সোমনাথ লাহা: ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পারস্পরিক সম্পর্ক ও সনাতন ঐতিহ্যের একখণ্ড ছোঁয়া এবার শহর তিলোত্তমায়। ফিউশন, কনটেম্পোরারি ও পপুলার ডান্স ফর্ম, গান ও নাটিকার মিশেলে এক অনবদ্য মঞ্চায়ন ‘স্যাফায়ার স্কোপ’। আইসিসিআরের ‘হরাইজন সিরিজ’ অনুষ্ঠানের অন্তর্গত এবং দুই দেশের (ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার) ঐতিহ্যমণ্ডিত সাংস্কৃতিক ও পারস্পরিক হৃদ্যতাকে মাথায় রেখেই সেটির মঞ্চায়ন হতে চলেছে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি আইসিসিআরের সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে। অনবদ্য এই নৃত্যানুষ্ঠানের পুরোভাগে রয়েছে প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী তথা কোরিওগ্রাফার সুদর্শন চক্রবর্তী পরিচালিত ‘স্যাফায়ার ‘নৃত্যগোষ্ঠী’। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ও ঐতিহ্যর পাশাপাশি দুই দেশের ইতিহাসের ছোঁয়ার পরশও রয়েছে এই অনুষ্ঠানটিতে। বিশেষত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার সনাতন ঐতিহ্যের পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ‘বাটিক’ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর। এটির প্রভাব রয়েছে তাঁর নাচে এবং পোশাকেও। মিশে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ‘গেমল্যান’ মিউজিকও।
[প্রেমদিবসের সাঁঝবেলা রঙিন হবে কবীর সুমনের ‘ভালবাসার গানে’ ]
৭০ মিনিটের এই পারফরম্যান্সটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছে স্যাফায়ার। প্রথমটি কালচার বা সংস্কৃতি। যেখানে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হবে। যার মধ্যে থাকবে অ্যাক্রো যোগ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মার্শাল আর্ট এবং বাংলা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গার কবিতা। দ্বিতীয় ভাগটি হল কনভারসেশন বা কথোপকথন। এখানে রবীন্দ্রনাথের ‘গীতাঞ্জলি’র কবিতার উপর পারফর্ম করা হবে। কীভাবে রবি ঠাকুরের কাজে প্রভাব ফেলেছিল ইন্দোনেশিয় সংস্কৃতি তাই তুলে ধরা হবে। তৃতীয় বা শেষ ভাগটি হল সেলিব্রেশন। ইন্দোনেশিয়ার সনাতন সংগীতের সঙ্গে আধুনিক কম্পোজিশনের মিশেলে প্রাপ্ত সুরের উপর নৃত্য প্রদর্শিত হবে এই ভাগে। তুলে ধরে হবে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সৌহার্দ্যকে। সমগ্র অনুষ্ঠানটির কোরিওগ্রাফি ও আর্টিস্টিক পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন সুদর্শন চক্রবর্তী। ন্যারেশনে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়। নৃত্যে থাকবে ‘স্যাফায়ার’ নৃত্যগোষ্ঠীর ছাত্র—ছাত্রীরা।
[ইমনের হেনস্তা কাণ্ডে ফুঁসছে কৃষ্ণনগর, প্রতিবাদে সভা-মৌন মিছিল]
প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ও কূটনীতিক প্রতিনিধি দল হিসাবে ইন্দোনেশিয়ার চারটি শহরে (বালি, জাকার্তা, ইয়োগাকার্তিয়া ও মেদান) ‘স্যাফায়ার স্কোপ’—র সাফল্যমণ্ডিত পারফর্ম করেছে ‘স্যাফায়ার’ নৃত্যগোষ্ঠী। ২০১৮—র ১৬ থেকে ২৪ ডিসেম্বর তাদের ২৩তম আন্তর্জাতিক সফরে স্যাফায়ারে ১০ জনের দলটি সেখানে সাতটির মতো শো করেছে। শুধু তাই নয়, এহেন যাত্রাপথে ইন্দোনেশিয়ার চারটি শহরের অডিটোরিয়াম, কমিউনিটি স্কুল, ইউনিভার্সিটি হল, পার্কের মতো বিভিন্ন পাবলিক প্লেসে অনুষ্ঠান করেছে তারা। তালিকায় ছিল জাকার্তার মহাত্মা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও। পারফর্ম করার পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন ডান্সার, কোরিওগ্রাফারের সঙ্গে ওয়ার্কশপেও অংশগ্রহণ করেছে স্যাফায়ারের এই ১০জন সদস্যের দলটি। এবার সেই ‘স্যাফায়ার স্কোপ’ই মঞ্চস্থ হতে চলেছে এই শহরে।
[ক্যানসার জিতে মনীষার লক্ষ্য এভারেস্ট বেস ক্যাম্প]
শহর তিলোত্তমায় অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে নৃত্যশিল্পী, কোরিওগ্রাফার তথা স্যাফায়ারের আর্টিস্টিক ডিরেক্টর সুদর্শন চক্রবর্তীর অভিমত, “ভারত ও ইন্দোনেশিয়া এই দুই দেশের মধ্যে যোগসূত্র বহু প্রাচীন। রবিঠাকুর, উদয়শঙ্করের সময় থেকে এই সম্পর্ক, হৃদ্যতা এখনও পর্যন্ত একই রকম রয়েছে। বালিতে পারফর্ম করার সময় ভারত নিয়ে ওখানকার মানুষের আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের ছোঁয়া পেয়েছি। এমনকী ইন্দোনেশিয়া বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের মধে্য কলকাতার প্রতি, দেশের প্রতি আবেগ, অনুভূতি কোনও অংশে আমাদের এখানকার মানুষের তুলনায় কম নয় এটা বুঝেছি। বালির ভারতীয় দূতাবাসের বাঙালি আধিকারিকের যে আতিথেয়তা ও হৃদ্যতার ছোঁয়া পেয়েছি তা আজীবন মনে রয়ে যাবে। আশা করি এখানকার সংস্কৃতিপ্রেমীরাও এই অনুষ্ঠানে দু’দেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া পাবেন এই অনুষ্ঠানটিতে।”
The post ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সনাতনী ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এবার তিলোত্তমায় appeared first on Sangbad Pratidin.