shono
Advertisement

Breaking News

Vaibhav Suryavanshi

শূন্য শুধু শূন্য নয়! সাফল্যের পরই বাইশ গজে জীবনের অন্য পাঠ পেলেন বৈভব

শূন্য থেকে ফিরে আসা, ফিরে আশার অনেক গল্প ছড়িয়ে ক্রিকেটের রূপকথায়।
Published By: Arpan DasPosted: 06:33 PM May 02, 2025Updated: 09:44 AM May 03, 2025

অর্পণ দাস: 'শূন্যতাই জানো শুধু? শূন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে
সেকথা জানে না?'
প্রিয় বৈভব সূর্যবংশী, তুমি শঙ্খ ঘোষের কবিতা পড়োনি। হয়তো কোনও দিন পড়বেও না। নুয়ে পড়া কাঁধ, চোখের কোনায় বিস্মিত হতাশা নিয়ে যখন তুমি ফিরে যাচ্ছিলে, তখন হয়তো অনেকেরই মনে পড়তে পারে শঙ্খ ঘোষের 'শূন্যের ভিতরে ঢেউ' কবিতা। এক ইনিংসে সেঞ্চুরি, পরের ইনিংসে শূন্য শুধু শূন্য। ক্রিকেটের বাইশ গজ, চরম অনিশ্চয়তার জায়গা। ট্র্যাপিজের সরু তারে ঝুলতে থাকে খেলোয়াড়ের ভাগ্য। একটা বল, মাত্র একটা বল পার্থক্য গড়ে দিতে পারে কার ঠিকানা সপ্তম স্বর্গে, আর কেই বা তলিয়ে যাবে অন্ধকারে। ইতিহাস ঘাঁটলে উদাহরণ কম নয়। আবার ফিরে আসা? কিংবা ফিরে আশা? বৈভব, জীবনটা এরকমই। ক্রিকেট আর জীবন, হাতে হাত ধরে চলে। শুধু শিখে নিতে হয়, শূন্যের ভিতর অনেক অনেক ঢেউ থাকে।

Advertisement

আসলে বৈভবের বয়স যে মাত্র ১৪ বছর। অনেকেই মনে করা চেষ্টা করছেন, ১৪ বছর বয়সে নিজে কী করতেন? আবছা-অস্পষ্ট স্মৃতির ভিতর খেলা করে রঙিন দিনগুলি। কিন্তু সত্যিই তো, ১৪ বছর ৩২ দিনে ঠিক করতেন, আপনার কী সেটা মনে পড়ে? বৈভবের মনে থাকবে। তার সৌজন্যে গোটা বিশ্বের সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমীর মনে থাকবে, ১৪ বছর বয়স কী দুঃসহ! ক্রিকেট ব্যাটের স্পর্ধায় শাসন করে গোটা দুনিয়াকে। গর্জনশীল তিরিশা সঙ্গে নিয়ে আইপিএলের মঞ্চে তার আবির্ভাব। সেটা যদি ট্রেলার হয়, তাহলে গোটা সিনেমাটা তোলা ছিল গুজরাট ম্যাচের জন্য। মাত্র ৩৫ বলে সেঞ্চুরি। অসংখ্য রেকর্ড তার পায়ের তলায় নতজানু। স্কোরবোর্ডকে 'গাধা' বললেও তার কীর্তিগুলো তো চির অমলিন থেকে যাবে।

ঠিক যেভাবে লেখা থাকবে, পরের ম্যাচেই শূন্য করে ফিরেছে বৈভব। দীপক চাহারের বলটা ঠিকমতো সংযোগ হল না। মিড অনে অপেক্ষা করছিলেন উইল জ্যাকস। বলটা মেরেই হয়তো বুঝতে পেরেছিল, কয়েক সেকেন্ডের ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে? ওই কয়েক সেকেন্ডে যেন কয়েকশো অভিব্যক্তি খেলে গেল বৈভবের মুখে। চোখে অপার বিস্ময়। তারপরই চোখ বুজে মুখে একরাশ বিরক্তি, হতাশায় নুয়ে এল কাঁধ। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল ক্রিজে। অবিশ্বাসের করাল থাবা তাকে যেন মাটিতে মিশিয়ে দিতে চাইছে। তারপর মাথা নীচু করেই বিদায় নিল বৈভব। তখন যেন চাহার বা জ্যাকস, নীল জার্সিধারী কোনও ক্রিকেটার নন, বরং জীবনের দুই শত্রু। কিংবা হয়তো জীবনের দুই শিক্ষকের প্রতিরূপ।

