, তারপরও দেশে পৌনে তিন কোটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছনো মানে, গ্রামগুলির সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। আবার ২০২১ সালের জুলাই মাসে আরডিএসএ নামক নতুন প্রকল্প আনে কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত সাড়ে ন' লক্ষ বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বরাদ্দ হয়েছে ৪,২৮১ কোটি টাকা। যার অর্থ, এখনও অনেক বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। এই প্রকল্পে বাংলার একটিও বাড়ি নেই। সবশেষে মন্ত্রক এসেছে সৌর বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে। যে প্রকল্পে পৌনে ১০ হাজারের বেশি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছতে বরাদ্দ হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। এখানেও নেই বাংলা। প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গেই কৌশলে রাজ্যের পাঠানো তথ্যের উদাহরণ দিয়ে রাজ্যগুলির উপরও দায়ভার চাপানো হয়েছে।
শুধু বিদ্যুৎ নয়, প্রধানমন্ত্রীর সাধের 'হর ঘর জল' প্রকল্পেও বঞ্চিত বাংলা। কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে রয়েছে মোট ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ৪০ হাজার বাড়ি। ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মধ্যে ৯৪ লক্ষ ৩৬ হাজার বাড়িতে পানীয় জলের কল পৌঁছলেও বাকি আছে ৮১ লক্ষ চার হাজার বাড়ি। শতাংশের বিচারে যা, ৪৬.২০%।