shono
Advertisement

ফিরে দেখা ২০২৩: ক্রিকেট থেকে রাজনীতি, বিজ্ঞান থেকে বাণিজ্য, বছরভর চর্চায় যাঁরা

২০২৩-এর আলো-অন্ধকারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভেসে উঠেছে বেশ কিছু নাম। কে হলেন হিরো, কার ব্যাডলাকও খারাপ ছিল। 
Posted: 08:07 PM Dec 21, 2023Updated: 08:08 PM Dec 21, 2023

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘হাসি-কান্না হিরা-পান্না’য় শেষ হচ্ছে আরও একটা বছর। বিগত হতে চলা ২০২৩ সালের সেই আলো-অন্ধকারে বছরভর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভেসে উঠেছে বেশ কিছু নাম। ক্রিকেট থেকে রাজনীতি, বিজ্ঞান থেকে বাণিজ্য… ভালো এবং মন্দ চর্চায় থেকেছেন তাঁরা। আসুন দেখে নিই কে হলেন হিরো, কার ব্যাডলাকও খারাপ ছিল। 

Advertisement

গৌতম আদানি: ব্যবসা অনেকেই করেন। তবে তিনি গৌতম আদানি, ভারতের শিল্পাকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। সংবাদ শিরোনামে থাকা ভদ্রলোকের অভ্যাস। যদিও এই ব্যবসায়ীর ‘রকেট উত্থান’ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে, মনে করেন অনেকেই। কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছের লোক আদানি ‘অন্যায় সুবিধা’ পেয়েছেন। বিজেপির সঙ্গে ‘গোপন ডিল’ তাঁকে রিলায়েন্স গোষ্ঠীর প্রধান মুকেশ আম্বানির পাশের আসনে বসিয়েছে। তথাপি অস্বীকার করার উপায় নেই, হিরে হোক বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কিংবা বন্দর বাণিজ্য, দিনকে দিন আদানি গোষ্ঠীর সাম্রাজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই কারণেই গত কয়েক বছরে ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম বা দ্বিতীয়, পৃথিবীর প্রথম কুড়িজন ধনকুবেরর মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছেন। যদিও ২০২৩ সালে ভিন্ন কারণে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও চর্চায় আদানি। আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’-এর প্রকাশিত রিপোর্টে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, কৃত্রিম ভাবে আদানি গোষ্ঠী শেয়ার বাজারে নিজেদের দর বাড়িয়েছে। কারচুপির মাধ্যমে ধনী হয়েছে। আদানিদের বিরুদ্ধে এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই শেয়ার বাজারে ধস নামে। হু হু করে কমে যায় আদানির সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম। যদিও হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টকে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বলে দাবি করেন গৌতম আদানি। এই বিষয়ে ৪১৩ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতিও দেয় শিল্পগোষ্ঠী। যদিও পরবর্তীকালে শেয়ার বাজারে আদানিদের অবস্থার সম্মক উন্নতি হয়নি। খোয়াতে হয়েছে কয়েক লক্ষ কোটি টাকার মূলধন। এর পরেও অবশ্য ভারতের দ্বিতীয় সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানি। বিশ্বের ধনীদের তালিকায় ১৯তম। সম্পত্তির পরিমাণ ১১ লক্ষ কোটির বেশি।

শাহরুখ খান: ২০২৩ সালে ফের তিনিই কিং, বাকিরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’ এবং ‘ডাঙ্কি’… একের পর এক সাফল্য। ভক্তদের জন্য ভাগবানের বিভিন্ন স্বাদের প্রসাদ। ‘পাঠান’ মুক্তি পাওয়ার আগে যাঁরা সাম্রাজ্য পতনের আশঙ্কা করছিলেন, তাঁদের মুখের উপর জবাব দিয়েছেন বলিউডের বাদশা। এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছেন। প্রথমত, কীভাবে ‘জিরো’ থেকে হিরো হতে হয় দেখিয়েছেন। ২০০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকায়। এমনকী ভেন্টিলেটর সঙ্গে নিয়ে সিনেমা হলে প্রিয় তারকাকে বড় পর্দায় দেখতে হাজির হয়েছেন অসুস্থ অনুরাগী। ভারতীয় সিনে দুনিয়ার ব্যবসায় নতুন রেকর্ড করেছে ‘পাঠান’ এবং ‘জওয়ান’। যথাক্রমে ১০০০ এবং ১২০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। অন্যদিকে রাজকুমার হিরানির ‘ডাঙ্কি’র ছিল ভিন্ন উদ্দেশ্য। দুটো অ্যাকশন ছবির পর শাহরুখ একানে সংবেদনশীল অভিনেতা। তাতেও এসেছে কাঙ্ক্ষিত সফলতা। মনে রাখতে হবে, এই সাফল্য একা কিং খানের নয়, বরং সমগ্র বলিউড ইন্ডাস্ট্রির। কারণ কিছুদিন ‘পুষ্পা’, ‘কেজিএফ’, ‘আরআরআরে’র মতো দক্ষিণের ছবির সঙ্গে দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে হয়েছিল। অতএব, শাহরুখের ‘পাঠান’, ‘জওয়ান’, ‘ডাঙ্কি’ মুম্বই নগরিয়ার হারাতে বসা অহঙ্কারকে ফিরিয়েছে।

