বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, রায়পুর: সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন সোনিয়া গান্ধী (Sonia Gandhi)। সংসদীয় রাজনীতিতেও থাকবেন কিনা, তা নিয়েও জল্পনা শুরু কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনে। তবে পিছনে থেকে দলের রাশ ছাড়ার বিষয়ে রাহুলের পথ পরিষ্কার করে দিলেন তিনি। রায়পুরে প্লেনারির (Plenary Session) দ্বিতীয় দিন শেষে এমনটাই মনে করা হচ্ছে। আড়াল থেকে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করতে পারেন ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ।
শনিবার কংগ্রেসের (Congress) প্লেনারিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সোনিয়া বলেন, “আমার সভাপতিত্বর মেয়াদকাল শেষ হয় ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে।” তার জন্য পুত্র রাহুলকে ধন্যবাদও জানান তিনি। এরপরেই জল্পনা শুরু হয় রাজনীতিতে সোনিয়া গান্ধীর সক্রিয়তা নিয়ে। সংসদীয় রাজনীতিতেও থাকবেন কিনা, তা নিয়ে কৌতুহল কংগ্রেসের অভ্যন্তরে। তবে দলের শীর্ষ নীতি নির্ধারক কমিটিতে তাঁকে আজীবন সদস্য করতে এদিন দলের সংবিধানে সংশোধন করা হয়। প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে কৌতুহলের পাশাপাশি আগামী লোকসভা নির্বাচনে (Loksabha Election 2024) বিজেপি বিরোধী জোট নিয়ে কংগ্রেসের রণকৌশল নিয়েও সমান আগ্রহ ছিল প্রতিনিধিদের। এক্ষেত্রে সমমনোভাবাপন্ন ও আদর্শশগত আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিল শতাব্দী প্রাচীন কংগ্রেস। সেইসঙ্গে তৃতীয় শক্তি (Third Front) গঠনের প্রচেষ্টাকে বিজেপিকে সাহায্য করার কৌশল বলেই মনে করছে কংগ্রেস।
[আরও পড়ুন: এলাকা দখল নিয়ে তুমুল লড়াই, জিতেও নালায় নাকানিচোবানি ‘বিজয়ী’ ষাঁড়ের!]
অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে সূচনা করে আদানির নাম না করেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge)। তিনি বলেন, “কেন্দ্রের সরকার সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে কয়েকজন শিল্পপতিকে আরও ধনী করার লক্ষ্য নীতি নিয়েছে। দেশবাসীর নয়, মোদী বন্ধুর সেবা করছেন।” এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে জোট মজবুত করার আহ্বান জানান। আগামী লোকসভায় রাহুল যে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নন তা স্পষ্ট করেন হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু। তিনি জানান, রাহুল প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার গঠনের সময় হতে পারতেন। কিন্তু তা না করে দলের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। এদিন অধিবেশনে রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তাব পেশ করা হয়। দলের সংবিধানে ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি ও সদস্যপদের ফি ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা করার মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পাশ করানো হয়।
বয়সের ভারে ন্যুজ। শারিরীক অসুস্থতায় বেশিরভাগ সময় ঘরবন্দি থাকেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ছাড়া অন্য কংগ্রেসের কর্মসূচিতে অনুপস্থিতি থাকেন। যদিও ভারত জোড়ো যাত্রায় একদিন যোগ দেন। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে সোনিয়ার সক্রিয়তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। এদিন প্লেনারি অধিবেশনে সেই জল্পনাকে আরও উসকে দেন নিজেই। জানান, খাড়গেজির নেতৃত্বে দলের নতুন প্রজন্মকে দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে দল সব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। ২৫ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালনের শেষটা ভারত জোড়ো যাত্রা দিয়ে শেষ হয়েছে।
[আরও পড়ুন: দেড়শো বছর পেরিয়ে স্মৃতির জাদুঘরেই ঠাঁই হবে ট্রামের! কেন উতলা আমবাঙালি?]
তখনই প্রশ্ন ওঠে তাহলে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে ফের বড় কোনও সংকটে পড়লে সোনিয়া গান্ধী কি হাল ধরবেন না? প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি জল্পনা শুরু হয় অধিবেশনে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের যুক্তি, ম্যাডামের পক্ষে সক্রিয়া রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়া সম্ভব নয়। তিনি অবশ্যই দলকে আড়াল থেকে পরামর্শ দেবেন। অন্য অংশের ব্যাখ্যা, পুত্র রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যে বেজায় খুশি সোনিয়া গান্ধী। তাই পুত্রের হাতে পুরোপুরি দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। দলের অভ্যন্তরে রাহুল বিরোধী নেতৃত্বকে কড়া বার্তা দিতেই সোনিয়ার এমন বক্তব্য।