একশোর পরের ইনিংসেই শূন্য। ১৪ বছরের এক কিশোর কীভাবে বিষয়টি গ্রহণ করল, আমাদের জানা নেই। তবে একটু দুরু দুরু বুক তো হয়। পৃথ্বী শ, উন্মুক্ত চাঁদের উদাহরণ তো জ্বলজ্বল করছে। দৃঢ় বিশ্বাস, রাহুল দ্রাবিড় সেটা হতে দেবেন না। কিন্তু বৈভবকেও মেনে নিতে হবে, শূন্য বলেও একটু বস্তু হয়। কোনও দিন সেটা একের পিছনে বসবে, কোনও আগে-পিছে শুধুই মহাশূন্য। ক্রিকেট হোক বা জীবন, আসল লড়াইটা তো সেদিনেরই। হয়তো দ্রাবিড় তোমাকে শোনাবেন ডব্লুজি গ্রেসের একটা গল্প। শোনা যায় জনৈক ক্রিকেটার হামবড়াই করতে এসেছিলেন গ্রেসের কাছে। কিংবদন্তি ক্রিকেটার তাঁকে পালটা জিজ্ঞেস করেছিলেন, জীবনে কখনও শূন্য করেছ। ওই ভদ্রলোক তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতেই গ্রেস উত্তর দিয়েছিলেন, তাহলে তোমার ক্রিকেট খেলা এখনও বাকি।

আচ্ছা, গ্রেসের উদাহরণ থাক। বহুবার শূন্য করেও তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরতে রাজি হননি। বরং বলা যাক, ইংল্যান্ডের লেন হাটনের কথা। ১৯৩৪ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই নামের পাশে বিরাট শূন্য। শোনা যায়, হতাশা কাটাতে সিনেমা দেখতে ঢুকেছিলেন হাটন। ও বাবা! সেখানেও চলছে তাঁর 'ডাক' ইনিংসের ভিডিও। রাগের চোটের ক্রিকেট ছাড়তে চেয়েছিলেন। আর একদিন কি না এক ইনিংসে তিনিই করেছিলেন ৩৬৪ রান। আরও গল্প আছে বৈভব। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৮বার শূন্য করেছিলেন গাভাসকর। টেস্টে তিনবার।

এবারের আইপিএল শুরু আগে সম্প্রচারকারী চ্যানেল থেকে একটা বিজ্ঞাপন বারবার চালানো হচ্ছিল। বৈভবের জন্মের আগেই প্রথম আইপিএল ট্রফিটা জিতেছিলেন এমএস ধোনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁরও প্রথম ইনিংসের রান ছিল শূন্য। যাঁদের গল্প বলা হল, তাঁরা আজ কিংবদন্তি। একদিনে হয়নি। একদিন ঠিক হয়েছে। এই তো জীবন, কালী দা। ওঠানামার মধ্যে দিয়ে হাজারবার পরীক্ষা নেবে জীবন। আজকের শূন্যের সামনে ফের দুটো সংখ্যা বসানোর লক্ষ্য থেকে কখনও সরে এসো না। বরং আগত সেদিনের কথা মনে রেখে আজ তুমি জীবনকে বলতেই পারো,
'ভরদুপুরে পাত পেতেছি, ফিরিয়ে দাও
ফিরিয়ে দাও এক জীবনে অঙ্কে যত শূন্য পেলে।'

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • গর্জনশীল তিরিশা সঙ্গে নিয়ে আইপিএলের মঞ্চে তার আবির্ভাব।
  • সেটা যদি ট্রেলার হয়, তাহলে গোটা সিনেমাটা তোলা ছিল গুজরাট ম্যাচের জন্য। মাত্র ৩৫ বলে সেঞ্চুরি।
  • অসংখ্য রেকর্ড তার পায়ের তলায় নতজানু। স্কোরবোর্ডকে 'গাধা' বললেও তার কীর্তিগুলো তো চির অমলিন থেকে যাবে।
Advertisement