ব্রিজভূষণ শরণ সিং: ওঁরা কেউ অলিম্পিকসে, কেউ এশিয়ান গেমসে, কেউ বা কমনওয়েল্থ গেমসে পদক জেতেন, গর্বিত হয় দেশে। ভারতের সেই মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল খোদ ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতির (এখন প্রাক্তন) বিরুদ্ধে। যোগীরাজ্যের অন্যতম দাপুটে বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণ শরণ সিং এভাবেই গোটা বছর কুচর্চায় থাকলেন। এক নাবালিকা-সহ ছ’জন মহিলা কুস্তিগির অভিযোগ করেছিলেন ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। কিন্তু দীর্ঘদিন দিল্লি পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না করায় দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না দেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটদের মতো নামী কুস্তিগিররা। সেই প্রতিবাদে জল ঢালতে দেশের গর্ব কুস্তিগিরদের উপর চড়াও হয়েছিল পুলিশ। যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল আমজনতার পাশাপাশি কপিল দেব, নীরজ চোপড়ার মতো তারকা খেলোয়াড়রাও। শেষ পর্যন্ত ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। মামলা গড়ায় আদালতে। পদচ্যুত হন তিনি। চার্জশিটে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেশ করে পুলিশ। ‘যৌন হয়রানি’, ‘শালীনতা ভঙ্গ’, ‘অপরাধমূলক ভীতি প্রদশর্নে’র মতো অভিযোগ আনা হয়। বর্তমানে আদালতে সেই মামলা চলছে। যদিও বর্তমানে জামিনে মুক্ত যোগীরাজ্যের দাপুটে বিজেপি নেতা।

বিরাট কোহলি: বাদশা না হলেও তিনিও কিং। অতি ক্রিকেটের পৃথিবীতে তিনি ব্যাট ধরলে গ্যালারি বাইশ গজেই ফোকাস করে। টিভির সামনে বসেন আট থেকে আশি। ভাগ্যদেবতা ২০২৩ সালটাকে আলাদা করে তুলে রেখেছিল বিরাট কোহলির জন্য। এই বছরের ১৫ নভেম্বর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালের মঞ্চে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘সেঞ্চুরির হাফ সেঞ্চুরি’ করেন। কিংবদন্তি শচীন তেণ্ডুলকরকে টপকে ৫০তম সেঞ্চুরি করেন খোদ মাস্টার ব্লাস্টারের সামনে। আলোকিত মুহূর্তে গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানান শচীন। ইডেন গার্ডেন্সে নিজের ৩৬তম জন্ম দিনে এক দিনের ক্রিকেটে ৪৯তম শতরান করে শচীনকে ছুঁয়ে ফেলেন কোহলি। সেমিফাইনালের ৫০তম সেঞ্চুরির মাইলস্টোন। চলতি বিশ্বকাপেই শচীনের এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬৭৩ রানের বিশ্বরেকর্ড ভাঙেন কোহলি। করেন মোট ৭৬৫ রান। বলা বাহুল্য যে বছরটা ছিল বর্তমানে প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটারেরই।

এস সোমনাথ: চলতি বছরে দেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল চন্দ্রভিযান, চন্দ্রযান-৩-এর চাঁদের মাটি ছোঁয়া। বিক্রমের অবতরণে নতুন ইতিহাস গড়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’। এই মহাকাণ্ডে দেশের একঝাঁক প্রতিভাবান বিজ্ঞানীকে নেতৃত্ব দেন মহাকাশ বিজ্ঞানী এস সোমনাথ। তলিয়ে ভাবলে শাহরুখ, কোহলিদের পিছনে ফেলে ‘প্রকৃত হিরো’ সোমনাথই। তাঁর পেশাগত ও শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখলে অনুপ্রাণিত হবেন অনেকেই। কোল্লামের ‘টিকেএম কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং’ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বি.টেক ডিগ্রি করেন। এরপর বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স’ থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতকোত্তর। ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ভারতীয় স্পেস কমিশনের চেয়ারম্যান ও ডিপার্টমেন্ট অফ স্পেসের সেক্রেটারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লঞ্চ ভেহিকেলস’-এর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ সোমনাথ। PSLV এবং GSLV Mk-III-তে সেগুলির সামগ্রিক স্থাপত্য, প্রপালশন স্টেজ ডিজাইন, স্ট্রাকচারাল এবং স্ট্রাকচারাল ডাইনামিক ডিজাইন, সেপারেশন সিস্টেম, ভেহিকেল ইন্টিগ্রেশন এবং ইন্টিগ্রেশন পদ্ধতির উন্নয়ন, সবটাই তাঁর নজরদারিতে হয়েছিল। তারপর ইতিহাস।

মহুয়া মৈত্র: পার্লামেন্টের মেধাবী, প্রতিবাদী নারীকণ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সেই মহুয়া মৈত্র বছরের শেষভাগে ব্যাপকভাবে চর্চায়। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে লোকসভার স্পিকারের কাছে অভিযোগ করেন, মহুয়া মৈত্র টাকার বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেন। সেই অভিযোগ ও তার ‘তদন্ত’-র পথ বেয়ে শেষ অবধি জানা গেল যে, তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তাঁর লোকসভার ওয়েবসাইটে লগ ইন করার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জানিয়েছিলেন তাঁর এক ব্যক্তিগত বন্ধুকে। লোকসভার এথিক্স কমিটি জানায়, এর ফলে জাতীয় সুরক্ষা বিঘ্নিত হয়েছে। শাস্তি হিসেবে মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়। যদিও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন মহুয়া। ওই মামলার শুনানি হবে নতুন বছরে। অন্যদিকে বহিষ্কৃত সাংসদকে বাংলো ছাড়ার নোটিসও ধরানো হয়েছে। যার বিরুদ্ধে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। উল্লেখ্য, কৃষ্ণনগরের সাংসদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও দল এখনও পর্যন্ত তাঁর পাশেই রয়েছে। তবে কিনা মহুয়ার ভবিষ্যত জানে ২০২৪ সাল। সময়ের মনে কী লোকানো আছে? এই মুহূর্তে অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement